ছাত্রলীগের টর্চার সেল!

কক্ষ নম্বর ২০১১।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পাঁচতলা বিশিষ্ট শেরে বাংলা হলের দুইতলার শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে কক্ষটির অবস্থান।

বাইরে থেকে দেখতে সাধারণ মনে হলেও, শিক্ষার্থীদের কাছে কক্ষটি ‘টর্চার সেল’ এবং ‘পার্টি সেন্টার’ হিসেবেই পরিচিত।

শিক্ষার্থীদের বরাতে জানা গেছে, এই কক্ষে ডেকে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও বাঁশ দিয়ে পেটায় ছাত্রলীগ সদস্যরা।

‘অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যথায়’ আবরার মারা গেছেন বলে ময়নাতদন্তের পর জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) চিকিৎসকরা।

গতকালের ওই ঘটনার পর কক্ষটিতে প্রবেশ করে মদের খালি বোতল, ছুরি ও ক্রিকেট স্ট্যাম্প খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।

কক্ষটিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ সকাল এবং প্রত্যয় মুবিন নামে চারজন থাকেন। প্রত্যয়ের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মিলনস্থল হিসেবে কক্ষটি ব্যবহার করা হতো।

তারা জানান, প্রায় প্রতি রাতেই সে কক্ষে পার্টি চলতো। মাতাল শিক্ষার্থীদের চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যেতো। এতে আশপাশের কক্ষের শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা হলেও, ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পেতো না।

Buet-room-1.jpg
সেই কক্ষে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি: স্টার

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “কক্ষটি ছাত্রলীগের ‘পলিটিক্যাল রুম’ হিসেবে পরিচিত ছিলো। ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে সেখানে আনা হতো এবং নির্যাতন করা হতো।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুয়েটের অপর এক হলের সহকারী প্রাধ্যক্ষ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে ছাত্রলীগের এমন কক্ষ রয়েছে, যেগুলো ‘টর্চার সেল’ হিসেবে পরিচিত।

“এটি দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিতে ছিলো না, কিন্তু গত পাঁচ বছরে ফিরে এসেছে। প্রতিটি হলেই নির্দিষ্ট কিছু কক্ষ থাকে, যেখানে ছাত্রলীগ সদস্যরা থাকেন। সেখানে তারাই সর্বেসর্বা, অন্য কাউকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয় না”, বলেন তিনি।

এই সহকারী প্রাধ্যক্ষ আরও জানান, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বহিরাগত এবং সাবেক শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন হলে থেকে আসছেন।

বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউস সানি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান যে, বুয়েটে কোনো টর্চার সেল নেই।

শিক্ষার্থীদের থাকার কক্ষে ক্রিকেট স্ট্যাম্প, মদের বোতল এবং ছুরি থাকা উচিত কী না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটি হওয়া উচিত নয়। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

Stamp-1.jpg
জব্দকৃত আলামত। ছবি: স্টার

ছাত্রলীগ সদস্যরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর এবং নির্যাতন করে বলে প্রায়শই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ করে আসছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

গত বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ও দাইয়ান নাফিস প্রধান নামে অপর এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির কর্মী’ ট্যাগ দিয়ে পেটানোর পর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলো ছাত্রলীগ সদস্যরা।

আরো পড়ুন:

বুয়েট শাখার ৯ নেতাকে বহিষ্কার করলো ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের জেরার পর বুয়েট শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

আবরার হত্যা: ৯ জন আটক

সিসিটিভি ফুটেজ: আবরারকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়িতে নেওয়া হয়

শিবিরের সঙ্গে আবরারের সংশ্লিষ্টতা ছিল না: পরিবার

দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করুন: ছাত্রলীগ

মতের পার্থক্যের কারণে কাউকে মেরে ফেলা উচিত না: কাদের

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আবরারের শেষ ফেসবুক পোস্ট

আবরারের সমস্ত শরীরে মারধর ও আঘাতের চিহ্ন

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

A captain cannot abandon ship, especially when the sea is turbulent

9h ago