জাবিতে চলমান উন্নয়ন পরিকল্পনার ‘মাস্টারপ্ল্যানে’ গোড়ায় গলদ!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনায় ‘গোড়ায় গলদ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদিল মুহম্মদ খান। গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ‘সম্পূরক আলাপ’ নামে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
ju main gate
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনায় ‘গোড়ায় গলদ’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদিল মুহম্মদ খান। গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ‘সম্পূরক আলাপ’ নামে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

জাবি ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্রপ্রতিনিধি, আন্দোলনকারী শিক্ষক প্রতিনিধি ও প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা।

পরিকল্পনায় ত্রুটি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চলমান পরিকল্পনায় পরিকল্পনাবিদদের বাদ দিয়ে স্থাপত্যবিদদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। স্থপতিরা সাধারণত কাজ করেন মাইক্রো স্কেলে, আর পরিকল্পনাবিদরা কাজ করেন ম্যাক্রো স্কেলে। মাইক্রো স্কেলে যারা কাজ করে, তাদের ম্যাক্রো স্কেলে কেমন কাজ হবে, সেটি বুঝবার ক্ষমতা প্রফেশনালি কম হয়। এটি উনাদের দোষ না। উনারা এভাবেই বেড়ে ওঠেন।”

এ সময় তিনি আরও বলেন, “আমাদের পরিকল্পনাটি করা হয়েছে মূলত বুয়েটের স্থাপত্যবিদদের দিয়ে, কিন্তু সেখানকার পরিকল্পনাবিদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। সাধারণত এ ধরনের কাজে পরামর্শক থাকেন একজন পরিকল্পনাবিদ এবং তাঁর সাথে যুক্ত থাকেন স্থাপত্যবিদসহ অন্যরা। দোষটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের। এটি কোনো ব্যক্তির ভুল নয়। এটি আমাদের সামষ্টিক ভুল।”

জাবি উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে আন্দোলনে একপক্ষ। অন্যদিকে চলমান পরিকল্পনা ‘পরিবেশসম্মত’ হয়েছে বলে প্রচারণা চালাতে থাকে প্রশাসনপন্থী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটিকে প্রথম দিকে ‘মাস্টারপ্লান’ বললেও এটি আসলে ডিপিপি (ডেটেইলড প্রোজেক্ট প্রোপোজাল) বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

আলোচনায় রিমোট সেন্সিং ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তোহিদুল ইসলাম বলেন, চলমান পরিকল্পনা আসলে মাস্টারপ্লান নয়। একে ডিটেইল এরিয়া প্লান (ডিএপি) হিসেবে উল্লেখ করেন।  তিনি ক্যাম্পাসে প্রশাসনপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তবে ড. আদিল এটি অসম্পূর্ণ মাস্টারপ্ল্যান হিসেবে উল্লেখ করেন।

পরিকল্পনায় মাস্টারপ্ল্যানের কিছু মৌলিক দিকেরও ঘাটতি আছে বলে উল্লেখ করে ড. আদিল বলেন, “টার্মস অব পেপার অনুযায়ী পরামর্শকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা। বিশ্বে অন্যান্য জায়গায় এটিকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে সেটা হয়নি। যদি এটি পরিকল্পনাবিদরা করতেন তাহলে এখানে পরিবেশবিদ, ভূগোলবিদ, ভূতত্ত্ববিদরা থাকতেন। সুতরাং অংশীজনদের অংশগ্রহণ ছাড়া মাস্টারপ্ল্যানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল।”

রবীন্দ্রনাথ হলের তিনদিকে তিনটি হল নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ হলের আশে পাশে তিনটি হল নির্মাণের স্থানগুলো ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছে। হলে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এর আশেপাশে তিনটি হল না হয়ে কতটি হবে, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনা দ্বার বন্ধ হয়ে যায়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষকদের দেশজোড়া কাজের সুনামের কথা উল্লেখ করে চলমান পরিকল্পনায় এই বিভাগের শিক্ষকরা ‘অবগত’ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অসম্পূর্ণ এ পরিকল্পনা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলতি মাসে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের দুইটি আবাসিক হলের কাজের উদ্বোধন করেন। এতে হলের নির্মাণের স্থান ও হাজারের বেশি গাছকাটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় আন্দোলন। পরে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্ল্যান উন্মুক্ত ও পরিবেশসম্মত উন্নয়ন কাজের দাবি জানান।

এ আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটি জীবন্ত গবেষণাগার। এই গবেষণাগারকে সমৃদ্ধ করার জন্যই উন্নয়ন। উন্নয়ন ও পরিবেশ কখনও পরস্পর বিরোধী নয়। উন্নয়ন এবং পরিবেশ যদি পরস্পর বিরোধী হয়, সেই উন্নয়ন কখনও টেকসই হয় না। পরিবেশের প্রাণ প্রকৃতি মিলে যে বাস্তুসংস্থান থাকে, সেটার উপযোগী করে পরিকল্পনা দাঁড় করাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “অতীতের অনেক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অনেক অপরিকল্পিত ভবন নির্মিত হয়েছে। এই ভুল আর হতে দেওয়া যায় না। বিভিন্ন বিভাগে যোগ্য শিক্ষক আছে, যারা দেশে বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন, তাঁদের এখানে সম্পৃক্ত করতে হবে। এতে বিভাগের শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়বে এবং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অনুশীলনও এর মাধ্যমে হবে।”

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সুযোগ আছে, সেটিকে ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হতে পারে। জ্বালানি, সৌর ও বর্জ্য বিদ্যুতের জন্য মডেল হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সকলের অংশগ্রহণমূলক স্বচ্ছ ও পরিবেশসম্মত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে তিনমাস পরে কার্যক্রম শুরু করার অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, মাস্টারপ্ল্যান ও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৪ সদস্যদের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করেছেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, এ কমিটিতে রয়েছেন ১৩জন শিক্ষক ও প্লানিং ও উন্নয়ন অফিসের একজন সহকারী পরিচালক।

তবে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ কমিটি গঠনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও তারা এটিকে ‘অপূর্ণাঙ্গ’ কমিটি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা এখানে একজন ভূতত্ত্ববিদ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, হাইড্রোলজিস্ট ও একজন আর্কিটেক্ট রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago