কৃষকের সন্তানকে কালুখালী থানায় নিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানোর অভিযোগ এএসপির বিরুদ্ধে

Shahin Bishwas
পুলিশের নির্যাতনে আহত হয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে শাহিন বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনাটি ঘটেছে ৩০ জুলাই রাতে। রাজবাড়ী জেলার কালুখালী থানায়। পরিবারের অভিযোগ- রঙমিস্ত্রি মোহাম্মদ শাহিন বিশ্বাস (২৩)-কে থানায় নিয়ে হাত-পা বেঁধে নৃশংসভাবে পেটানো হয়। তাকে সারারাত থানায় রাখার পর সকালে একটি সাদা কাগজে শাহিনের বাবার স্বাক্ষর নিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

গাজীপুরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ার পর শাহিন বিয়ে করেন সেখানকার সাদিয়া নামের এক মেয়েকে। এরপর, তাকে নিয়ে শাহিন চলে আসেন রাজবাড়ীর মহেন্দ্রপুরে তাদের গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু, সাদিয়ার মা-বাবা কয়েকবার এসে মেয়েকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। সাদিয়া যেতে না চাওয়ায় নিয়ে যেতে পারেননি।

৩০ জুলাই সাদিয়ার বাবা-মা এসে মেয়েকে নিয়ে মহেন্দ্রপুর গ্রামের স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যান। খবর পেয়ে শাহিন সেখানে এলে তাকে ও সাদিয়ার মা-বাবাসহ কালুখালী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

শাহীনের বাবার অভিযোগ, সেদিন রাত ১০টার দিকে রাজবাড়ী জেলার পাংশা সার্কেলের এসএসপি লাবিব থানায় আসার পর মেয়েকে তার মা-বাবার সঙ্গে পাঠিয়ে দেন এবং থানার একটি কক্ষে শাহিনকে আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এএসপি লাবিব নিজে পিটিয়েছেন শাহীনকে। শাহীনের বাবা গ্রামের একজন মাতব্বর আবেদ আলী মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যান। কিন্তু, থানার ভেতর থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়। তারা থানার বাইরে দাঁড়িয়ে শাহীনের চিৎকার শুনেছেন, হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা বলেন বাবা ফয়জুদ্দিন বিশ্বাস।

শাহীনের বাবার অভিযোগ, প্রায় দুই ঘণ্টা মারধরের পর এএসপি লাবিব থানা থেকে বের হয়ে গেলে সেখানে গিয়ে শাহিনকে অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা অশালীন আচরণ করে তাদেরকে বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং পরদিন এসে শাহিনকে নিয়ে যেতে বলেন।

পরদিন, (৩১ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে শহিনকে ছেড়ে দেওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

উল্লেখ্য, দরিদ্র কৃষক ফয়জুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে শাহীনের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা বা জিডি ছিলো না। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময়ও কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিলো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে থানার কালুখালী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আসল এ বিষয়ে তেমন কিছু হয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আনা হয়েছিলো। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”

তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করার যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে যদি একটু বলতেন, “না, সেধরনের কোনো কিছু পাইনি।”

শাহীনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো কেনো? তার শরীরে আঘাতের চিহ্নের কারণ কী? “হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো, তা শুনেছি। তাকে মারধর করা হয়েছে কী না সে তা আমি বলতে পারছি না,” বলেন ওসি শহীদুল।

আপনার এসপি বিষয়টি জানেন আর আপনি বলেছেন, আসল এ বিষয়ে তেমন কিছু হয়নি। “আমি বলছি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আনা হয়েছিলো। সার্কেল স্যার ছিলেন, তার সঙ্গে হয়তো কথাবার্তা বলেছেন। তিনিই এ ব্যাপারটা বলতে পারবেন।”

শাহীন বিশ্বাসকে কালুখালী থানায় আটকে রেখে আপনি তাকে পিটিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেন, আপনার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন শাহীন ও তার বাবা। আসলে কী ঘটেছিলো, শাহীনকে পেটানোর দরকার হলো কেনো? দ্য ডেইলি স্টারের প্রশ্নের উত্তরে এএসপি লাবিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে থেকে বলেন, “আমার নাম বলেছে?”

হ্যাঁ, অভিযোগ সরাসরি আপনার বিরুদ্ধে।

এএসপি লাবিব বলেন, “আপনারা এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন।”

এলাকায় খোঁজ নিয়েছি, আরও নেবো। আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি, আপনি পিটিয়েছেন কী না বা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি ছিলো?

“একটি অল্প বয়সী মেয়েকে নিয়ে এসেছিলো।”

তার জন্যে তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। পেটালেন কেনো?

“পেটানোর অভিযোগ সত্যি নয়।”

আপনি সেদিন রাত ১০টায় থানায় এসেছিলেন। তখনই শাহীনকে পেটানো হয় বলে অভিযোগ। তো আপনি কিছু দেখেননি?

“হ্যাঁ, আমি থানায় এসেছিলাম। দেখেছি...।”

কেনো কী ঘটছে, জানতে চাননি?

“না, জানতে চাইনি। আমি সবকিছু জেনে কিছুক্ষণ পরে আপনাকে ফোন করবো”- একথা বলে তিনি ফোন রেখে দেন।

শাহিন বিশ্বাসকে কালুখালী থানায় এনে পেটানোর ঘটনা প্রসঙ্গে রাজবাড়ী জেলার এসপি মিজানুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, “এএসপি যখন জানতে পারেন যে ছেলেটির বউ আছে এবং একটি মাইনর মেয়েকে তুলে এনেছে তখন না কী তাকে চড়থাপ্পড় দেওয়া হয়েছে। … মারাটা তো ঠিক না। আমি তাদেরকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে আমি ইনকোয়ারি করবো।”

“পরে ওসি আমাকে জানালেন, এএসপি লাবিব হাসপাতালে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। সরি বলেছেন। চিকিৎসার খরচ দিবেন বলেও জানিয়েছেন,” যোগ করেন এসপি।

গতকাল এসপির সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর তিনি দ্য ডেইলি স্টারে ফোন করে জানান, “শাহীনকে হাসপাতাল থেকে আজ (৫ আগস্ট) রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায় গতকাল নয়, আজ (৬ আগস্ট) সকালে রিলিজ দেওয়া হয়। পুলিশি নির্যাতনের শিকার শাহিন বিশ্বাসকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার সময় ‘মারামারি’ লেখা হয়েছে।

সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ইকবাল হোসেন তালুকদারের অধীনে ৩১ জুলাই ভর্তি করা হয়েছিলো শাহীন বিশ্বাসকে। তিনি টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “হাসপাতালে এতো রোগী ভর্তি যে কোন রোগীর কী সমস্যা তা এভাবে বলতে পারছি না।”

এ ঘটনায় ‘পুলিশের নৃশংস নির্যাতনের অভিযোগ দাখিল’ শিরোনামে গত ৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন শাহিন বিশ্বাসের বাবা মোহাম্মদ ফয়জুদ্দিন বিশ্বাস।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

8h ago