ফোনালাপ ফাঁস: রাবি উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার সঙ্গে এক নারীর ফোনালাপের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে গত সোমবার রাতে।
C-M-Zakaria-1.jpg
রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া। ছবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার সঙ্গে এক নারীর ফোনালাপের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে গত সোমবার রাতে।

তাতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগে এক চাকরিপ্রত্যাশীর (নুরুল হুদা) স্ত্রীর (তুজ সাদিয়া) সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে দর-কষাকষি করছেন অধ্যাপক জাকারিয়া।

ফোনালাপে যা রয়েছে-

জাকারিয়া: হ্যাঁ, তুজ সাদিয়া। আমি প্রফেসর জাকারিয়া, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর।

তুজ সাদিয়া: আসসালামু আলাইকুম, স্যার।

জাকারিয়া: ওয়ালাইকুমুস সালাম। আচ্ছা মা, একটা কথা বলতো, আমার খুব শুনতে ইচ্ছা, তোমরা কয় টাকা দেওয়ার জন্য রেডি।

তুজ সাদিয়া: স্যার, সত্যি কথা বলতে...

জাকারিয়া: না না, সত্যি কথাই তো বলবা। ওপরে আল্লাহতালা, নিচে আমি।

তুজ সাদিয়া: অবশ্যই, অবশ্যই। স্যার, আপনি যেহেতু তার (নুরুল হুদা) অবস্থা জানেন, আরেকটা বিষয় এখানে স্যার, সেটা হচ্ছে, আপনি হুদার... মানে, এমনিতে সে কতোটা স্ট্রিক প্রিন্সিপালের..., আপনি বোধ হয় এটাও জানেন স্যার, একটু রগচটা ছেলে।

জাকারিয়া: আচ্ছা রাখো রাখো, এখান থেকে কথা বলা যাবে না।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন অধ্যাপক জাকারিয়া।

তাৎক্ষণিক মন্তব্য পেতে তার নম্বরে কয়েকদফা ফোন করে এবং দপ্তরে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে গতকাল বিকালে উপ-উপাচার্য গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়ে বলেছেন, ফাঁস হওয়া অডিও সম্পাদনা করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, “নুরুল হুদা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার ছাত্রজীবনের শুরু থেকে আমি স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দেখভাল করছি। তার লেখাপড়ার চলমান রাখতে তাকে দুটি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারি নুরুল হুদা চাকরি পেতে অসাধু কিছু ব্যক্তির কবলে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছে। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে ইসলামী ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার একটি স্লিপও আমার নজরে আসে। স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে তার এহেন অসাধুকর্ম রোধে খোঁজ নেওয়ার জন্য তার স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলাম। কারণ, হুদার স্ত্রীর বাড়ি সৈয়দপুরে। হুদার স্ত্রী সে সময় ব্যাংক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকারও করে বিস্তারিত বলতে রাজি হয়নি।” 

এ বিষয়ে জানতে নুরুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

মোহাম্মদ নুরুল হুদা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৬৫ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৬০ পান। আইন অনুষদে সেরা হওয়ায় ২০১৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক ও ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেলেও, ২০১৮ সালের সার্কুলারে নিয়োগপ্রাপ্ত হননি।

এই অডিও ফাঁসের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রসংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা গতকাল সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করার ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলে বুধবার পর্যন্ত তা স্থগিত করে।

প্রগতিশীল ছাত্রজোট সংবাদ সম্মেলনে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।

তারা বলেন, “ফাঁস হওয়া ফোনালাপে উপ-উপাচার্যের শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।”

ছাত্র সংগঠন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, “আমরা যখন মশাল মিছিলের প্রস্তুতি নিই, তখন প্রক্টরিয়াল বডি এসে আমাদেরকে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেয়। এরই প্রেক্ষিতে আজ আমরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি।”

দুপুরে আলোচনা শেষে তারা জানায়, উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের কাছে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার দ্রুত অপসারণ দাবি করলে, উপাচার্য জানান যে- তিনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসময় শিক্ষার্থীরা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উপ-উপাচার্যকে দায়িত্বপালন থেকে বিরত রাখার দাবি তুললে, উপাচার্য বলেন- আগে তদন্ত হোক। তারপর যা করার করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক আকতার বানু বলেন, “অডিও রেকর্ডের শেষাংশ (আচ্ছা রাখো রাখো, এখান থেকে কথা বলা যাবে না) শুনে, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে- উপ-উপাচার্য নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ঘটনায় দ্রুত সময়ের মধ্য তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago