কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের দাবি টিআইবির

পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০৩০ সালের মধ্যে বন্ধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে ক্রমান্বয়ে শতভাগে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের বরাদ্দ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশসমূহের প্রতিশ্রুত তহবিল সংগ্রহে আরও সক্রিয় হওয়া এবং এ খাতে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহে কার্যকর জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
TIB.jpg
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট’ এর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০৩০ সালের মধ্যে বন্ধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে ক্রমান্বয়ে শতভাগে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের বরাদ্দ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশসমূহের প্রতিশ্রুত তহবিল সংগ্রহে আরও সক্রিয় হওয়া এবং এ খাতে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহে কার্যকর জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট’ এর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ আহ্বান জানায় টিআইবি।

মানববন্ধনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বিশ্ব রাজনৈতিক ও সরকারি নেতৃত্বের, বিশেষ করে শীর্ষ দূষণকারী দেশসমূহের কাছে আমাদের দাবি- বিশ্ব যে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, মানবসভ্যতা যে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, তার দায় আপনাদের, তার জন্য আপনাদেরই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা আর কোনো ফাঁকা বুলি বা রাজনীতি দেখতে চাই না। বিশ্বকে বাঁচানোর দায় এড়িয়ে যাবেন না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী নিশ্চিতের অঙ্গীকার সততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করুন।”

দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিবেশগত ঝুঁকি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “সারা পৃথিবী যখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসছে তখন সরকার দেশে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর আত্মঘাতী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানী ব্যবহারের সুযোগ থাকার পরও কয়লাভিত্তিক বাণিজ্য স্বার্থের ফাঁদে পা দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন ও জীবিকার জন্য ইতিমধ্যে দৃশ্যমান ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসতে সরকার ও বিনিয়োগকারীদের এখনই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। চীন ও ভারতের মতো যে সকল দেশ নিজ-দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সরে আসছে, তারাই আবার সরকারকে জিম্মি করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।”

সরকারকে নৈতিক দৃঢ়তার সঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহবান জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সরকারকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সকল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে আসার অঙ্গীকার করতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার বহুগুণ বৃদ্ধি করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে উদ্যোগী হতে হবে। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত সর্বনিম্ন কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত; তবে যেভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আগ্রাসী বিকাশ ঘটছে, এটি অব্যাহত থাকলে আমাদেরকেই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে হবে।”

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, “বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড স্থাপনের মাধ্যমে যে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে, তার কার্যকারিতা নিশ্চিতে সচেষ্ট হতে হবে। কারণ শুরুতে এই তহবিলে যে পরিমাণ অর্থের যোগান ও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছিলো, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি তা ক্রমশ কমে আসছে। পাশাপাশি এই তহবিলের আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এমন সব প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অবশ্যই সচেষ্ট হতে হবে। জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে এসব প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে টিআইবি সরকারকে সব রকমভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।”

‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’, ‘আপন ফাউন্ডেশন’, ‘শিশু ফোরাম বাংলাদেশ’, ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার বাংলাদেশ’, ‘লেটস চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর স্বেচ্ছাসেবী ও শিশুরা, টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘ইয়েস’ সদস্যরা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ টিআইবির কর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেন।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নীতি-নির্ধারকরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় পর্যাপ্ত গুরুত্ব প্রদান এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করার সার্বিক প্রেক্ষিতে সুইডিস কিশোরী পরিবেশবাদী এবং অ্যাকটিভিস্ট গ্রেটা থানবার্গ ২০১৮ সালের জলবায়ু সম্মেলনে এককভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০ আগস্ট ২০১৮ থেকে সুইডেনের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের দিন ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত স্কুলে না গিয়ে সুইডিস পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন যা বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। তার অনুপ্রেরণায় এর পরপরই দেশে দেশে স্কুল শিক্ষার্থীরা একই ধরনের বিক্ষোভে সামিল হয়। সেই প্রতিবাদকে কিশোর কিশোরীদের মাঝে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে এ বছর জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক জরুরি সম্মেলনকে সামনে রেখে ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর ১২০টি দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট, গণ-প্রতিবাদ ও র‌্যালির আয়োজন করছে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট বা ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago