নিউজিল্যান্ডকে ২৪১ রানে বেঁধে রাখলেন ওকস-প্লাঙ্কেট

ওপেনার হেনরি নিকোলস ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন মিলে নিউজিল্যান্ডকে গড়ে দিলেন ভিত। কিন্তু তার ওপর দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে হাল ধরতে পারলেন না কেউ। বিপরীতে, ইংল্যান্ডের ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট মিলে ভাগাভাগি করে নিলেন ৬ উইকেট। সঙ্গে যুক্ত হলো আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত টম ল্যাথামের কল্যাণে আড়াইশোর কাছাকাছি গেল কিউইরা।
plunkett and morgan
ছবি: এএফপি

ওপেনার হেনরি নিকোলস ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন মিলে নিউজিল্যান্ডকে গড়ে দিলেন ভিত। কিন্তু তার ওপর দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে হাল ধরতে পারলেন না কেউ। বিপরীতে, ইংল্যান্ডের ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাঙ্কেট মিলে ভাগাভাগি করে নিলেন ৬ উইকেট। সঙ্গে যুক্ত হলো আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত টম ল্যাথামের কল্যাণে আড়াইশোর কাছাকাছি গেল কিউইরা।

রবিবার (১৪ জুলাই) দ্বাদশ বিশ্বকাপের ফাইনালে লর্ডসে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে নিউজিল্যান্ড। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪১ রান তুলেছে তারা।

নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুটা এদিনও হয় আগের ম্যাচগুলোর মতোই। দ্রুত ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এর চেয়ে বলা ভালো, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তড়িঘড়ি করে সাজঘরে ফেরেন মার্টিন গাপটিল। গেল বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবার চূড়ান্ত মাত্রায় ব্যর্থ। জোফরা আর্চারকে একই ওভারে ছয়-চার মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও সেই আশার বেলুন চুপসে যেতে সময় লাগেনি।

দলীয় ২৯ রানে আউট হন গাপটিল। ক্রিস ওকসের ডেলিভারি আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে পড়েন এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে। ২ চার ও ১ ছয়ে ১৮ বলে ১৯ রান করেন তিনি। যাওয়ার আগে রিভিউটাও নষ্ট করে যান।

বল নতুন থাকতে থাকতেই উইকেটে নেমে পড়াটা একেবারে গা সওয়া হয়ে গেছে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের। চাপ ঠেলে সরিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বটা ফের কাঁধে নেন তিনি। সঙ্গী হিসেবে পান আরেক ওপেনার হেনরি নিকোলসকে। ব্যক্তিগত শূন্য রানে যিনি রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে।

তৃতীয় ওভারে ওকসের ডেলিভারি নিকোলসের প্যাডে লাগলে আঙুল উঁচিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে না পেরে রিভিউ নেন নিকোলস। পরে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল স্ট্যাম্পের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। ধর্মসেনা সেমিফাইনালে জেসন রয়ের বিপক্ষেও ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। তবে রিভিউ না থাকায় ইংল্যান্ডের ওপেনারকে ফিরতে হয়েছিল সাজঘরে।

গাপটিলের বিদায়ের পর নিকোলস-উইলিয়ামসন ধীরেসুস্থে ব্যাটিং করেন। দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করতে তাই তাদের অপেক্ষা করতে হয় ১৪তম ওভার পর্যন্ত। জুটি জমে যাওয়ার পর রানের চাকা একটু দ্রুত ঘোরাতে শুরু করেন দুজনে। তাতে ২২তম ওভারে দলের সংগ্রহ পৌঁছায় তিন অঙ্কে।

ওদিকে ইংলিশ দলনেতা ইয়ন মরগান তখন কিছুটা চাপে। এই জুটি দ্রুত ভাঙতে না পারলে বিশেষ করে উইলিয়ামসনকে ক্রিজ ছাড়া করতে না পারলে সামনে যে সমূহ বিপদ! তাই বোলিং আক্রমণে পরিবর্তন করেন তিনি। আক্রমণে আনেন লিয়াম প্লাঙ্কেটকে। বর্ষীয়ান পেসারের দ্বিতীয় স্পেলের চতুর্থ বলেই বাজিমাত! আউট হন গোটা আসরে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে ভরসা দিয়ে আসা উইলিয়ামসন।

উইকেটের পেছনে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দেন নিউজিল্যান্ডের কাপ্তান। এবারও ভুল সিদ্ধান্ত ধর্মসেনার। প্রথমে আউট দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে উল্লাসে মাতেন মরগানরা। উইলিয়ামসনের সংগ্রহ ৫৩ বলে ৩০ রান। ইনিংসে চার মাত্র ২টি। তার বিদায়ে ভাঙে ৯৮ বলে ৭৪ রানের জুটি।

সঙ্গী হারিয়ে নিকোলসও টেকেননি বেশিক্ষণ। হাফসেঞ্চুরি পূরণ করার পর তিনিও শিকার হন প্লাঙ্কেটের। ক্রস-সিম ডেলিভারিটা ঠিকঠাক পড়তে না পেরে বোল্ড হয়ে যান নিকোলস। ৭৭ বলে ৫৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৪টি চারে সাজানো তার ইনিংস।

তৃতীয় জুটির পতনের পর শুরু হয় নিয়মিত বিরতিতে নিউজিল্যান্ডের উইকেট হারানো। ইংলিশ পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপরীতে রান তুলতে খাবি খেতে হয় দলটিকে। কিউইদের জুটিগুলোকে মাথাব্যথার কারণ হতে দেননি স্বাগতিক পেসাররা।

তবে সেখানে অবদান আছে প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিংয়েরও। অভিজ্ঞ রস টেইলর দক্ষিণ আফ্রিকান মারিয়াস এরাসমাসের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হন। মার্ক উডের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে শেষ হওয়া ইনিংসটায় অবশ্য স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না তিনি। ৩১ বল খেলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই ১৫ রান করেন তিনি। তার আউটের পর নিউজিল্যান্ডের লাইনআপে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ঘাটতি বেশ ভালোভাবে ফুটে ওঠে।

বিগ হিটিংয়ের জন্য যাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিউইরা, সেই জিমি নিশাম ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম রানের জন্য হাঁসফাঁস করে মাঠ ছাড়েন। নিশাম ২৫ বলে ১৯ রান করে প্লাঙ্কেটের তৃতীয় শিকার হন। ডি গ্র্যান্ডহোম ২৮ বল খেলে করেন ১৬ রান। তাকে ফেরানোর পর একপ্রান্ত আগলে থাকা টম ল্যাথামকেও থামান সেমিফাইনালে জয়ের নায়ক ওকস। এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ২ চার ও ১ ছয়ে দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন ৫৬ বলে। 

ল্যাথামের বিদায়ে কিউইদের আড়াইশোর নিচে থামাটা নিশ্চিত হয়ে যায়। ইনিংসের নয় বল বাকি থাকতে দলীয় ২৩২ রানের মাথায় সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করা আর্চার উইকেটের দেখা পান শেষ ওভারে। তার শিকার হন ম্যাট হেনরি।

ইংল্যান্ডের পক্ষে সফল বোলার ওকস ও প্লাঙ্কেট। দুজনেই নেন সমান ৩টি করে উইকেট। ওকসের খরচা ৩৭ রান। প্লাঙ্কেট দেন ৪২ রান। ১টি করে উইকেট দখল করেন উড ও আর্চার।

চলতি বিশ্বকাপে লর্ডসে অনুষ্ঠিত হওয়া আগের চারটি ম্যাচেই জিতেছে শুরুতে ব্যাটিং করা দল। সেই ধারা টিকিয়ে রাখতে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের করে দেখাতে হবে দারুণ কিছু। সেমিফাইনালে এমন মাঝারি সংগ্রহ নিয়েই অবশ্য ভারতকে পরাস্ত করেছিল তারা। অন্যদিকে, বিশ্বকাপের ফাইনালে লর্ডসে আগের চারবার টস জেতা দল কখনও ম্যাচ জেতেনি। সেই ধারা সাহস দেবে ইংল্যান্ডকেও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ২৪১/৮ (৫০ ওভারে) (গাপটিল ১৯, নিকোলস ৫৫, উইলিয়ামসন ৩০, টেইলর ১৫, ল্যাথাম ৪৭, নিশাম ১৯, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৬, স্যান্টনার ৫*, হেনরি ৪, বোল্ট ১*; ওকস ৯-০-৩৭-৩, আর্চার ১০-০-৪২-১, প্লাঙ্কেট ১০-০-৪২-৩, উড ১০-১-৪৯-১, রশিদ ৮-০-৩৯-০, স্টোকস ৩-০-২০-০)।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago