সাত বছরে তিনবার বসতভিটা হারানো তিস্তাপারের শাহিদার গল্প

বানের পানি নেমে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে বসতভিটায় উঠেছিলেন গৃহবধূ শাহিদা বেগম (২০)। কিন্তু নিশ্চিত নিদ্রার মধ্যেই আকস্মিক দুঃস্বপ্নের মতো শুরু হলো তার ভাঙনের জীবন। চব্বিশ ঘণ্টা যেতে না যেতেই তিন সন্তান নিয়ে আবার পথে উঠতে হলো তাকে।
Lalmonirhat teesta shoal people
১৯ জুলাই ২০১৯, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় গ্রামের গৃহবধূ শাহিদা বেগম। তিস্তার ভাঙনে এবারও বসতভিটা হারিয়েছেন তিনি। ছবি: স্টার

বানের পানি নেমে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে বসতভিটায় উঠেছিলেন গৃহবধূ শাহিদা বেগম (২০)। কিন্তু নিশ্চিত নিদ্রার মধ্যেই আকস্মিক দুঃস্বপ্নের মতো শুরু হলো তার ভাঙনের জীবন। চব্বিশ ঘণ্টা যেতে না যেতেই তিন সন্তান নিয়ে আবার পথে উঠতে হলো তাকে।

শুক্রবার দুপুরে নদীর ভয়াবহ ভাঙনে আঁতকে ওঠে তিস্তাপারের মানুষ। আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় গ্রামের শাহিদা বেগমের বসতভিটাও ভেঙে যায়। তড়িঘড়ি তিনটি ঘর ভেঙে নিয়ে আসা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে।

শাহিদার স্বামী আজিজুল ইমলাম একজন দিনমজুর। এই দম্পতির রয়েছে তিনটি সন্তান সাইদুল ইসলাম (৫), সাইফুল ইসলাম (৩) এবং শরিফুল ইসলাম (৬ মাস)।

শাহিদা জানান, তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে থাকায় তাদের বসতভিটায় বানের পানি উঠে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে ছুটে যান নিরাপদ আশ্রয়ে। ঠাঁই হয় সরকারি রাস্তার ওপর।

সন্তানদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দশদিন কাটিয়েছেন রাস্তায়। এই সময়ে মাত্র দশ কেজি সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

শাহিদা বলেন, “কোলের শিশুটিকে ঠিকমত দুধ দিতে পারছি না। কারণ আমি নিজেই ক্ষুধার্ত। এর মধ্যে আবার বাকি ছেলেরাও সময়ে সময়ে ভাতের জন্য কান্নাকাটি করে।”

“বানের পানি ভাসিয়ে নিলো ঘরবাড়ি, এখন আবার ভাঙন কেড়ে নিলো শেষ সম্বল বসতভিটাও। জানিনা কোথায় যাবো, কোথায় উঠবো আর কে দেবে আশ্রয়। এ জীবনে আর কোনোদিন বসতভিটা করতে পারবো কী-না, তাও জানিনা,” অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলছিলেন শাহিদা।

শাহিদার স্বামী আজিজুল ইসলাম জানান, সাত বছর হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। এই সময়ে তারা তিনবার বসতভিটা হারিয়েছেন। তিস্তার গর্ভে চলে গেছে সাড়ে তিনবিঘা আবাদি জমি। দিনমজুরি করেই কোনোরকমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।

Lalmonirhat teesta shoal people
ছবি: স্টার

আজিজুল বলেন, “ছয় শতাংশের বসতভিটায় পরম যত্নে বেশ কয়েকটি ফলের গাছ লাগিয়েছিলো শাহিদা। আরও ছিলো শাক-সবজির বাগান। এতেই পরিবারের চাহিদা অনেকটা মিটে যেতো। কিন্তু, সেই জায়গায় এখন কেবল পানি আর পানি।”

অসচেতনতা আর দরিদ্রতার কারণে মেয়ে শাহিদাকে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন তিস্তাপারের কৃষক শমসের আলী। ফলে ১৬ বছর বয়সে প্রথম সন্তানের মা হন শাহিদা। এভাবেই ২০ বছর বয়সে এসে তিনি তিন সন্তানের জননী। তবে, এটি তিস্তাপারের নিয়মিত চিত্র বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাহিদা পড়ে থাকা ঘরের পাশে খাটের ওপর বসে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন অদৃষ্ট ভাগ্যের নির্মমতার কথা। ছোট শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন অশ্রুসিক্ত নয়নে। পাশে বড় ছেলে ভাতের জন্য কাঁদছিলো।

এর কিছুক্ষণ পরেই, ছোট শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে তিনি ছুটে যান স্থানীয় লোকজনের কাছে একটু আশ্রয়ের জন্য।

শাহিদার মতো এমন স্বপ্ন ভাঙার গল্প তিস্তাপারের অনেক বানভাসির। বানের পানি নেমে গেলেও যাদের বুক থেকে এখনও নামতে পারেনি সব হারানোর হাহাকার।

এস দিলীপ রায় দ্য ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English

Protesters stage sit-in near Bangabhaban demanding president's resignation

They want Shahabuddin to step down because of his contradictory remarks about Hasina's resignation

41m ago