অস্ত্র চোরাচালানে ‘সীমান্ত হাট’
ভারতের আন্তঃরাজ্য অস্ত্র চোরাচালানে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে সিলেটের একটি সীমান্ত-হাটকে বেছে নিয়েছে আন্তঃদেশীয় চক্রটি।
নতুন রুট হিসেবে সিলেটের গোয়াইনঘাট দিয়ে আসা অস্ত্রগুলোর একটি অংশ বাংলাদেশের অপরাধী চক্রের হাতেও পড়ছে বলে জানানো হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার দলের সূত্রে জানা যায়, তদন্তকারীরা এই প্রথম বাংলাদেশে অত্যাধুনিক ১২ চেম্বারের রিভলভার পেয়েছে।
সাধারণত ১২-চেম্বারের শটগান পাওয়া গেলেও ১২ চেম্বারের রিভলভার বাংলাদেশে এই প্রথম উদ্ধার করা হয়েছে বলে বাহিনীটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সায়েদাবাদে তিনজন সন্দেহভাজন অস্ত্র চোরাকারবারিকে গ্রেপ্তারের পর এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
সিটিটিসি-র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিসহ একটি ০.২২ বোর ১২ চেম্বার রিভলভার এবং দুটি ০.৩২ বোর ছয় চেম্বার রিভলভার উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় আটককৃতরা হলেন আব্দুস শহিদ (৪০), তার বন্ধু আনসার মিয়া (৪০) এবং তাদের সহযোগী দোলন মিয়া (৩৮)। পুলিশ তাদের দুইদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
আটককৃতদের বরাত দিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, “স্থানীয় চোরাকারবারিরা ব্যবসার আড়ালে গোয়াইনঘাট সীমান্ত-হাটে পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত-হাটের ভারতীয় অংশে থাকা চোরাকারবারিদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে আসছে।”
বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে তারা সেই অস্ত্র সীমান্ত-হাটের বাইরে নিয়ে আসছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গত ১ জুলাই, সিটিটিসি ইউনিট কামাল হোসেন (৩৫) এবং সাইদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে রুবেল (৩০) নামের দুজন অস্ত্র চোরাচালানীকে গ্রেপ্তার করে। সেসময় তাদের কাছ থেকে একটি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করে।
সিটিটিসি ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সেই আগ্নেয়াস্ত্রটিও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করছে সেই অস্ত্রটির গন্তব্য কোথায় ছিলো।”
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর আগে তারা সীমান্ত-হাট দিয়ে অস্ত্র চোরাচালানের খবর কখনোই শুনেননি।
তিনি বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহীর মতো সীমান্ত এলাকাগুলোকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। সেগুলো অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবে পরিচিত। সেসব জায়গা থেকে আমরা প্রায়শই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে থাকি।”
তার মতে, “আমরা সীমান্তে কড়া নজরদারি রেখেছি বলেই হয়তো চোরাকারবারিরা নতুন রুট খুঁজছে। আমরা এই বিষয়টিও দেখবো এবং প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিবো।”
অতীতে, চোরাকারবারিরা মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বেনাপোলসহ কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট ব্যবহার করে অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করে আসছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মকর্তা বলেন, “চোরাকারবারিরা সেই পয়েন্টগুলোর মাধ্যমে একে ২২ এবং ৯এমএম পিস্তল পাচার করতো এবং চোরাচালান করা অস্ত্রের একটি বড় অংশ আবার ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে পাহাড়ি পথে ভারতে পাচার করতো।”
এই কর্মকর্তা আরো জানান, বিহার রাজ্যের মুঙ্গারে তৈরি হওয়া একটি ৯এমএম পিস্তলের জন্য চোরাচালানিরা প্রায় ৮০ হাজার টাকা এবং একটি একে২২ এর জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা আদায় করতেন।
নতুন রুট হিসেবে সিলেটে চোরাকারবারিরা প্রথমে সীমান্ত-হাটে ভারতীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে অস্ত্র নেয়। স্থানীয় চোরাকারবারিরা তখন সেই অস্ত্রগুলো ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাদের সহযোগীদের হাতে তুলে দেয় বলে সিটিটিসি ইউনিটের এডিসি জাহাঙ্গীর জানান।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, “পরে দ্বিতীয় দল স্থানীয় অস্ত্রধারীদের কাছে সেই অস্ত্রগুলোর কয়েকটি বিক্রি করে এবং বাকিগুলো আবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাচারকারীদের কাছে প্রেরণ করে।”
সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে এই অস্ত্র ভারতে পাঠানো হয়।
পুলিশ এখন নতুন রুট এবং সিন্ডিকেট সম্পর্কে আরো তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কাজ করছে বলেও জানানো হয়।
ইংরেজিতে মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
Comments