অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ হোক ক্যারিয়ারের শুরুতেই

যুগের প্রয়োজনেই জনপ্রিয় হয়েছিলো নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ধারণা, যেখানে বাবা বাইরে কাজ করবেন আর মায়ের দায়িত্ব হবে বাড়িতে থেকে সন্তান লালনপালন করা। কিন্তু, সময় থেমে থাকে না। এখন বাবার পাশাপাশি কাজে যোগ দিয়েছেন কর্মজীবী মা। সন্তান কোনো ডে-কেয়ার বা বাড়িতে কাজের লোকের কাছে বড় হচ্ছে।

যুগের প্রয়োজনেই জনপ্রিয় হয়েছিলো নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ধারণা, যেখানে বাবা বাইরে কাজ করবেন আর মায়ের দায়িত্ব হবে বাড়িতে থেকে সন্তান লালনপালন করা। কিন্তু, সময় থেমে থাকে না। এখন বাবার পাশাপাশি কাজে যোগ দিয়েছেন কর্মজীবী মা। সন্তান কোনো ডে-কেয়ার বা বাড়িতে কাজের লোকের কাছে বড় হচ্ছে।

বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে সন্তান থাকলেও বাইরে কর্মক্ষেত্রে সবসময় দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন না বাবা-মা। ছেলেটি কী করছে, কাজের লোক ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারছে কী না- এসব চিন্তা নিয়ে সবসময়ই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে।

নুসরাত খানের সমস্যাটাও ঠিক এখানেই। বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২৯ বছরের নুসরাত নিজেদের গণ্ডির বাইরে ছোট্ট মেয়েকে রেখে কর্মস্থলে যাওয়ার একমাত্র ভরসা শ্বশুর-শাশুড়ি। কিন্তু, শ্বশুর-শাশুড়ি থাকেন সেগুনবাগিচায়। মেয়ের কথা চিন্তা করে বাসা পাল্টে সেখানে যাওয়াও একটা সমস্যা রয়েছে। তাদের কর্মস্থল গুলশান থেকে জায়গাটা বেশ দূরে। রোজকার যানজট ঠেলে সেখান থেকে কাজে যাওয়াটাও বিশাল ঝক্কির ব্যাপার। এরকম একটা সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়াটাও তার পুরনো স্বপ্ন। আবার শ্বশুরবাড়ির অন্যদের সবাইকে নিয়ে বনানীর দিকে বড় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকাটাও সামর্থ্যের মধ্যে পড়ে না।

কিন্তু, বলা হয়ে থাকে যেখানে সমস্যা সেখানে কোনো না কোনো সমাধানের উপায়ও থাকে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বনানীর ন্যাম ভিলেজে চার বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট কেনার। খরচটা শ্বশুরের সঙ্গে তারা ভাগাভাগি করে নেবেন। দেখা গেলো চার বেডরুমের বাসা ভাড়া নিতে প্রতি মাসে যে টাকাটা লাগতো, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাটের কিস্তি শোধ করতেও সে একই খরচ পড়বে। কিস্তি শেষে ফ্ল্যাটটা নিজের হয়ে যাবে। বাড়তি পাওনা হবে বাচ্চকে বাসায় রেখে নিশ্চিতে কাজে যাওয়া যাবে।

এভাবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিক থেকেই নিজস্ব একটা স্থায়ী ঠিকানা গড়ে নেওয়ার চিন্তাটা যে শুধু এই দম্পতিই করছেন, তা না। বাংলাদেশে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ায় স্থায়ী আয়ের বন্দোবস্ত আছে এমন তরুণদের জন্য বেশ কিছু হোম লোন নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ধরনের সম্ভাব্য ক্রেতাদের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরি করা এরকম অনেক অ্যাপার্টমেন্টও পাওয়া যাচ্ছে আজকাল।

এদিক থেকে জাকি ও জাফরিন হোসেন দম্পতির গল্পটা পুরোপুরি উল্টো। ত্রিশের কোঠার দুজনেরই বসবাস জাকি’র বাবা-মায়ের সঙ্গে। নবদম্পতির ক্ষেত্রে যেমনটা ঠিক দেখা যায় সচরাচর। বিয়ের পাঁচ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন তারা মনোযোগ দিয়েছেন নিজের একটি ঠিকানা তৈরি করার দিকে।

পেছনের ভাবনার কথা বলতে গিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাফরিন বলেন, জাকি’র বাবা-মায়ের সঙ্গে এক বাসায় বেশ ভালো ছিলাম। বাড়ি ভাড়া, ইউটিলিটির মতো বিষয়গুলো নিয়ে চাপমুক্ত থাকতে পারায় বেশকিছু টাকা সঞ্চয় করাও সম্ভব হয়েছে।

তাই নিজের মতো করে একটি বাসায় সেটেল হওয়ার কথা চিন্তা আসে তরুণ এই দম্পতির মাথায়। প্রথমে তারা ভেবেছিলেন গুলশান-১ এ বাবা-মায়ের ফ্ল্যাটের আশপাশে দুই বেডরুমের একটা অ্যাপার্টমেন্টমেন্ট ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু, করপোরেট আইনজীবী জাকি জানান, ওই এলাকার বাসা ভাড়া নেওয়া ছিলো তাদের সামর্থ্যের বাইরে। এরপরই তারা কিছুটা পরিসর বাড়িয়ে বাসা খুঁজতে শুরু করেন। এবার তারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বনানী, মহাখালী ডিওএইচএস ও নিকেতনের মতো এলাকাগুলোকে তাদের বিবেচনার মধ্যে আনেন। এরইমধ্যে বারিধারার একেবারে শেষ প্রান্তে দুই বেডরুমের একটি বাসার সন্ধান পান।

ভাড়া নেওয়ার সুযোগ রাখলেও অ্যাপার্টমেন্টটি বিক্রি করে দেওয়ার কথাও ভাবছিলেন এর মালিক। কারণ বিদেশে থেকে তাদের পক্ষে ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্টের দেখাশোনা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছিলো। তাই হোম লোনের জন্য আবেদন করেন জাকি। লোন পাওয়ার ব্যাপারে শুরুতে কিছুটা আশঙ্কা কাজ করলেও গত মাসে ব্যাংক থেকে সুখবর পান তারা। অল্প বয়সেই বারিধারার মতো এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হয়ে যাওয়ার উত্তেজনা দমন করে জাফরিন জানান, দুজনের পরিবারের দিক থেকেই এ ব্যাপারে তারা পূর্ণ সহযোগিতা পাচ্ছেন।

ইদানীং নতুন কাপলদের বাইরে তরুণ অবিবাহিত পেশাজীবীরাও ঢাকায় এমন অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় ২৭ বছর বয়সী ব্যাংকার সাইফ কালামের কথা। চট্টগ্রামে পরিবার রেখে ঢাকায় আসা সাইফের শুরু থেকেই ঠিকানা ছিলো ভাড়া বাসা। ছাত্রজীবনের পুরোটা সময় পার করার পর ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছে তার ভাড়া বাসায় থেকে। ব্যাংকের কর্মীদের জন্য স্বল্প সুদে অ্যাপার্টমেন্ট কেনার অফার থাকায় সেটা লুফে নিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন শুরুর ডিপোজিটের টাকাটা। সাইফ এখন শুধু মাসিক কিস্তি শোধ করছেন নিকেতনে তার ১২০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের জন্য।

এক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তার পাশের রুমটি সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়ে। ফরাসি যে নাগরিককে তিনি ঘরটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন তিনি আলিয়াঁস ফ্রঁসেজের গুলশান শাখার ভাষা শিক্ষক। আর এতেই কিস্তির টাকা শোধ করতে বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে না তাকে।

এই বয়সেই কেনো অ্যাপার্টমেন্ট কেনার দিকে ঝুঁকলেন?- জানতে চাইলে মার্কিন শিল্পপতি স্টিল ব্যবসায়ী এন্ড্রিউ কার্নেগিকে উদ্ধৃত করে সাইফ বলেন, “তিনি বলেছেন যে মিলিয়নিয়ারদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ধনী হয়েছেন রিয়েল এস্টেটের মালিক হয়ে। মিলিয়নিয়ার না হলেও অন্তত সম্পদশালী হওয়ার চেষ্টা তো আমি করতেই পারি। আর সেই লক্ষ্যে এটাই আমার প্রথম পদক্ষেপ।”

জিনা তাসরীন, সিনিয়র সাব-এডিটর, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English
PSC question leaks

PSC question paper: Probe body finds no evidence of leaks

AN investigation committee by the Public Service Commission (PSC) to probe allegations of question paper leak has found no evidence of such incident

53m ago