ইংলিশ টেলএন্ডারদের প্রতিরোধ ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার উল্লাস
![australia cricket team australia cricket team](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/pat_cummins.jpg?itok=jNCwuykv×tamp=1567967650)
ম্যাচ বাঁচাতে শেষ দিনের পুরোটা ব্যাট করতে হতো ইংল্যান্ডকে। কারণ জয়ের জন্য দরকার থাকা আরও ৩৬৫ রান তাড়া করার চেয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করাটাই যুক্তিসঙ্গত। পরিকল্পনাটা প্রায় বাস্তবায়ন করেও ফেলেছিল ইংলিশরা। প্যাট কামিন্স-জশ হ্যাজেলউডদের চোখ রাঙানি সামলে আটে নামা ক্রেইগ ওভারটন আর দশে নামা জ্যাক লিচ মিলে উইকেটে শিকড় গেড়েছিলেন। কিন্তু শেষ বিকালে ভাঙে টেলএন্ডারদের প্রতিরোধ। তাদেরকে সাজঘরে ফিরিয়ে অ্যাশেজ ধরে রাখার উল্লাসে মাতে অসিরা।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ম্যানচেস্টার টেস্টের পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ১৯৭ রানে অলআউট করেছে অস্ট্রেলিয়া, পেয়েছে ১৮৫ রানের বিশাল জয়। ফলে সিরিজের চার টেস্ট শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে তারা। সেই সঙ্গে অ্যাশেজের ট্রফি নিজেদের কাছেই রাখা নিশ্চিত করেছেন সফরকারী টিম পেইনরা। কারণ বাকি থাকা একমাত্র টেস্টে হেরে গেলেও সিরিজ খোয়ানোর ভয় নেই তাদের। সবশেষ অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের মাটিতে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে।
৩৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দলীয় ১৭৩ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে জোফরা আর্চারের বিদায়ের পর ওভারটনের সঙ্গে জোট বাঁধেন লিচ। পেসার ওভারটন ততক্ষণে উইকেটে কাটিয়ে দিয়েছেন ৬৪ বল, ষষ্ঠ উইকেটে জস বাটলারের সঙ্গে ১২৭ বলের একটি জুটি গড়ে অসি গতিতারকাদের মোকাবেলা করার উপায়টাও বুঝে গেছেন। আর স্পিনার লিচ তো হেডিংলিতে গেল টেস্টে ইংল্যান্ডের স্মরণীয় জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন। তাকে নিয়েই অসম্ভব সিঁড়ি ডিঙিয়েছিলেন বেন স্টোকস।
তাই ওভারটন-লিচে আশা দেখছিল ইংল্যান্ড। একে একে তারা পার করে দেন ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ ওভার। দিনের খেলা শেষ হতে তখন ঘণ্টাখানেকও বাকি নেই। কামিন্স-হ্যাজেলউড-মিচেল স্টার্করা নিজেদের ঝুলির সেরা অস্ত্র প্রয়োগ করেও টলাতে পারছেন না প্রতিপক্ষের লেজের দিকের দুই ব্যাটসম্যানকে। অথচ গোটা দিনজুড়ে কী তোপটাই না দেগেছেন তারা!
আগের দিনের ২ উইকেটে ১৮ রান নিয়ে খেলতে নামা ইংল্যান্ড জো ডেনলি আর জেসন রয়ের কাঁধে চড়ে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছিল দিনের প্রথম ঘণ্টা। এরপর মঞ্চে আবির্ভূত হন কামিন্স। চতুর্থ দিন শেষ বিকালের মতো ফের ছোবল হানেন। রয় (৬৭ বলে ৩১) আর স্টোকসকে (১৭ বলে ১) আউট করে ধরেন জোড়া শিকার। লাঞ্চের পরপর ইনিংসের একমাত্র হাফসেঞ্চুরিয়ান ডেনলিকে (১২৩ বলে ৫৩) ঝুলিবন্দি করেন নাথান লায়ন।
এরপর ছোট ছোট জুটি। দিন পার করার চেষ্টা ইংলিশদের। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়ে জনি বেয়ারস্টো (৬১ বলে ২৫) জীবন হারান স্টার্কের কাছে। আর লম্বা সময় কাটানো বাটলারের (১১১ বলে ৩৪) স্টাম্প উপড়ে নেন হ্যাজেলউড। আর্চার (৯ বলে ১) মাঠে যান-ফিরেও আসেন দ্রুত। তাকে ঘূর্ণিজালের ফাঁদে ফেলেন লায়ন। তারপর জেঁকে বসেন ওভারটন-লিচ।
আবারও রূপকথা লিখবে ইংল্যান্ড, এমনই যখন ভাবছেন নিরপেক্ষ ক্রিকেটভক্তরা, তখন অসি দলনেতা দ্বারস্থ হন অনিয়মিত লেগ স্পিনার মারনাস লেবুশানের। ওভারটন-লিচ জুটির তখন ১৪তম ওভার চলছে। কিন্তু অসিদের সেরা বোলারদের হতাশ করা লিচ আটকা পড়লেন লেবুশানের জালেই! শর্ট লেগে ক্যাচ নেন ম্যাথু ওয়েড। ভাঙে ২৩ রানের জুটি, যেখানে বল খেলা হয়েছে ৮৫টি।
৫১ বলে ১২ রান করা লিচকে ফিরিয়ে জেতার বারুদ পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের ইনিংস স্থায়ী হয় আর মাত্র দশ বল। হ্যাজেলউডের লেংথ বল ওভারটনের পায়ে লাগার সঙ্গে সঙ্গে আম্পায়ার আঙুল উঁচিয়ে ফেলেন। অবশ্য রিভিউ নেওয়া হয়েছিল। তাতে সিদ্ধান্ত বদলায়নি। ওভারটনের লড়াই থামে ১০৫ বলে ২১ রানে। ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১৯৭ রানে।
প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রানের মারমুখী ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে বিশাল লিড পাইয়ে দেওয়া স্টিভ স্মিথ পান ম্যাচসেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৪৯৭/৮ (ডি.)
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৩০১
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস: ১৮৬/৬ (ডি.)
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৮৩) (আগের দিন ৭ ওভারে ১৮/২) ৯১.৩ ওভারে ১৯৭ (ডেনলি ৫৩, রয় ৩১, স্টোকস ১, বেয়ারস্টো ২৫, বাটলার ৩৪, ওভারটন ২১, আর্চার ১, লিচ ১২, ব্রড ০*; কামিন্স ৪/৪৩, হ্যাজেলউড ২/৩১, লায়ন ২/৫১, স্টার্ক ১/৪৬, লেবুশান ১/৯, হেড ০/০)।
Comments