রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও পরিচয়ে দুর্নীতির শেকড় আরও গভীরতর: টিআইবি
ছাত্র ও যুবনেতাদের একাংশের দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে, তাকে ‘হিমশৈলের চূড়ামাত্র’ আখ্যায়িত করে সর্বাত্মক জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি বলছে, চলমান অভিযান উৎসাহব্যঞ্জক ও জনমনে প্রত্যাশার সৃষ্টি করবে, তবে এর ফলে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণে কী ফল পাওয়া যাবে তা নির্ভর করবে এটি কতটুকু সর্বব্যাপী ও টেকসই হয় তার ওপর।
গতকাল (২১ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “দুর্নীতির অভিযোগে কিছু সংখ্যক ছাত্র ও যুবনেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রেক্ষিতে যে লোমহর্ষক চিত্র সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। মূলত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্নীতির শেকড় আরও গভীরতর ও ব্যাপকতর।”
দুর্নীতির যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে তা হতাশাব্যঞ্জক হলেও অবাক করার মতো কিছু নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলছেন, “ক্ষমতায় কোনো দল অধিষ্ঠিত তা নির্বিশেষে দেশে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও ক্ষমতার অবস্থানকে জনস্বার্থের জলাঞ্জলির বিনিময়ে নিজেদের সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক ছিলো যে, এর ফলে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেশকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাবে। রাজনীতি, ব্যবসা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের দুর্নীতিবান্ধব যোগসাজশ সমাজের সকল পর্যায়ে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। এখন জরুরি, কাউকে ছাড় না দেওয়া, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যেকোনো পর্যায়ের অবস্থান ও পরিচয়ে প্রভাবান্বিত না হয়ে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা।”
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে যে উৎকণ্ঠাজনক চিত্র সামনে এসেছে, তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। চলমান এ অভিযানের ব্যাপ্তি ও প্রসার অন্যান্য খাত এবং পর্যায়ে বিস্তৃত করতে পারলে একই চিত্র উদঘাটিত হবে। রাজনৈতিক সংস্রবপ্রসূত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু রাজধানী ও এর আশেপাশের যুব ও ছাত্রনেতাদের একাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিস্তৃত দেশব্যাপী সকল পর্যায়ে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিসহ মূল রাজনৈতিক দল ও দলের অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম অঙ্গসংগঠনের একাংশে। প্রকৃতপক্ষে, ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক্ষেত্রে তাদের মূল দলের অগ্রজদেরই অনুসরণ করে থাকে, যারা এক্ষেত্রে তাদের এই চর্চার রোল মডেল।”
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ মর্মে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার মধ্যেই মূলত সর্বব্যাপী জবাবদিহিতার গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। ইতোপূর্বে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সম্প্রতি দলীয় পরিচয় ও পদের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর ও অনমনীয় অবস্থান ব্যক্তির পরিচয় ও দলীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান নির্বিশেষে যথাযথভাবে পরিপালন হলেই কেবল প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
একইসঙ্গে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সংশ্লিষ্ট খাতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের একাংশের অংশগ্রহণ, রক্ষকের ভূমিকা ও যোগসাজশ ব্যতীত এ জাতীয় দুর্বৃত্তায়ন সম্ভব নয় বিধায়, সংশ্লিষ্ট সকল সকল প্রতিষ্ঠানেও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জড়িতদের একইভাবে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত শুদ্ধাচার, নিরপেক্ষতা ও উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে বলে মনে করে টিআইবি।
Comments