এই রাস্তা দিয়ে চলছে আমদানি-রপ্তানি
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চলাচলে অনুপোযোগী প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা। ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়লেও সড়ক সংস্কারে নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো ফলপ্রসূ ব্যবস্থা।
স্থলবন্দরটির সামনে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে এই তিন কিলোমিটার অংশজুড়ে রয়েছে বড় বড় খানা-খন্দক। এমন রাস্তার উপর দিয়ে পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনায় ভেঙ্গে যাচ্ছে ট্রাকের যন্ত্রাংশ, পড়ে যাচ্ছে ট্রাকের পণ্য আর সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ী, পরিবহন কর্মী ও ট্রাক মালিকরা। ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থলবন্দরে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। চলাচলে স্থানীয়রাও পড়ছেন চরম বিড়ম্বনায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ- সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিচ্ছে না তেমন কোনো ব্যবস্থা। মাঝে-মাঝে সংস্কারের নামে কিছু কাজ করা হলেও কিছুদিন পরই তা ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হলেও সড়কে চলাচলকারীদের কোনো উপকার হচ্ছে না। উপরন্তু, ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা লাভবান হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ অ্যাজেন্টস এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল বলেন, “সড়ক বিভাগকে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও তাদের কোনো ফলপ্রসূ ভূমিকা নেই রাস্তাটি সচল রাখতে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো সুফল পাচ্ছি না।”
“রাস্তার এমন খারাপ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা যে কী বিপাকে রয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারছেন না। সড়ক বিভাগ মাঝে-মধ্যে সংস্কার কাজ করে। কিন্তু, কী যে কাজ করে তা আমরা বুঝি না। কয়েকদিন পরে রাস্তার অবস্থা আগের মতোই হয়ে যায়,” যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বুড়িমারী স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি কয়েকদফায় সড়ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন রাস্তা মেরামতের জন্য। কিন্তু, এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা আমার কাছে আসেন আর আমি শুধু তাদেরকে আশ্বস্ত করি।”
“সড়কটির দুরবস্থা কারণে এই স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে,” উল্লেখ করে তিন আরো বলেন, “এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ বন্দরে রাজস্ব আয় অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাবে।”
বুড়িমারী স্থলবন্দরে একজন ট্রাকচালক সাহেবুল ইসলাম (৪৪) বলেন, “আমরা এমন অনুপোযোগী রাস্তা দিয়ে পণ্য নিয়ে ট্রাক চালাতে চাই না। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাকের এক্সেল ভেঙ্গে যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা বেশি ভাড়া দিয়ে আমাদেরকে এই রাস্তা দিয়ে পণ্য বহনে বাধ্য করেন। এতে আমরা জীবনের ঝুঁকিতেও পড়ি।”
ভারত থেকে আসা ট্রাকচালক রাম প্রসাদ দাস (৪৮) জানান, তিনি বিভিন্ন স্থলবন্দরে ট্রাক নিয়ে যান। কিন্তু, বুড়িমারী স্থলবন্দরের মতো সড়কের খারাপ অবস্থা কোথাও কোনোদিন দেখেননি। বলেন, “এজন্য বুড়িমারী স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসতে চাই না। কিন্তু, মালিকের চাপে আসতে হয়।”
বুড়িমারী বাজারের ব্যবসায়ী আশেকুর রহমান প্রধানের (৫৬) মন্তব্য, “রাস্তা সংস্কারের নামে সড়ক বিভাগ টাকা লোপাট করছে। তাই সড়কের বেহালদশা কাটছে না। সড়কের আজে অবস্থার কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠে গেছে। এমন খারাপ রাস্তা দিয়ে ক্রেতারা আসতে চান না।”
“এমনিতেই রাস্তার অবস্থা খারাপ। তার উপর দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো রাস্তায় জট লেগে যায়। চলাচলে অসুবিধায় পড়ি। চরম ভোগান্তিতে আছি আমরা,” এমনটি জানালেন ন্থানীয় বাসিন্দা রইচ উদ্দিন সরকার (৬৩)।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বকতিয়ার আলম জানান, “গত এক বছরে রাস্তাটি সংস্কার ও মেরামতে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অধিক পণ্য বোঝাই ভারি যানবাহন সবসময় চলাচলের কারণে সড়কটি টেকসই হচ্ছে না। বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাটগ্রাম উপজেলা শহর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক ডিবিএস বেস কোর্স ওয়ার্ক ও ডিবিএস ওয়্যারিং কোর্স ওয়ার্কের মাধ্যমে মজবুত সড়ক তৈরি করা হবে।”
“এতে ২৮ কোটি ৯০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা খরচ হবে” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে।”
এস দিলীপ রায়, দ্য ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট সংবাদদাতা
Comments