পুরোনো পথ আমাদের শুধু পুরোনো গন্তব্যেই নিয়ে যেতে পারে- ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে ড. ইউনূস

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির সর্বোচ্চ থিংক ট্যাংক ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়া’র উপদেষ্টা, গবেষক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অর্থশাস্ত্রকে একটি সত্যিকার সামাজিক বিজ্ঞানে পরিণত হতে হলে “তিন শূন্য” - অর্থাৎ শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নীট কার্বন নিঃস্বরণের পৃথিবী গড়ে তোলার পথ অনুসন্ধান করতে হবে।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দেশটির সর্বোচ্চ থিংক ট্যাংক ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়া’র উপদেষ্টা, গবেষক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অর্থশাস্ত্রকে একটি সত্যিকার সামাজিক বিজ্ঞানে পরিণত হতে হলে “তিন শূন্য” - অর্থাৎ শূন্য দারিদ্র, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নীট কার্বন নিঃস্বরণের পৃথিবী গড়ে তোলার পথ অনুসন্ধান করতে হবে।

ভারত সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে নীতি নির্ধারণকারী ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমিং ইন্ডিয়া’র আমন্ত্রণে ড. ইউনূস নয়াদিল্লি সফরে গিয়ে গত   সোমবার একথা বলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা অমিতাভ কান্তর নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি ‘নীতি আয়োগ’ নামে বহুল পরিচিত। 

সেখানে উপস্থিত ৭০ জন শীর্ষ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ড. ইউনূসের পরিচয় করিয়ে দিয়ে অমিতাভ কান্ত বিশ্বব্যাপী দারিদ্র ও পরিবেশগত সমস্যার মোকাবেলায় ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ভূমিকা বিষয়ে প্রফেসর ইউনূসকে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে অনুরোধ জানান। প্রফেসর ইউনূস সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, বেকারত্ব ও পরিবেশ- এই তিন বিষয়ে তার উদ্বেগ তুলে ধরেন। অর্থনীতির তাত্ত্বিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে কীভাবে দারিদ্র, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃস্বরণ মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা যায় তারও ব্যাখ্যা দেন অধ্যাপক ইউনূস।

নীতি আয়োগ পরিদর্শনের সময় প্রফেসর ইউনূস “অটল ইনোভেশন মিশন” এর প্রধান নির্বাহী আর. রামাননের সঙ্গে বৈঠক করেন। “অটল ইনোভেশন মিশন” এর মাধ্যমে উদ্ভাবন ও ব্যবসায় উদ্যোগের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ভারত সরকার। 

প্রফেসর ইউনূস অটল ইনোভেশন মিশনের তরুণ পেশাদার কর্মসূচির সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ও তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রফেসর ইউনূস ভারতে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাসোসিয়েশন “সা-ধান” এর ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন এবং সম্মেলন উদ্বোধন করেন। ভারতের ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক, এনজিও, সমবায় সমিতি সা-ধান এর সদস্য।

উল্লেখ্য যে, ভারতের ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় ৫ কোটি যার ৯৯ শতাংশ মহিলা। প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বমোট ঋণের স্থিতি প্রায় ১ লক্ষ কোটি রুপি।

এ বছরের সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু ছিল “ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ।”

প্রফেসর ইউনূস তার ভাষণে গত ২০ বছরে ক্ষুদ্রঋণ খাতের বিপুল প্রসার এবং ব্যাপক সংখ্যক দরিদ্র মানুষের কাছে মানসম্মত ক্ষুদ্রঋণ সেবা পৌঁছে দেবার জন্য সা-ধান -কে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন যে, ক্ষুদ্রঋণ ভারতের গ্রামাঞ্চলে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র নারীকে উদ্যোক্তায় পরিণত করেছে। এটা ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শহরের অর্থনীতির জন্য শ্রম সরবরাহকারীর ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসে বরং শহরের অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবার মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহরে তরুণদের অভিবাসনের গতি কমিয়ে এনেছে।

তিনি আরও বলেন যে, ভারতে ক্ষুদ্রঋণের বিকাশের যে গতি তাতে আগামী পাঁচ বছরে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্য সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে এবং ঋণের স্থিতি এ সময়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের অভিঘাত পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। তিনি ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে যুক্ত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে আর্থিক খাতের বাইরে অন্য খাতগুলো যেমন স্বাস্থ্যসেবা, পানীয় জল, আবাসন, কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, খুচরা বিক্রয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, হস্তশিল্প, গ্রীন এনার্জি ইত্যাদি খাতে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তাদের উদ্যোগ প্রসারিত করতে আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে এসব খাতের বিকাশের উদাহরণ তুলে ধরেন।

এছাড়াও প্রফেসর ইউনূসকে “ফেসবুক ইন্ডিয়া” কার্যালয়ে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রণ জানানো হয় যেখানে তিনি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বিষয়ে তার চিন্তা-ভাবনা এবং আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, অনিয়ন্ত্রিত ও সামাজিক দিক-নির্দেশনাহীন থাকলে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স পৃথিবী থেকে মানবজাতিকে বিলুপ্ত করে দেবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

10h ago