সাকিবের হাত ধরে কাটল আফগান জুজু
বিশ্বরেকর্ড ধারী হলেও আফগানরা যে অজেয় কোন দল নয় তা আগের দিনই বুঝিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। টানা জয়রথ থামিয়ে দিয়েছে হেসেখেলেই। সে ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে এবার আফগান ডেরায় হানা দিয়েছে টাইগাররাও। ফাইনালের ড্রেস রিহার্সালের ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। অথচ কদিন আগে এই বাংলাদেশকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টিতে টানা জয়ের বিশ্বরেকর্ডটি সমৃদ্ধ করেছিল তারা। এদিন পাল্টা জবাব দিয়ে সাগরিকায় ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে দলটি। আর এর পুরো কৃতিত্বই সাকিব আল হাসানের।
ওয়ানডে ক্রিকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াইয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও টি-টোয়েন্টিতে এ দুই দলের মোকাবেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য আফগানিস্তানের। সেই ২০১৪ সালে এ সংস্করণে প্রথম মোকাবেলায় জিতেছিল বাংলাদেশ। সেবারই শেষ। এরপর আফগানরা এগিয়েছে অনেক। দেরাদুনে গিয়ে তো হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসতে হয় টাইগারদের। মিরপুরে প্রথম পর্বের ম্যাচেও দাপট দেখিয়ে জয়। আফগানরা যেন অধরাই হয়ে যাচ্ছিল। তার উপর টেস্টেও টাইগারদের ঘরের মাঠে দাপুটে জয় তাদেরই। টাইগাররা ছিল পুরো ব্যাকফুটে। অবশেষে আফগান জুজু থেকে বেরিয়ে এলো সাকিব-মুশফিকরা।
লক্ষ্য তাড়ায় অবশ্য ভয়ঙ্কর সূচনায় ছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনার যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন দলের রান মাত্র ১২। লিটন দাস ব্যর্থ। ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্তও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য এখনও পরিপক্ব হয়ে ওঠেন সে জানান দিয়ে গেলেন দিলেন তিনি। তবে সে অবস্থা দলকে টেনে বের করলেন অধিনায়ক অধিনায়ক সাকিব। সঙ্গে পেলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে। এ দুই ব্যাটসম্যান গড়েন ৫৮ রানের জুটি। অবশ্য মাঝে সহজ জীবন পেয়েছেন মুশফিক। ব্যক্তিগত ১৪ রানে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অতিরিক্ত ফিল্ডার নজিব কারাদাই হাতছাড়া করেন সে সুযোগ। তবে জীবন ইনিংস লম্বা করতে পারেননি মুশফিক। এরপর আর ১২ রান করতে পেরেছেন তিনি।
বাংলাদেশকে এদিন ভাগ্যও কিছুটা সঙ্গ দিয়েছে। অষ্টম ওভারে লং অনে মুশফিকের ঠেলে দেওয়া এক বল ফিল্ডিং করতে গিয়ে কিছুটা ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন আফগান অধিনায়ক রশিদ। ফিরে আসেন ১১তম ওভারে। ফিরেই বল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী আরও দুই ওভার অপেক্ষা করতে হয় তাকে। তাতে ইনিংস গড়ার সুযোগ মিলে টাইগারদের। কারণ ১৪তম ওভারে ফিরেই উইকেট পান আফগান অধিনায়ক ফেরান মাহমুদউল্লাহকে। সে ওভারে আবার মাঠে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে খেলা বন্ধ থাকে ১২ মিনিট। এরপরের দুই ওভারে আরও দুটি উইকেট হারায় টাইগাররা। হারের শঙ্কায় তখন দল।
তবে এক প্রান্তে সাকিব ছিলেন অনড়। যেন ভিন্ন পণ করেই নেমেছিলেন অধিনায়ক। সে পণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলেন। ১০৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলের হাল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে ধরেন সাকিব। তুলে নেন নিজের হাফসেঞ্চুরি। তাতেও ক্ষান্ত দেননি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক। ৪৫ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ফলে ৬ বল হাতে রেখেই জয় পায় বাংলাদেশ।
এর আগে টসটা এদিন জিতেছিল বাংলাদেশই। সকালের বৃষ্টি ও রাতের শিশিরের কথা ভেবে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। তবে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করতে পারেনি সতীর্থরা। বোলাররা অবশ্য শুরুতে নিয়ন্ত্রিত লাইন লেংথে বল করেছেন। কিন্তু ফিল্ডিং ছিল যাচ্ছেতাই। ব্যক্তিগত ১ রানে ফিরতে পারতে পারতেন ওপেনার রহমানুল্লাহ। সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে তিনি মিস করেছেন রানআউটের সুযোগও। পরে বোলারদের ধারও কমে। আর সে সুযোগে ৭৫ রানের বিশাল ওপেনিং জুটি পেয়ে বসে সফরকারী দলটি।
হজরতুল্লাহ জাজাইকে (৪৭) ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙেন আফিফ। অভিষেক ম্যাচের পর ফের চলতি টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়ে এদিনই প্রথম বল করার সুযোগ পান এ তরুণ। আর পেয়েই বাজীমাত করেন। প্রথম ওভারেই জুটি তো ভাঙেনই, সঙ্গে নেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আসগর আফগানের উইকেটটিও। তাতেই যেন জ্বলে ওঠে টাইগাররা। দারুণ বোলিং করেছেন বাকী বোলাররাও। আরেক ওপেনার গুরবাজকে (২৯) ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে ১৩৮ রানের বেশি করতে দেয়নি আফগানিস্তানকে। শেষ দিকে এক প্রান্ত ধরে রেখে আফগানদের লড়াইয়ের এ পুঁজি এনে দেন শফিকুল্লাহ (২৩)। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন অধিনায়ক রশিদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৮/৭ (রহমানুল্লাহ ২৯, হজরতুল্লাহ ৪৭, আসগর ০, নজিবুল্লাহ ১৪, নবি ৪, গুলবাদিন ১, শফিকুল্লাহ ২৩*, করিম ৩, রশিদ ১১*; সাইফউদ্দিন ১/২৩, শফিউল ১/২৩, সাকিব ১/২৪, মাহমুদউল্লাহ ০/১৬, মোস্তাফিজ ১/৩১, মোসাদ্দেক ০/১০, আফিফ ২/৯)।
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১৩৯/৬ (লিটন ৪, শান্ত ৫, সাকিব ৭০*, মুশফিক ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৬, সাব্বির ১, আফিফ ২, মোসাদ্দেক ১৯; মুজিব ১/১৯, নাভিন ২/২০, করিম ১/৩১, গুলবাদিন ০/১৬, নবি ০/২৪, রশিদ ২/২৭)।
ফলাফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।
Comments