৪৩৫ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন ব্যয় বিটিআরসির কাছে হয়ে গেলো ৮,৭৪৪ কোটি
দেশের তিনটি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞাপন ব্যয়ের হিসেবে টাকায় উল্লেখ করেছে, সেটিকেই ‘ডলার’ ধরে হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে দ্য ডেইলি স্টার।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) হিসেবের এই গড়মিল করে সম্প্রতি হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। যেটি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২৩ জুন বিটিআরসি জানায় যে, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাবদ গত কয়েক বছরে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি সর্বমোট ১.০৪ বিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার ৭৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ করেছে।
বিটিআরসির সেই প্রতিবেদনের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।
সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, বিটিআরসির কাছে জমা দেওয়া কাগজপত্রে এই তিনটি মোবাইল অপারেটর উক্ত খাতে সম্মিলিতভাবে ব্যয় দেখিয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকা।
বিটিআরসিকে দেওয়া প্রতিবেদনে রবি দেখিয়েছে, ডিজিটাল প্রচারণায় তারা ব্যয় করেছে ৩২১.৩৮ মিলিয়ন টাকা, হাইকোর্টে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে যাকে ৩২১.৩৮ মিলিয়ন ডলার হিসেবে দেখিয়েছে বিটিআরসি।
রবির একজন শীর্ষ নির্বাহী জানান যে, তারা সবসময় স্থানীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করেন এবং টাকায় অর্থ প্রদান করেন। বিটিআরসিকে তারা কোনো ডলারের পরিসংখ্যান দেননি।
বাংলালিংকের ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়েও একই ধরণের ভুল করেছে বিটিআরসি। সংস্থাটি দেখিয়েছে যে, ডিজিটাল প্রচারণায় বাংলালিংক ব্যয় করেছে ‘২৮.৬৪ কোটি’, সংখ্যাটি টাকা না ডলারে হবে বাংলালিংক তা উল্লেখ করতে ব্যর্থ হলেও বিটিআরসি এটিকে ডলার হিসেবে ধরে নিয়েছে।
তবে, সংখ্যাটি টাকায় হবে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে বাংলালিংক।
২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাবদ গ্রামীণফোন ৪৩৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। যদিও গ্রামীণফোনের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে, তারা ব্যয় করেছে ৪.৫৮ মিলিয়ন
ডলার এবং ৩৩৬ কোটি টাকা। যেহেতু গ্রামীণফোন স্থানীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে টাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে সরাসরি লেনদেনে ডলারে অর্থ প্রদান করে।
কিন্তু, এই বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি গ্রামীণফোন।
এমনকি বিটিআরসির চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক এই ইস্যুতে কোনো মন্তব্য না করে তাদের আইনজীবী আলমগীর পারভেজ ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
ফোনে যোগাযোগের পর আলমগীর বলেন, “একটি ভুল হয়ে গেছে। বিষয়টি সংশোধনের ব্যাপারে আমরা আদালতের কাছে আবেদন করবো।”
উল্লেখ্য, গত বছর আদালতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক-গুগল-ইউটিউব-ইয়াহু বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে থেকে কতো টাকা আয় করে এবং সেখান থেকে সরকার ভ্যাট, ট্যাক্স হিসেবে কতোটা বঞ্চিত হয়, তার ওপর একটি রিট করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
Comments