মোদি-মমতা বৈঠক নিয়ে যত গুঞ্জন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বুধবার বিকেলে বৈঠক করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক খুব স্বাভাবিক হলেও, দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে মোদি-মমতার এই বৈঠকের পেছনের কারণ খুঁজছেন বিজেপি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট নেতৃত্ব।
modi mamata
নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বুধবার বিকেলে বৈঠক করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক খুব স্বাভাবিক হলেও, দুটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে মোদি-মমতার এই বৈঠকের পেছনের কারণ খুঁজছেন বিজেপি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট নেতৃত্ব।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের যে সময় নির্ধারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

কেননা, সিবিআই যখন সারদা কাণ্ডের ফাইল গায়েবের অপরাধে কলকাতার সাবেক পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে হন্য হয়ে খুঁজছে, ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

দিলীপ ঘোষ বলেন, “রাজীব কুমার যতই মমতার আচলের তলায় থাকুক, সিবিআই ওকে খুঁজে বের করবেই।”

কেন্দ্রীয় বিজেপির মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় একইভাবে খোঁচা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেছেন, “বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোদির সঙ্গে দিদির দেখা করা নিয়ে জোকস শুরু হয়েছে। দিদি কি রাজীব কুমারকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছেন?”

বিজেপির শীর্ষ নেতা রাহুল সিনহা বলেন, “নরেন্দ্র মোদিকে এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ট্রল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেনো যাচ্ছেন তিনি।”

“বিপদে পড়লেই দিল্লি ছুটে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”, যোগ করেন তিনি।

ভারতের বৃহত্তম অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার ছিলো ‘সিট’ নামে পুলিশের একটি বিশেষ শাখার হাতে। সেই সিটের প্রধান ছিলেন তৎকালীন বিধাননগর পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। সিবিআই সারদা মামলার তদন্ত শুরু করার পর থেকেই অভিযোগ উঠে যে, রাজীব কুমার সিটের প্রধান থাকার সময় সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তৃণমূল নেতা, মন্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ লুকিয়েছেন। সেই অভিযোগেই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে মামলা করে সিবিআই। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দফায় দফায় সিবিআই রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আসছিলো। সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে রাজীব কুমারকে গ্রেপ্তারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় তাকে গ্রেপ্তারের জন্য হন্য হয়ে খুঁজছে সিবিআই গোয়েন্দারা।

বিজেপির দাবি, রাজীব কুমার গ্রেপ্তার হলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। প্রমাণ হয়ে যাবে সারদা কাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূলের সংশ্লিষ্টতা। তাই প্রধানমন্ত্রীর হাত-পা ধরে রাজীব কুমারকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে।

কংগ্রেস নেতৃত্বও বিজেপির সুরে সুর মিলিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, “হঠাৎ কেনো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করার সময় চাইলেন। যখন রাজীব কুমারকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। তবে তিনি কি রাজীব কুমারকে বাঁচাতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন।”

বামফ্রন্ট নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটা তো পরিষ্কার। যখনই বিপদে পড়েন, দৌড়ে দিল্লির দরবার চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। রাজীব কুমারকে বাঁচানোর জন্য এবারের দৌড়, সেটি তো পরিষ্কার।”

এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি তৃণমূল কংগ্রেস।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এনআরসি, রাজ্যের অর্থনীতিক অবস্থাসহ রাজ্য সরকার সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রের কাছ থেকে যে সকল সাহায্য পেয়ে থাকে, সেসব ইস্যুতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্য এবং কেন্দ্রের সহযোগিতামূলক বিষয় নিয়ে কথা হতে পারে। কথা হতে পারে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে।

দায়িত্ব সূত্র নিশ্চিত করছে, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দৃষ্টিকোণ জানতে চাওয়া হতে পারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago