বিশ্বকাপের লিগ পর্বের সেরা মুহূর্তগুলো
সাকিব যখন ‘রাজা’
বাড়তি কিছু বলার দরকার নেই। আট ম্যাচে ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট। বিশ্বকাপটা সাকিব আল হাসানের কেমন গেছে, তা বোঝানোর জন্য এই পরিসংখ্যানটুকুই যথেষ্ট। এক আসরে ১০ উইকেট ও কমপক্ষে ৫০০ রানের ডাবলসও নেই আর কোনো ক্রিকেটারের। বিশ্বকাপের রেকর্ড বইতে নিজের নামটা আলাদা করে খোদাই করা রাখার সব রকম ব্যবস্থাই এবার সফলভাবে করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। পুরো আসরে বাংলাদেশ দলকে বলতে গেলে প্রায় একাই টেনেছেন। ক্রিকেটের তীর্থস্থান লর্ডসের বেঞ্চিতে এমন রাজকীয় ভঙ্গিতে তো তাকেই মানায়!
হাওয়ায় ভাসলেন স্টোকস
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দিল ফেলুকভায়োর হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া শটটা ঠিকঠাক মাপজোক করতে গড়বড় করে ফেলেছিলেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস। ক্যাচ লুফে নিতে কিছুটা এগিয়ে এসেছিলেন। যতক্ষণে ভুল বুঝতে যখন পারেন, ততক্ষণে বল তার মাথার উপর দিয়ে সীমানার দিকে যাচ্ছে। সেই সময় বাজপাখির মতো শূন্যে ভেসে যান স্টোকস নিজেই! অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় এক হাতে লুফে নেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যাচ। বল হাতে জমা হওয়ার পর হতভম্ব স্টোকস যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না নিজেকেই!
এমন জীবন কেউ দেয়নি ধোনিকে
দুঃস্বপ্নেও এমনটা হয়তো কখনও ভাবেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক শেই হোপ। বাঁহাতি স্পিনার ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি। সংযোগ ঘটেনি ব্যাটে-বলে। ধোনি তখন কয়েক হাত বাইরে। ফেরার সুযোগই নেই। স্টাম্পিংয়ের অতি সহজ সুযোগ। কিন্তু বলই তো হাতে জমাতে পারেননি হোপ! তাও একবার নয়, দুইবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। কোথায় আউট হয়ে সাজঘরে ফিরবেন, তা না, সেই সুযোগে উল্টো এক রান নিয়ে নেন ধোনি।
একই ফ্রেমে মালিঙ্গা-গেইল
একই ফ্রেমে দুই জীবন্ত কিংবদন্তি। লাসিথ মালিঙ্গা ও ক্রিস গেইল- নিজ নিজ মহিমায় উজ্জ্বল দুই বিরল ক্রিকেটীয় প্রতিভা! দুজনেরই ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ ছিল এবার। চেস্টার লি স্ট্রিটে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুখোমুখি হওয়ায় একসঙ্গে পাওয়া গেল তাদের। বিশ্বমঞ্চে শেষবারের মতো। আগামী আসরগুলোতে আর দেখা যাবে না ভিন্ন অ্যাকশনের বোলার মালিঙ্গার নিখুঁত সব ইয়র্কার, দেখা যাবে না ক্যারিবিয়ান দানব খ্যাত গেইলের দানবীয় সব ছক্কা।
আক্ষেপে মোড়ানো ব্র্যাথওয়েট
সীমানার একটু সামনে থেকে ট্রেন্ট বোল্ট ক্যাচ লুফে নিলেন, সেই সঙ্গে ধরে রাখলেন শরীরের ভারসাম্যও। রোমাঞ্চকর জয়ের উল্লাসে মেতে উঠল নিউজিল্যান্ড দল। কিন্তু উল্টো দৃশ্য ২২ গজে। হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে বসে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। তখন কি ঝাপসা হয়ে আসছিল তার দৃষ্টি? ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে, দলকে জয়ের এত কাছে পৌঁছে দিয়েও যে শেষটা রাঙাতে পারলেন না! মিশে থাকল ৬ রানের আক্ষেপ। ৮২ বলে লড়াকু ১০১ রানের ইনিংসে সেদিন ক্রিকেটপ্রেমীদের মন ঠিকই জিতে নিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট।
বেরসিক বৃষ্টি
বিশ্বকাপের মাঝপথে এমন দৃশ্য ছিল খুব পরিচিত। বৃষ্টির বাধায় একটি-দুটি নয়, এবার চার-চারটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে, যা নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড-ভারত ম্যাচ বাতিল হয়েছে। আরও কয়েকটি ম্যাচে ছিল বৃষ্টির ছোবল। সেগুলোর কোনো কোনোটির ফল নির্ধারিত হয়েছে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে।
জেন্টলমেন’স গেম
ভারতের বিপক্ষে ফিল্ডিং করার সময় স্টিভ স্মিথকে লক্ষ্য করে নানা কটু বাক্য ছুঁড়ে দেন গ্যালারিতে উপস্থিত দলটির সমর্থকরা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানকে ‘প্রতারক’ বলে দুয়ো দিতে থাকেন তারা। এরপর স্মিথকে অপ্রস্তুত অবস্থা থেকে উদ্ধারে এগিয়ে গিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। রেখেছিলেন স্পোর্টসম্যানশিপের অনন্য নিদর্শন। ব্যাটিংয়ের মাঝেই নিজ দেশের সমর্থকদের চুপ থাকতে এবং স্মিথকে দুয়ো না দিতে আহ্বান করেছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দর্শকদের হয়ে অসি তারকার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন কোহলি।
স্টার্কের নিখুঁত নিশানা
আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি যাকে বলা হয়, তার একেবারে আদর্শ উদাহরণ হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের ইয়র্কারটি। বাতাসে বাঁক খেয়ে মাটি ছুঁয়ে বল সোজা গিয়ে লাগল নিশানায়। অফ স্টাম্প উড়ে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসের শরীরী ভাষায় দিশেহারা ভাব। হাতে থেকে ছেড়ে দিলেন ব্যাট। তারপর লাথি দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলেন ব্যাটটা। আর কি-ই বা করতে পারতেন!
Comments