ফেসবুকে উঠে আসা যৌন হয়রানির অভিযোগ স্বউদ্যোগে তদন্ত করছে রাজশাহীর পুলিশ

ইভ টিজিং ও যৌন হয়রানীর মত স্পর্শকাতর ঘটনাগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা চুপ করে থাকেন। বিচারহীনতার অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে বিচার চাওয়া থেকেই বিরত থাকেন। পুলিশকে না বললেও অনেকে আবার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্বউদ্যোগে এসব অভিযোগ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার কাজ শুরু করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ইভ টিজিং ও যৌন হয়রানীর মত স্পর্শকাতর ঘটনাগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা চুপ করে থাকেন। বিচারহীনতার অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে বিচার চাওয়া থেকেই বিরত থাকেন। পুলিশকে না বললেও অনেকে আবার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্বউদ্যোগে এসব অভিযোগ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার কাজ করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ।

থানায় গিয়ে কেউ অভিযোগ না করলেও, রাজশাহী নগরের পুলিশ গত এক সপ্তাহে অন্তত দুটি যৌন হয়রানির ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে ভুক্তভোগীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদেরকে অভিযোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার তৎপরতাও চলছে।

“এটা আসলে ঘটা করে নেওয়া কোন পদক্ষেপ নয়, বরং নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এটা করছি যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর মানুষ আস্থা রাখতে পারেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে যান,” আরএমপির মুখপাত্র ও ডেপুটি কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলছিলেন।

তিনি বলেন, সরকার যেহেতু চাইছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে, আবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও নির্দেশনা আছে সামাজিক মাধ্যমে নজরদারী করার এবং যৌন হয়রানীর ঘটনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার, কাজেই সামাজিক মাধ্যমে কোনো অভিযোগ উঠলে সেটা তদন্তে পুলিশের কোনো বাধা নেই।

গত ১০ অগাস্ট রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) একজন শিক্ষক সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করে লিখেছিলেন যে তিনি যখন শহরের সোনাদিঘী মোড়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন তার স্ত্রী একদল বখাটের দ্বারা যৌন হয়রানীর শিকার হন। তিনি ওই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তার উপর আক্রমণ করা হয়। তিনি লিখেছেন, তাকে যখন বখাটেরা মারছিল সেখানে জনা পঞ্চাশেক উৎসুক জনতা থাকলেও তার সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি।

পুরো ঘটনাটি ফেসবুকে সবিস্তার তুলে ধরলেও তিনি তা পুলিশকে জানাননি। শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ওই ঘটনায় মামলা করতে আগ্রহী ছিলেন না। এমনকি ওই শিক্ষকের শ্বশুর পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়া স্বত্ত্বেও তিনি অভিযোগ করতে চাইছিলেন না।

“মেনে নিন নয়তো দেশ ছেড়ে চলে যান” শিরোনাম দিয়ে তিনি তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে লেখেন, “ধরেই নিয়েছিলাম, পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরব, মা বাবা চান না দেশের বাইরে সেটেল করি। এই ঘটনার পর দ্বিতীয়বার ভাবব অবশ্যই।”

তিনি আক্ষেপ করে আরও লিখেছিলেন, “এদেশে চোখের সামনে আপনার মা, বোন অথবা বউ ধর্ষিত হলেও প্রতিবাদ করবেন না, আশেপাশে কাউকে পাবেন না। মার খেয়ে মরবেন। কারণ, ... জানোয়ারে ভরা সমাজ আমাদের।”

রুয়েট শিক্ষকের এই স্ট্যাটাসটি ‘ভাইরাল’ হওয়ায় সেই রাতেই এটি রাজশাহীর পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকের নজরে আসে। সাধারণ মানুষজনের মধ্যে অনেকেই আবার পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছিল।

“আমরা বুঝতে পারছিলাম কোন পরিস্থিতিতে একজন নাগরিক দেশ ত্যাগের কথা ভাবতে পারে,” বলছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহুল কুদ্দুস “তার লিখাটি আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল এবং সেটি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই একটি সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে আমরা ঘটনা তদন্তে নেমে পড়েছিলাম। কিন্তু কোনো জোরালো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছিলাম না। কারণ, আমাদের হাতে অভিযোগ ছিল না।”

বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ঘটনার ছয়দিন পর থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে একটি দল রুয়েট শিক্ষকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে সমর্থ হয়। পরে শিক্ষকের স্ত্রী নগরের বোয়ালিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয় যৌন হয়রানীর উদ্দেশ্যে বখাটেরা তাকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। কয়েকবার ধাক্কা দিলে তার স্বামী ক্ষিপ্ত হন এবং প্রতিবাদ করেন। এর প্রেক্ষিতে বখাটেরা তার স্বামীকে আক্রমণ করেন।

পরে পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শীদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেয় এবং একটি ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে আসামীদের খুঁজে বের করে।

গতকাল সোমবার দুপুরে সন্দেহভাজন আসামীদের একজন, শাহানুর হোসেন খোকন (১৯) বর্ণালী মোড়ের পাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়। পরে তার বর্ণনা অনুযায়ী অপর দুজন, বকুল আহম্মেদ (১৯) ও রিপন মণ্ডলকে (১৮) আটক করে। তাদেরকে রুয়েট শিক্ষক ও তার স্ত্রীর মুখোমুখি করা হলে তারা আসামীদের সনাক্ত করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ থাকার ফলে তারা আসামীদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে পেরেছেন।

এই ঘটনা নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনার মধ্যেই গত সোমবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ছাত্রী অভিযোগ করেছেন যে একই দিন বিকেলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে অটোরিকশায় যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে পরে অবশ্য অভিযোগ মুছে ফেললেও তিনি লিখেছিলেন, “কাহিনীটা শুধু শেয়ার করলাম। এইটা বাংলাদেশ। কোনো বিচারের আশা আমি করছি না।”

আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রুয়েটের ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল দেখে এসেছেন, এর পরও ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ করতে অস্বীকার করেছেন।

গোয়েন্দা শাখার উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেছেন, কোন মামলা না হলেও তারা এ বিষয়ে করা জিডির ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ছাত্রীটির অভিযোগ আমাদের কাছে সত্য বলে মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন যে, অটোরিকশার চালক ও তার সহযোগীরা অন্য যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে দিয়ে তাকে নিয়ে ভদ্রা মোড় থেকে স্টেশন পর্যন্ত রাস্তায় যৌন হয়রানী করেছে, পরে তাকে নগর ভবনের কাছে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং সে বিষয়টি মাথায় রেখেই তারা তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

“এই ঘটনায় ক্লু খুব কম, সিসিটিভি ফুটেজও নেই। কিন্তু আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমরা আশা করতে পারি যে আসামীদের খুব শিগগিরই ধরতে পারব,” মামুন বলছিলেন।

“আমরা আগে আসামীদের ধরে তার আস্থা অর্জন করতে চাই, পরে তাকে একটি অভিযোগ করতে অনুপ্রাণিত করব,” যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago