তবুও কোথায় যেন ছন্দের অভাব ব্যাটসম্যানদের
ক্রিস্টোফার এমপুফুর করা ১৯তম ওভারের শেষ বলটি লো ফুলটাস ছিল। চাবুকের মতো ব্যাট ঘুরিয়ে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে সীমানা পার করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এ যেন নিদাহাস ট্রফিতে ইসুরু ইদানাকে মারা তার সেই ছক্কাটার কথা মনে করিয়ে দিল। যে ছক্কায় শ্রীলঙ্কাকে তাদের ঘরের মাঠে দর্শক বানিয়ে ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। শুধু এ শটটিই নয়, এদিন শুরু থেকেই বেশ সাবলীল ব্যাট করেছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু দলের বাকী ব্যাটসম্যানরা এঁকেছেন সেই একই হতাশার ছবি।
আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চড়ে সাগরিকায় নতুন ইতিহাস হলো বাংলাদেশের। জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ল টাইগাররা। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও দলীয় সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড। তাতে পূরণ হয়েছে রানের চাহিদা। অনেক দিন থেকেই যা দেখতে পাচ্ছিলেন না দেশের ক্রিকেটভক্তরা। কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা কমতি থেকে গেল টাইগারদের ব্যাটিংয়ে। কোথায় যেন ছন্দের অভাবটা ফুটে উঠল প্রচ্ছন্নভাবে।
অথচ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল এদিন ব্যাটিং স্বর্গ। আর এমনটা যে হতে যাচ্ছে তা আগের দিনই বলেছিলেন চট্টগ্রামের সহকারী কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু। এ মাঠের প্রথাগত এ উইকেটে রান দুইশ স্পর্শ করবে বলেই ধারণা দিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে মাহমুদউল্লাহও বললেন একই কথা। কিন্তু তারপরও ২০/২৫ রান করে হয়তো জিম্বাবুয়ের কাছে পার পাওয়া গেছে। অপেক্ষা শক্তিশালী আফগানিস্তানের বিপক্ষে কতোটা পার পাওয়া যাবে তা সময়ই বলে দেবে।
এদিন দারুণ সূচনা পেয়েছিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু আউট হলেন যেন কিছুটা খামখেয়ালীপনায়, কিছুটা দুর্ভাগ্যবশত। লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন। শটও ছিল বাজে। তাতে ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় শূন্যে। অবশ্য সে ক্যাচটি অসাধারণ দক্ষতায় ধরেছেন ফিল্ডার নেভিল মাডজিভা। উল্টো দিকে প্রায় ২০ গজ দৌড়ে ক্যাচ লুফেছেন তিনি।
অভিষিক্ত নাজমুল হোসেন শান্ত যেভাবে আউট হলেন তাতে তার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন যে কেউ। যথারীতি আবারও ব্যর্থ। টেস্ট ও ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টির অভিষেকটাও হলো বিবর্ণ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান উইকেটে নেমেই আনাড়ির মতো ব্যাট চালিয়েছিলেন। সে বলে আউটও হয়েছিলেন। সৌভাগ্য তার, সে বলে আবেদন করেননি জিম্বাবুইয়ানরা। তবে আউট হয়েছেন আরও বেশি আনাড়ি এক শটে। ফিল্ডারকে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়েছেন তিনি।
রান পেয়েছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমও। স্কোরবোর্ডে তার নামের পাশে দেখাচ্ছে ৩২ রান। কিন্তু এ রান করতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। বারবারই পূর্ব পরিকল্পিত শট করেছেন গলির ব্যাটসম্যানদের মতো। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ। শেষ পর্যন্ত আউটও হয়েছেন পূর্ব পরিকল্পিত এক শটে। আবার এর মাঝে এর মাঝে জীবনও মিলেছে।
ম্যাচের শুরুতেই এদিন কিছুটা চমক উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ। স্কোয়াডে নেওয়া দুই তরুণকেই অভিষেক করায় তারা। তবে ব্যাটিং অর্ডারের নতুন কোন চমক উপহার দেয়নি দলটি। যেটা মিরপুরে দেখা গিয়েছিল। মুশফিকুর রহিম তো ওপেনার বনে গিয়েছিলেন। প্রথাগত প্রথায় হেঁটেছেন অধিনায়ক। দিনশেষে রেকর্ড সংগ্রহে জয়ও মিলেছে। ফাইনালের টিকেটও মিলেছে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে সেই আত্মবিশ্বাসের অভাবটা রয়ে গেছে আগের মতোই।
Comments