আলোচনায় সম্রাট...

রাজধানীর একটি ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানা যায়।
samrat-4_0.jpg
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর একটি ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানা যায়।

তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে গত শুক্রবার গভীর রাত থেকেই আলোচনা চলছে।

যদিও র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন-কাশেম এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান দাবি করেছেন যে, তারা সম্রাটকে গ্রেপ্তার করেননি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, সম্রাটকে নজরবন্দীতে রাখা হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সবুজ সংকেত’ পাওয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলের একটি ফুটবল ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ ব্যবসা চালানোর অভিযোগে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর সম্রাট তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অবস্থান নেন।

সেসময় যুবলীগ সূত্রে জানা যায়, অবৈধ জুয়ার বিরুদ্ধে সরকারের রোষানল থেকে থেকে বাঁচতে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে মরিয়া হয়ে দেশের বাইরে যেতে চাইছেন সম্রাট।

শুরুর দিকে শত শত যুবলীগ কর্মী ও সমর্থকদের দিয়ে নিজের অফিস ভবনটি ঘিরে রাখেন সম্রাট। গত সোমবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে সেখানে অবস্থান করা নেতা-কর্মীর সংখ্যাও কমে আসে।

যুবলীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে সম্রাট তার অফিস থেকে বেড়িয়ে গেছেন এবং তখন থেকেই তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ ওইদিন বিকেল পর্যন্ত তার ফোনটি সচল ছিলো।

সম্রাটের সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের খবর চাউর হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “আপনারা দেখবেন, খুব শিগগিরই দেখবেন।”

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “তার (সম্রাট) সম্পর্কে আপনারা অনেক কিছুই বলছেন। তবে আমরা যেটা বলছি তাহলো- সম্রাট হোক আর যেই হোক, অপরাধ করলে তাকে আমরা আইনের আওতায় নেবো।”

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৪৯ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা গতকাল জানিয়েছেন, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের দেশত্যাগ ঠেকাতে বেনাপোল স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ জানিয়েছে, সম্রাট ও নেপালের ৯ নাগরিক যাতে কোনোভাবেই দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সে জন্য পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকেও নির্দেশনা পেয়েছেন তারা।

এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সম্রাটের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অভিবাসন পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয় সরকার। এছাড়াও তার যাবতীয় ব্যাংক হিসাব তলব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর যুবলীগ, কৃষক লীগ এবং আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ডিএমপির অপরাধ তদন্ত বিভাগের তৈরিকৃত একটি তালিকায় দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগ ও অপর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দ্বারা ‘মতিঝিল ক্লাবপাড়া এলাকায়’ ছয়টি অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিলো।

তালিকা অনুসারে, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার। আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর আ ক ম মমিনুল হক সাঈদ।

সম্রাট ছিলেন ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসার পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ক্যাসিনো ব্যবসা ছিলো ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর যেখানে প্রথম অভিযান চালায় র‌্যাব।

এর আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন যে, সম্রাট ‘ক্যাসিনো’ ব্যবসা চালানোর জন্য জায়গা ভাড়া চেয়েছিলেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বরের পর থেকে অবৈধ ক্যাসিনো, মদের বার এবং স্পা ও ম্যাসাজ সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাব দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করায় পুলিশের ওপর প্রশাসনের আস্থাহীনতা প্রকাশ পাচ্ছে কী না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, “যেহেতু অভিযানটি র‌্যাব শুরু করেছে, সেহেতু ক্যাসিনোর এগুলো (তদন্ত) তারাই করবে।”

আরও পড়ুন:

সম্রাট আটক কী না, জানা যাবে শিগগিরই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সম্রাট আসলে কোথায়?

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago