ফিফার বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতি অভিযোগের নাটকীয় মোড়
২০১৯ সালের বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচনে কে কাকে ভোট দিয়েছেন সেই তালিকা ফিফা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার পর থেকেই উঠেছে বিতর্কের ঝড়। ভোট জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীদের মধ্যে অন্যতম নিকারাগুয়ার হুয়ান ব্যারেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি জানিয়েছিলেন, এবার ভোটই দেননি। অথচ ফিফা প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে, নিকারাগুয়ার অধিনায়ক হিসেবে ব্যারেরা প্রথম ভোটটি দিয়েছেন লিওনেল মেসিকে, এরপর যথক্রমে সাদিও মানে ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে বেছে নিয়েছেন তিনি!
ব্যারেরা স্থানীয় সংবাদপত্র লা প্রেনসার কাছে বলেছিলেন, গেল বছর তিনি মেসিকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার মেসিকে কেন, কাউকেই তিনি ভোট দেননি। কারণ ফিফার পক্ষ থেকে কোনো ই-মেইল লিংকই পাঠানো হয়নি তার কাছে!
এমন অভিযোগের পর ফিফার নড়েচড়ে বসাটা স্বাভাবিক। পুরো ভোটিং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা তো তাদেরই কাজ। এর সঙ্গে জড়িত সংস্থাটির মান-মর্যাদা-নিরপেক্ষতাও। ব্যারেরা অভিযোগ তোলার পর ফিফার একজন মুখপাত্র আগের দিন (২৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন এফসিকে জানান, তাদের তরফ থেকে কোনো ধরনের ভুল হয়নি, ‘নিকারাগুয়ান এফএ ভোটের যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছে আমরা সেসব যাচাই করে দেখেছি। কাগজপত্রগুলো স্বাক্ষরিত এবং নিকারাগুয়ান এফএ'র অফিসিয়াল স্ট্যাম্প দ্বারা অনুমোদিত।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা নিশ্চিত করছি যে, খেলোয়াড় স্বাক্ষরিত সঠিক তালিকাই ফিফা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা নিকারাগুয়ান ফুটবল ফেডারেশনকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি।’
ফিফার নির্দেশের পর মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়ার ফুটবল কর্তারা তাদের পাঠানো কাগজপত্রগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। আর এতেই ঘটনা নিয়েছে নাটকীয় মোড়। কেননা ভুলটা ফিফা করেনি। বরং গোলমালটা বাঁধিয়েছে নিকারাগুয়ার ফেডারেশনই!
নিকারাগুয়ান এফএ'র পক্ষ থেকে রাতে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভোট আসলে ব্যারেরা দেননি। দিয়েছেন দলটির নবনির্বাচিত অধিনায়ক লেফট-ব্যাক মানুয়েল রোজাস। তিনি যথক্রমে মেসি, মানে ও রোনালদোকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ভোটিং ফর্মে ভুলক্রমে ব্যারেরার নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে যা বছরখানেক আগে থেকেই ফাইলে ছিল! এর জন্য দায়ী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার কথাও জানিয়েছে তারা।
তবে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখানেই থামছে না, সেটা নিশ্চিত। কারণ সুদানের কোচ ড্রাভকো লোগারুসিচের দাবি, বদলে দেওয়া হয়েছে তার ভোট। তিনি মেসিকে ভোট দেননি। অথচ ওয়েবসাইটে তা-ই দেখানো হচ্ছে। আগের দিন নাইরোবি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভও ঝেড়েছেন তিনি, ‘আমি প্রথম স্থানে সালাহকে ভোট দিয়েছি, দুইয়ে সাদিও মানে এবং তিনে কিলিয়ান এমবাপেকে। ভোটের আবেদনপত্রের একটি ছবিও তুলে রেখেছিলাম। কিন্তু এরপর কীভাবে এমনটা হয়েছে জানি না।’
অন্যদিকে, মিশরের ভারপ্রাপ্ত কোচ শাউকি ঘারিব এবং অধিনায়ক আহমেদ এলমোহামাদি ২০১৯ সালের বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন নিজ দেশের সেরা তারকা মোহামেদ সালাহকে। কিন্তু ফিফা জানিয়েছে, তাদের ভোটগুলো বাতিল করা হয়েছে। কারণ ভোটিং ফর্মে তারা ক্যাপিটাল লেটারে (বড় হাতের অক্ষরে) স্বাক্ষর করেছিলেন!
উল্লেখ্য, ৪৬ র্যাঙ্কিং পয়েন্ট নিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ফিফার বর্ষসেরা হয়েছেন বার্সেলোনার মেসি। ৩৮ র্যাঙ্কিং পয়েন্ট নিয়ে তার পরেই আছেন লিভারপুলের ভার্জিল ভ্যান ডাইক। তৃতীয় স্থানে থাকা জুভেন্টাসের ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর র্যাঙ্কিং পয়েন্ট ৩৬।
Comments