লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি

Lalmonirhat flood
১২ জুলাই ২০১৯, আদিতমারী উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের বন্যাকবলিত কৃষক তার পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: স্টার

প্রবল বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গতকাল রাতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারেজের আশপাশে বসবাসরত মানুষজনকে নিরাপদে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ব্যারেজ এলাকায় জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

একইসঙ্গে ধরলার নদীর পানিও বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম জানান, প্রবল বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে তিস্তা ও ধরলার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তবে, কিছু কিছু দুর্গত স্থানে তাৎক্ষনিক জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পাউবো।

চরম অবনতি হয়েছে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আরও ১৫টি গ্রাম। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ফসলের ক্ষেত ও বসতভিটা। ভেসে গেছে হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু। বাড়ি-ঘরে কোমর থেকে গলাপর্যন্ত পানি উঠে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন বিশ হাজারেরও বেশি বানভাসি পরিবার।

তিস্তা ব্যারেজের পাশে দোয়ানী গ্রামের কৃষক আহাদ মণ্ডল জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘোষণা পেয়েই শনিবার রাত আড়াইটার দিকে তিনি পরিবারের লোকজন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে এসেছেন।

তিনি বলেন, “গবাদি পশু আর প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছি কিন্তু ঘর-বাড়ি সরাতে পারিনি। এখন যদি পানির চাপে তিস্তা ব্যারেজের ফ্রাড বাইপাস সড়কটি ভেঙে যায় তাহলে বাড়ি-ঘর পানির তোড়ে ভেসে যাবে।”

Lalmonirhat flood
বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর তীব্র স্রোতে কুটিরপাড় গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ছবি: স্টার

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান জানান, শুক্রবার রাতে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় তার ইউনিয়নের দুটি রাস্তা ও দুটি বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধ ভেঙে তিস্তার পানি প্রবল গতিতে হাতীবান্ধা শহরের দিকে প্রবেশ করছে।

“ইউনিয়নে ছয় হাজারেরও বেশি পরিবার এখন পানিবন্দী অবস্থায় অমানবিক জীবনযাপন করছে,” বলেন তিনি।

দুর্গত এলাকায় সরকারি রাস্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি লোকজন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের চরম সঙ্কটে রয়েছেন। রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন তারা। অনেকে আবার শুকনো খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় থাকছেন অনাহারে-অর্ধাহারে।

মহিষখোচা কুটিরপাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধের আধা কিলোমিটার ভেঙ্গে যাওয়ায় তিস্তার পানি ঢুকে পড়ছে নতুন নতুন এলাকায়।

আদিতমারী উপজেলার বালাপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, তারা পাঁচদিন ধরে পানিবন্দী জীবনযাপন করছেন। রয়েছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। ঘরে এক বুক পানি। চুলা, রান্না ঘর, নলকূপ বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। কোন রকমে শুকনো খাবার সংগ্রহ করে পরিবারের লোকজনকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

Lalmonirhat flood
বানভাসি মানুষেরা তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ছবি: স্টার

একই উপজেলার কুটিরপাড় গ্রামের বানভাসি মজমুল ইসলাম জানান, গেল দুই দিনে অর্ধ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তিস্তার পানি দ্রুত গতিতে এলাকায় প্রবেশ করছে। বাঁধের বাকি অংশের ভাঙনও অব্যাহত রয়েছে। যারা পারছেন, তারা বাড়ি-ঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার জানান, বিশ হাজারের বেশি পরিবার বানভাসি হয়েছেন এবং আরও কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে বানভাসির সংখ্যা বাড়ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বানভাসিদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বরাদ্দ দেওয়া ৬৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ চলছে দুর্গত এলাকায়। চাহিদা অনুযায়ী আরও ত্রাণ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে।

Comments

The Daily Star  | English

18 lower court judges sent into forced retirement

A circular was issued in this regard tonight by Branch-3 of the Judicial Division under the Law and Justice Division

1h ago