২ লাখ ৭০ হাজার টাকার অভাবে বুলগেরিয়া যেতে পারছেন না মার্শাল আর্ট কন্যা সান্ত্বনা
মার্শাল আর্ট তার স্বপ্নে-ভালোবাসায়। মার্শাল আর্ট নিয়ে বেড়ে উঠেছেন, বেঁচে আছেন লালমনিরহাটের সান্ত্বনা রানী রায়। মার্শাল আর্ট নিয়েই গৌরবময় জীবনে পদার্পণ করতে চান কৃষক পরিবারের এই সন্তান। কিন্তু জীবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিদারুণ আর্থিক সঙ্কট।
আগামী ২৪ থেকে ৩০ আগস্ট বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২১তম বিশ্ব আইটিএফ (ইন্টারন্যাশনাল তায়কোয়ান্দো ফাউন্ডেশন) তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা। এতে বাংলাদেশের মার্শাল আর্ট কন্যা সান্ত্বনা রানী রায়সহ মোট পাঁচজনের একটি দল অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। আর্থিক সঙ্কট এবং ব্যক্তিগত স্পন্সর না পাওয়ায় বুলগেরিয়া সফর এখন অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।
সান্ত্বনা জানান, বুলগেরিয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটিতে অংশ নেওয়ার জন্য ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আজকের (১৮ আগস্ট) মধ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইটিএ) সেক্রেটারি জেনারেল সোলায়মান শিকদারের কাছে জমা দিতে হবে। বিমান ভাড়া, থাকা–খাওয়া, অংশগ্রহণ ফি, ভিসা ফি, ভিসা সংগ্রহ ও পোশাক–পরিচ্ছদের খরচ বাবদ এই টাকা জমা দিতে হবে। ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ টিমের সদস্যদের বুলগেরিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমার দরকার ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু আমি যোগাড় করতে পেরেছি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।”
“জানিনা শেষ মুহূর্তে আমার ভাগ্যে সেই সুযোগ রয়েছে কী না”, এমনটি জানিয়ে সান্ত্বনা বলেন, “আমি হারতে শিখিনি। টাকা সংগ্রহে শেষ পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
তিনি বলেন, “দরিদ্র কৃষক বাবার পক্ষে কোনোভাবেই আমাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব না। আমার কাছে ৪০ হাজার সঞ্চিত টাকা। আর রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ৮০ হাজার টাকার অনুদান হিসেবে দিয়েছেন।”
সান্ত্বনার বাবা সুবাস চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের কাছে বিক্রি করার মতো জমিও নেই। যেটুকু আবাদি জমি আছে তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই। ঈশ্বরই জানেন কীভাবে আমাদের কন্যার স্বপ্ন পূরণ হবে।”
“মেয়েটা শৈশব থেকেই মার্শাল আর্ট নিয়েই পাগল। সারাক্ষণ শুধু মার্শাল আর্টের সঙ্গেই সখ্যতা তার,” বলেন তিনি।
সান্ত্বনার মা যমুনা রানী জানান, বুলগেরিয়া যেতে না পারলে অপূর্ণ থেকে যাবে সান্ত্বনার স্বপ্ন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, “জানি র এ ব্যথা বইবার শক্তি ওর হবে কী না। বড় কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার জন্য, কিন্তু আমরা নিরুপায়।”
কৃষক পরিবারের মেয়ে সান্ত্বনা রানী রায় তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বড়। রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে এলএলবি শেষ করছেন। শৈশবে গ্রামের বখাটেদের উত্যক্তের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই হাতেখড়ি মার্শাল আর্টের। আর সেই মার্শাল আর্টই সান্ত্বনার পথচলার সঙ্গী এখন।
মার্শাল আর্ট কন্যা সান্ত্বনা ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় আটটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন।
২০১৪ সালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে, ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে, চলতি বছর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন।
লালমনিরহাটবাসীর প্রত্যাশা, আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে এই মার্শাল আর্ট কন্যা বুলগেরিয়ায় আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করবে।
এস দিলীপ রায়, দ্য ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট সংবাদদাতা
Comments