গ্রামবাসীদের জন্য ফ্রি কমিউনিটি সেন্টারসহ মোয়াজ্জেমের নানা উদ্যোগ
নিজ জমিতে এবং নিজ অর্থে গ্রামবাসীদের জন্য ফ্রি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করেছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কদিম হামজানী গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী মোয়াজ্জেম হোসেন (৭২)। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই কমিউনিটি সেন্টারটিতে এলাকার যে কেউ বিয়েসহ যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেন বিনা ভাড়ায়।
তিন হাজার তিনশো স্কয়ার ফিট আয়তনের সদৃশ এই কমিউনিটি সেন্টারে রয়েছে হলরুম, অনুষ্ঠান মঞ্চ, আলাদা একটি কক্ষ, ঝকঝকে টাইলস করা একাধিক ওয়াশরুম কাম বাথরুম আর রান্নার কাজের জন্য রয়েছে কিচেন রুম।
মোয়াজ্জেম বলেন, “এখানে তারা শুধু ফ্রি স্পেসটা পায়। চেয়ার-টেবিল এবং অন্যান্য ডেকোরেটর সামগ্রী তাদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে হয়। তবে লাইট, ফ্যান এবং পানির খরচটা আমিই বহন করি।”
কৃষক পিতার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার বড় মোয়াজ্জেম। ১৯৭২ সালে বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে পরের বছরই উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগে চাকরিতে যোগ দেন।
চাকরি জীবনে পূর্ণ সৎ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ২০০৯ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। চাকরি জীবনে সঞ্চয় করা টাকা (প্রভিডেন্ট ফান্ড) দিয়ে পৈতৃক ভিটায় বাড়ি তৈরি করে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি।
পরে গ্রামের পৈতৃক এবং নিজের ফসলি জমিজমা যা ছিলো সব বিক্রি করে সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ২০১৪ সালে বসতবাড়ির পাশে পতিত জমিতে কমিউনিটি সেন্টারটি তৈরি করেন।
কমিউনিটি সেন্টার কেনো করলেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম জানান, কখনও কখনও গ্রামে মানুষের বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে যেতে হয়েছে। সেখানে অধিকাংশ বাড়িতেই দেখেছেন অনুষ্ঠান আয়োজনের জায়গা নেই। তখন থেকেই ভেবেছেন গ্রামের মানুষের জন্য তার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে একটি ফ্রি কমিউনিটি সেন্টার করবেন।
“বছর দুয়েক আগে গ্রামের এক দরিদ্র হিন্দু লোকের (কার্তিক পাল) মেয়ের বিয়েতে দুর এলাকা থেকে বরপক্ষ এসেছে। কিন্তু এতগুলি মানুষকে কোথায় বসতে দেবে সে, পাঁচজন লোক বসারও জায়গা নেই তার ছোট্ট বসত বাড়িটিতে। মাত্র কয়েকদিন আগে আমি কমিউনিটি সেন্টারটার কাজ শেষ করেছি। তখনও কাউকে জানাইনি ভবনটা আমি কেনো করেছি। আমি কার্তিককে ডেকে বললাম তোমার মেহমানদের আমার এখানে নিয়ে এসো। আমার এই কমিউনিটি সেন্টারে তোমার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করো। ওরা আসলো। দুদিন ধরে চললো সেই বিয়ের অনুষ্ঠান। হিন্দু বিয়ের ঢাক আর বাজনার শব্দে গ্রামের এবং আশেপাশের অনেক মানুষ সেখানে ভিড় জমিয়েছিলো। আর তা দেখে আনন্দ আর সন্তুষ্টিতে আমার হৃদয়টা ভরে গিয়েছিলো”, বলেন তিনি।
তিনতলা পাকা ভবনের নীচতলায় কমিউনিটি সেন্টার। ভবনের উপরের দুটি তলা অবশ্য মোয়াজ্জেম খালি রেখেছেন এই আশায় যে- সেখানে গ্রামের মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন।
মোয়াজ্জেম বলেন, “কবে হাসপাতালটি বাস্তবায়ন হবে জানিনা, তবে আমি স্থাপনা নির্মাণ করে গেলাম। আমার বড় ছেলেটা ডাক্তার, এখন ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে কর্মরত আছে। সে বলেছে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন আয়োজনে কমপক্ষে দুই/তিন কোটি টাকা লাগবে। তাই আপাতত এটা করা সম্ভব না। ছেলেটা এখন যদিও হাসপাতালটি চালু করতে পারছে না, ভবিষ্যতে হয়তো পারবে। আর সে যদি নাই পারে, অন্য কোনো সহৃদয় ব্যক্তি যদি করতে চায় সেখানে করতে পারবে।”
হাসপাতাল চালু করতে না পারলেও ছেলেকে মোয়াজ্জেম বলেছিলেন- প্রতি সপ্তাহে একবার এসে গ্রামের মানুষের ফ্রি ট্রিটমেন্ট করতে। ছেলেও প্রতি শুক্রবার যান। তিনি অর্থপেডিক্সের ডাক্তার, কিন্তু গ্রামের সব ধরনের রোগীই তার কাছে চিকিৎসা নিতে যান।
“বিনা ফি-তে দেখার কারণে গ্রামের সুস্থ লোকরাও আসে। একদিনে এত রোগী সে দেখতে পারে না। তাই প্রকৃত রোগীরাই যাতে আসে, সেজন্য তাকে কিছুদিন হলো রোগী প্রতি ১০০ টাকা ভিজিট নিতে বলেছি। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ রোগীদের যাতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছি”, বলেন মোয়াজ্জেম।
কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই বড়সড় একটি পুকুর কেটেছেন মোয়াজ্জেম। তৈরি করেছেন পাকা ঘাট। তিনি বলেন, “শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি থাকে না, তাই গ্রামের মানুষের গোসলের সুবিধার্থে পুকুরটা কেটেছি।”
পুকুরের পাশেই করেছেন গ্রামের মানুষের বসার (পাকা বেঞ্চ) এবং শিশুদের খেলাধুলার (স্লিপার, দোলনা) ব্যবস্থা।
মোয়াজ্জেম বলেন, “কমিউনিটি সেন্টার আর পুকুরটার পাশে খোলা জায়গা এবং মানুষের বসার ব্যবস্থা রেখেছি। গরমের দিনে রাত বারোটা পর্যন্তও সেখানে গ্রামের মানুষ দলবেঁধে বসে হাওয়া খায়। দেখে আমার খুব ভাল লাগে।”
পুকুরপারে অনেকটা জায়গা জুড়ে পাকা বেদীসহ একটা সুদৃশ্য শহীদ মিনারও নির্মাণ করেছেন মোয়াজ্জেম।
“গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েদের দেখতাম কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ফুল দিতে, তাই শহীদ মিনারটা নির্মাণ করেছি ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে। একটু বেশী জায়গা নিয়েই করেছি যাতে সেখানে আলোচনা, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়”, বলেন তিনি।
মোয়োজ্জেম বলেন, “আমি আসলে গ্রামের মানুষের সামান্য সুবিধার জন্য এসব করেছি, কারণ মানুষ তো মানুষের জন্যই। তাছাড়া আমার অন্যসব দায়-দায়িত্বও শেষ। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি। পেনশনের টাকা যা পাই, তা দিয়েই আমার আর আমার স্ত্রীর চলে যায়।”
“এসব করতে আমার পৈতৃক এবং নিজের করা জমিগুলি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন বসত বাড়িটা ছাড়া আমার আর কিছু নেই। কিন্তু তাতে কি হয়েছে? জমি দিয়ে আমি আর কী করবো? এসব তো আর সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবো না। পৃথিবীতে এসেছি খালি হাতে, যেতেও হবে খালি হাতে”, বলেন তিনি।
আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতি পালনের অংশ হিসাবে মোয়াজ্জেম তার বাড়ি এবং সংলগ্ন নিজস্ব ভূমিতে এলাকাবাসীর জন্য ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে আয়োজন করে আসছেন বৈশাখী মেলা এবং বাউল গানের আসরসহ নানা জমজমাট আনন্দ আয়োজন। এলাকার কিছু মানুষ অবশ্য শুরুতে বাধ সেধেছিল তাতে। কিন্তু মোয়াজ্জেমের অকাট্য যুক্তি আর দৃঢ়তার কাছে হার মানতে হয়েছে তাদের। গ্রামের জরাজীর্ণ মসজিদটি সংস্কারেও অবদান রেখেছেন মোয়াজ্জেম।
“আমি আসলে লালন ভক্ত একজন মানুষ। ধর্মের নামে গোঁড়ামি আমি পছন্দ করিনা। সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আর ধর্ম সৃষ্টি করেছে মানুষ। তাই যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, আর সব ধর্মের মূল মন্ত্র তো একই। সব ধর্মেই শান্তি আর সম্প্রীতির কথা বলা আছে”, বলেন তিনি।
গ্রামের যুবক পারভেজ মিয়া (৩০) বলেন, “ঘনবসতিপূর্ণ এই গ্রামে মানুষের বাড়িতে অনুষ্ঠান আয়োজনের জায়গা আসলে খুবই কম, তাই মোয়াজ্জেম হোসেনের করা ফ্রি কমিউনিটি সেন্টারটি গ্রামের মানুষের খুব উপকারে আসবে।”
তিনি বলেন, “কমিউনিটি সেন্টারটিতে এপর্যন্ত তিনটি অনুষ্ঠান হয়েছে, তিনটিতেই আমরা ছিলাম।”
পারভেজ আরও বলেন, “গ্রামের মানুষের অসুখ-বিসুখে শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে হাজার টাকা খরচের ব্যাপার। মোয়াজ্জেম হোসেন তার ডাক্তার ছেলেকে দিয়ে গ্রামের মানুষকে প্রায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এতে আমরা গ্রামবাসীরা অনেক উপকৃত হচ্ছি। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা হলে আমাদের আরও সুবিধা হবে।”
গ্রামবাসী আব্দুল জলিল (৬০) বলেন, “সারাদিন মাঠে ঘাটে কাজ করে গ্রামের মানুষ মোয়াজ্জেমের করা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে বসে তাদের ক্লান্তি দুর করে। আমাদের বসার জন্য সিমেন্টের বেঞ্চ বানিয়ে দিয়েছেন মোয়াজ্জেম। মানুষ তো দিন দিন স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে, কে কার জন্য কী করে, সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। মোয়াজ্জেম তো তাও এটুকু করেছে।”
গ্রামের এক গৃহিনী জয়ফুল বেগম (২৫) জানান, মোয়াজ্জেম পুকুর কেটে দেওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। গ্রামের অনেক মানুষ এই পুকুরে গোসল করে।
তিনি বলেন, “বছরে ছয়মাস নদীতে পানি থাকে না, অন্য সময় থাকলেও আমরা মহিলারা তো আর সেখানে যেতে পারি না। গ্রামে আরেকটা পুকুর আছে কিন্তু মোয়াজ্জেম চাচার পুকুরের পানিটা খুবই পরিষ্কার।”
গ্রামের স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র রাহাত (১৪) জানায়, সে এবং তার বন্ধুরা স্কুল থেকে ফিরে দুপুরে মোয়াজ্জেমের পুকুরে সাঁতার কাটে, বিকেল বেলাটা কমিউনিটি সেন্টারে সামনে মাঠে খেলাধুলা করে।
ওর ভাষ্যে, “এখানে যে গাছগুলি আছে আমরা সেগুলির ফল পেড়ে খাই, মোয়াজ্জেম দাদা কিছুই বলে না। তিনি এসব গাছের ফল বাড়িতে নেন না, গ্রামের মানুষদের বিলিয়ে দেন।”
গ্রামের আসলাম মিয়া (৪৫) জানান, মোয়াজ্জেম তার দূর সম্পর্কের ভাই হন। তিনি বেকার ছিলেন তাই মোয়াজ্জেম তাকে কমিউনিটি সেন্টারের সামনে একটু জায়গা দিয়েছেন একটি চায়ের দোকান করার জন্য। যাতে এলাকার মানুষ যারা এখানে এসে বসে, তারা যেনো চা-পান কিনে খেতে পারে। দোকানে একটি টিভিও আছে, মানুষ চা খেতে খেতে বসে দেখে।
মোয়াজ্জেম তার বড় ছেলেটাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়িয়েছেন, ছেলের বউ নিজেও একজন ডাক্তার। ছোট ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে এখন একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করছে। মেয়েকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করার পর বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন, তার স্বামী উপ-সচিব মর্যাদার একজন সরকারী চাকরিজীবী।
“আমার ছিলো ছোট চাকরি, বেতনও ছিলো অল্প। সংসারের নানা খরচ, বাড়ি ভাড়া, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালানো ছাড়াও গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মাকেও কিছু টাকা পাঠাতে হয়েছে। আবার কিছু সঞ্চয়ের অভ্যাসও ছিলো। তাই অধিকাংশ দিন পঞ্চাশ টাকার বেশী বাজার করতে পারি নাই। বড় ছেলের জন্মের আড়াই বছর পর তার জন্য শখ করে বানানো একটি কুর্তা কিছুদিন পরই যত্ন করে তুলে রেখেছি, পরে সেটি আমার মেয়েও পরেছে, ছোট ছেলেটাও পরেছে। কোনো ঈদেই ছেলে-মেয়েদের নতুন কাপড় দিতে পারি নাই, নিজেরাও পড়তে পারি নাই। ঢাকা সড়ক ভবনে যখন চাকরী করেছি বাস ভাড়া বাঁচাতে মোহাম্মদপুরের মেস থেকে হেঁটে অফিস করেছি। সামর্থ্য না থাকায় ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট মাষ্টারের কাছে পড়াতে পারিনি। ক্লাস এইট পর্যন্ত তাদের আমি নিজেই পড়িয়েছি। তারপর তারা নিজেদের চেষ্টায় ষ্টাইপেন্ড বা স্কলারশিপের টাকা দিয়ে এসব খরচ চালিয়ে নিয়েছে”, বলেন মেয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, “চাকরী জীবনে সততার সঙ্গে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে কখনও কখনও সমস্যায় আমাকে পড়তে হয়েছে। তাতে অবশ্য আমার কোনো ক্ষতি হয়নি। আসলে সৎ থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিই মোকাবিলা করা যায়। জীবনে সৎভাবে বাঁচতে গিয়ে কেউ না খেয়েও মরে না, কারো কিছু ঠেকেও থাকে না।”
মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, “আমি গ্রাম ভালবাসি। আর যে কয়টা দিন বাঁচবো গ্রামের মানুষের সঙ্গে থেকে তাদের খেদমত করে যাবো। নিজের জন্য চাওয়ার আর কিছু নেই। আমার ছেলে-মেয়েদেরও বলেছি- চাকরী জীবন শেষে গ্রামে ফিরে আসতে। অবসর জীবনে গ্রামে থেকে গ্রামবাসীদের জন্য কাজ করতে।
মির্জা শাকিল, দ্য ডেইলি স্টারের টাঙ্গাইল সংবাদদাতা
Comments