‘বিয়েতে অস্বীকৃতি’: ধর্ষণ মামলায় কারাগারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র

বিবাহে অস্বীকৃতি জানানোর পর ধর্ষণ মামলায় জেলে যেতে হলো রাজশাহীর এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে।
arrest
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বিবাহে অস্বীকৃতি জানানোর পর ধর্ষণ মামলায় জেলে যেতে হলো রাজশাহীর এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে।

ছাত্রটিকে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার তিন দিন পর গত বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজশাহী থেকে রংপুরে পাঠানো হয় এবং সেখানে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ অভিযোগ এনে কারাগারে পাঠানো হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজশাহীর নিউ গভ: ডিগ্রী কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের এই ছাত্র ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রংপুরের এইচএসসি পাস এক মেয়ের সঙ্গে। তারা ছয় মাসের অধিক সময় ধরে ফেসবুকে পরিচিত, বলছিলেন পবা থানার ওসি রেজাউল হোসেন। গত মঙ্গলবার মেয়েটি রাজশাহীর পবা উপজেলায় ছাত্রটির বাড়িতে গিয়ে হাজির হন এবং ওই ছাত্রের সঙ্গে তার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাড়ি ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান।

সেদিন সন্ধ্যায় ওই ছাত্রের বাবা পুলিশ ডাকলে পুলিশ ছাত্র ও মেয়েটিকে পবা থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ ও ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা জানান, পবা থানায় পুলিশ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আটকে রাখে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহীর পুলিশ দুজনকেই রংপুরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

সেদিন দুপুরে মেয়েটি রংপুরের তাজহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করে বলেন যে ছাত্রটি গত ১৬ জুন রংপুরে গিয়ে তাজহাট জমিদারবাড়ির বাগানে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে।

রংপুরের তাজহাট থানার উপ পরিদর্শক ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, মেয়েটির অভিযোগ অস্বীকার করে ওই ছাত্র পুলিশকে জানিয়েছে যে পুলিশ তাকে রংপুরে নিয়ে যাবার আগে আর কখনই সেখানে যায়নি এবং তাদের সম্পর্ক ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ ছিল।

ছাত্রর বাবা বলেছেন ফেসবুকে মেয়েটির সাথে তার সম্পর্কের কথা সে আগেই পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিল এবং বলেছিল যে মেয়েটি বিয়ের কথা বলার পর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

ছাত্রের বাবার দাবি, “আমি পুলিশ ডাকলাম সাহায্যের জন্য, আর পুলিশ আমার ছেলেকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করল। কথিত ওই ঘটনার দিন আমার ছেলে আদৌ রংপুরে গিয়েছিল কিনা এটা খুব সহজেই মোবাইল ফোন খুঁজে বের করা যায়, কিন্তু পুলিশ সেটাও করেনি। আমার মনে হয় আমার ছেলে কারো প্রতিহিংসার শিকার।”

“আমার ছেলেকে জেলে পাঠানোর ব্যাপারে রাজশাহীর পুলিশের উৎসাহ দেখে আমি খুব অবাক হয়েছি। কোনো মামলা হবার আগেই তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার ছেলেকে পবা থানায় নিল, সেখানে দুদিন আটকে রাখল এবং বৃহস্পতিবার সকালে তাকে রংপুরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এল।”

মামলা ছাড়া দুই দিন থানায় আটকে রাখার এই অভিযোগের ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক আব্দুর রহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে ধর্ষণের অভিযোগগুলোতে খুব সতর্কতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কারণ এক্ষেত্রে হয়রানির ঘটনা বিরল নয়।

“আলোচ্য ঘটনায় ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে পুলিশের উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের ঘটনায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া, অভিযোগ শুনে মনে হচ্ছে আসামি আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে সোপর্দ করার বিধানও এক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছে।”

ছাত্রটিকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জানতে চাইলে পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল হোসেন বলেন যে তিনি এটা ব্যাখ্যা করে বলতে পারবেন না। কারণ তিনি যা করেছেন তার তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা র নির্দেশনা অনুযায়ী করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে আরএমপির ডেপুটি কমিশনার হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করার পরেই তাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। “আমরা প্রাথমিক তদন্তে মেয়েটির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমরা জেনেছি তারা ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়িয়েছিল। ধর্ষণের অভিযোগ তদন্ত করার জন্যই তাকে রংপুরে পাঠানো হয়েছে,” তিনি বলেন। এটা আইন মেনে করা হয়েছে বলেও তার দাবি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago