মেঘনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে হাতিয়ার ৩ চরের বিস্তীর্ণ এলাকা
মেঘনার অবিরাম ভাঙনে বিলীন হচ্ছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নের বয়ারচর, নলেরচর এবং ক্যারিংচরের বিস্তীর্ণ এলাকা। শত শত একর ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার।
গত কয়েক বছরে মেঘনার প্রবল ভাঙনে কোটি কোটি টাকা খরচে তৈরি করা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, স্লুইস গেট, বেড়ি বাঁধসহ অনেক স্থাপনা বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ২৪ কোটি টাকা খরচে নির্মিত দুটি স্লুইসগেট ও বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল এই দ্বীপ উপজেলার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থায় নৌযানই মূল বাহন। নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ব্যাপকহারে ভাঙছে নলেরচর, বয়ারচর ও ক্যারিংচরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বিরামহীন ভাঙনে গত কয়েক বছরে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোয়ারের পানি রোধ করার জন্যে নির্মিত স্লুইসগেট, হাটবাজার, বাড়িঘর, শত শত একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে মেঘনা নদীতে। ভাঙনের মুখে রয়েছে সরকারের কোটি কোটি টাকার স্থাপনা।
মেঘনার তীব্র ভাঙনে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে শত শত পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। বাস্তুভিটাহারা অনেকেই নিরুপায় হয়ে ঠাঁই নিয়েছে ভাঙনের মুখে পতিত ঝুঁকিপূর্ণ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থিত স্কুল নদীতে বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ভাঙনে বাস্তুভিটাহারা নারী-পুরুষরা জানান, একাধিকবার ভাঙনে তারা দিশেহারা। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে জনবসতিপূর্ণ এসব চরের অবশিষ্ট জমি, মানুষের জানমাল ও কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি স্থাপনা অচিরেই নদীতে তলিয়ে যাবে। এছাড়াও, সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ভাঙনে ভিটাহারা নলেরচরে মো. হাসান জানান, তারা দুইবার ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে চর নঙ্গলীয়ায় রসুলপুর গ্রামে পিতামাতাসহ ১২ জন সদস্যকে নিয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে সেটাও ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন আর ভাবছেন এবার কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবেন।
ক্যারিংচরের মো. জাফর জানান, তিনিও দুইবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে হাসিনা বাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। এবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়ে মানবতার জীবনযাপন করছেন। কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয় না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাফর।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, মেঘনার ব্যাপক ভাঙনের মুখে পড়েছে হাতিয়ার বয়ারচর, নলেরচর ও ক্যারিংচর। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অনেক স্থাপনা ও ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জনগণের জানমাল এবং ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্লুইসগেটসহ সরকারের বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বরাদ্দ পেলে বেড়িবাঁধসহ ভাঙন রোধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। “বরাদ্দ না পাওয়া গেলে আমাদের কিছুই করার নেই,” বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নোয়াখালীর হাতিয়া আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস জানান, মেঘনার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন সরকার খুব শীঘ্রই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিবে।
নূরুল আমিন, দ্য ডেইলি স্টারের নোয়াখালী সংবাদদাতা
Comments