ডেঙ্গু বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ’র পরামর্শ

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দেখতে দেখতে প্রায় মহামারির রূপ নিয়েছে ডেঙ্গুজ্বর। ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগী ও এ রোগে মৃতের সরকারি আর বেসরকারি সংখ্যায় বিস্তর ফারাক। হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগী নিয়ে হিমশিম অবস্থায়। মেয়র-মন্ত্রীদের বক্তব্যে রোগের প্রকোপ কমছে না, শুধু বাড়ছেই। কথার দাপটে এডিস মশা মরবে না। বসবাস করতে হবে মশার সঙ্গেই।

এমন পরিস্থিতিতে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের পক্ষ থেকে কথা হয় দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে। তিনি ডেঙ্গু বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যা অনুসরণ করলে হয়ত কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে:

 • ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিদিনই বাড়ছে। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এডিস মশার বিস্তার ঘটার কারণে এমনটি হচ্ছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে বলে বিভিন্নস্থানে পানি জমছে। সেখানে এডিস মশা ডিম দিচ্ছে। মশার বংশবৃদ্ধি বেশি বেশি হচ্ছে। মশার সংখ্যা বাড়ার কারণে সেসব মশা কামড়াচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

• যদি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ডেঙ্গুজ্বরের রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে আগামী শীতকাল পর্যন্ত। শীতকালে এডিস মশা থাকে না। সাধারণত সেসময় ডেঙ্গুজ্বর হয় না। মূল সমস্যা হচ্ছে মশার সংখ্যা বাড়ছে।

 •  ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশন প্রস্তুত ছিলো না। গত মে ও জুন মাসে ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করে। মশা এতো বেশি যে সে তুলনায় করপোরেশনগুলোর সক্ষমতা ও জনবল নেই। আবার মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। ওষুধ কার্যকর না হওয়ার মশা মরছে না। ফলশ্রুতিতে মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ব্যর্থ। এর কারণ তারা মশা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত ছিলো না। তারা হয়তো বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। তাই যা হওয়ার তাই হয়েছে।

• এছাড়াও, সিটি করপোরেশনগুলো যেভাবে ওষুধ ছিটাচ্ছে সেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশনের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। দুটি করপোরেশন যদি এক সঙ্গে কাজ না করে তাহলে ডেঙ্গুর মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। যদি উত্তর সিটি করপোরেশন মশা মারতে শুরু করে তাহলে মশা দক্ষিণে চলে আসবে। আবার দক্ষিণে মশা মারতে শুরু করলে সেগুলো উত্তরে চলে আসবে। তাই একই সঙ্গে দুটি করপোরেশনে মশা মারা শুরু না করলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

•   জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। অমুক ওষুধ খেলে জ্বর ভালো হয়ে যাবে, এজাতীয় ভাবনা যে কারো জন্যে ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অবহেলা করে ঘরে বসে থাকা যাবে না। জ্বর হলে ডাক্তার দেখাতেই হবে। অন্তত ডেঙ্গু হয়েছে কী না তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। এমনকি ডেঙ্গু হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায়। গত কয়েকদিনে কয়েকজন যে মারা গেলেন তারা তাদের জ্বরকে সাধারণ ভাইরাস জ্বর মনে করেছিলেন। তাই ঘরে বসে ছিলেন। হঠাৎ করে শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ায় আর সামাল দিতে পারেননি।

• আরেকটি বিষয় হলো- ডেঙ্গু জ্বরের সময় ভীষণ ব্যথা হয় বলে অনেকে বিভিন্ন রকমের ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। নিয়ম হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে না। তা না হলে পরিস্থিতি বিপদজনক হতে পারে। জ্বর হলে কী ধরনের খাবার খাবেন, সে বিষয়েও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু করা যাবে না।

•  ঘরের বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সিটি করপোরেশনের কাজ। আর ঘরের ভেতরের মশা নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন তো ঘরে ঘরে গিয়ে মশা মারতে পারবে না। তাই নিজের ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিজেকেই করতে হবে। ঘরে বা ছাদে রাখা গাছের টব, এসির নিচে, ফ্রিজের নিচে তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা পানি রাখা যাবে না। এগুলো নিজেদেরকেই মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, জনগণের সচেতনতাও এ বিষয়ে খুব জরুরি। নিজের ঘর ও এর আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে।

• নিজেকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করার জন্যে আরো কিছু  নিয়ম মানতে হবে। যেমন, কেউ যদি দিনের বেলায় ঘুমান তাহলেও মশারি টাঙাতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ফুলহাতা জামাকাপড় পরিয়ে রাখতে হবে যাতে মশা না কামড়াতে পারে।

• পুনরার্বৃত্তি করছি, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ যেনো অবহেলা করে ঘরে বসে না থাকেন। আবারো বলছি, যেকোনো ধরনের জ্বর হোক না কেনো জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
rooppur-nuclear-power-plant

Rooppur payment: Govt to seek US sanction waiver

As much as $900 million has been on hold since 2022 in the central bank's escrow account

16h ago