দেশ কীভাবে সোনার বাংলা হবে?

যে দেশের অভিভাবক শেখ হাসিনা, সে দেশে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র রাজনীতির কি খুব বেশি দরকার আছে?
abrar-murder.jpg
বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদের কক্ষে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা বরকত উল্লাহ। ছবি: স্টার/আমরান হোসেন

যে দেশের অভিভাবক শেখ হাসিনা, সে দেশে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র রাজনীতির কি খুব বেশি দরকার আছে?

একজন বুয়েটের স্টুডেন্ট, একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট রাজনীতি করতেই পারে, কিন্তু রাজনীতির কারণে তার সহপাঠী বা বন্ধু বা ছোটভাইকে হত্যা করার মতো নৈতিকতা স্খলিত রাজনীতি কীভাবে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী ছাত্ররা করে? যারা মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করে, তাদের কি মানবিকতা ও মূল্যবোধ আছে? তারা মেধাবী, কিন্তু প্রকৃত মানুষ কি হতে পেরেছে? মেধাবী হয়ে কী লাভ, যদি প্রকৃত মানুষই হতে না পারি?

একজন বুয়েটে পড়ুয়া ছাত্র, তার মা-বাবার তিলে তিলে অনেক কষ্ট, অনেক ত্যাগ, অনেক তিতিক্ষার ফসল। সে একটি পরিবারের স্বপ্ন, সে তার মা-বাবার একটি গর্ব। আবরার ফাহাদের মা যদি আজকে বাংলাদেশকে প্রশ্ন করে, বাংলাদেশ আমার নিরপরাধ ছেলেকে কেনো হত্যা করা হয়েছে? এই জাতির বিবেক কী উত্তর দিবে?

একটি পরিবারের স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছে ছাত্ররাজনীতির হিংসাত্মক তৎপরতা। এক মা-বাবার বুক খালি করেছে এইসব পথভ্রষ্ট ছাত্রনেতারা। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, সর্বোচ্চ মেধাবীদের যেখানে পদচারণা, সেখানেও একজন ছাত্র নিরাপদ নয়। তাহলে কোথায় আপনার সন্তান নিরাপদে থাকবে? কোথায় আপনার সন্তানকে পড়াবেন? কোথায় তার ক্যারিয়ার এবং তার জীবনের নিরাপত্তা আছে? আপনার মনে প্রশ্ন জাগে না? আপনার সন্তানকে নিরাপদ একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে থাকবেন সেই আশ্বাস আপনাকে কে দিবে? এই একটি মৃত্যুই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের নিমিত্তে সামাজিক আন্দোলন তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়?

আমি আমার আগামী প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাই, যেখানে তার সহপাঠী তার আরেক সহপাঠীকে হত্যা করবে না, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে মতামত ব্যক্ত করার অধিকার থাকবে, যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মা-বাবা তার সন্তানকে পাঠিয়ে তার সন্তান ফিরে আসবে কী না এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে না।

আমাকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান দিন যেখানে আমি আমার সন্তানের শিক্ষা, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবো। একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থী ব্যক্তিস্বাধীনতা, নৈতিকতা, সততা এবং দেশপ্রেম বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে সমান তালে শিখবে। ব্যক্তিস্বাধীনতা না থাকলে মানুষের মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটে না, আর মুক্তচিন্তার সঠিক বিকাশ না হলে মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির তৈরি হবে কীভাবে?

একজন বুয়েটের ছাত্রের যদি উদ্ভাবনী শক্তি না থাকে, তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে কীভাবে? যেই রাজনীতি ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী, যে রাজনীতি মুক্তচিন্তাবিরোধী, সেই রাজনীতি আমি চাই না। সেই রাজনীতির উত্তরাধিকারের সম্মান আমি চাই না।

যে দেশে ছাত্রনেতারা তার শিক্ষকের কাছে চাঁদা চায়, সে দেশে ছাত্রনেতাদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। যে দেশের ছাত্রনেতারা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দাদা বা ভাই বলে সম্বোধন করে, তাদের পারিবারিক শিক্ষা, সৌজন্যবোধ ও ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন থাকে। এইসব ছাত্রনেতারা যদি ভবিষ্যতে একটি দলের নেতা হয় এবং এই নেতারাই যদি আবার সংসদে গিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে দেশ কীভাবে দুর্নীতিমুক্ত হবে, দেশ কীভাবে সোনার বাংলা হবে?

লেখক: ডা. কাওসার আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ও রেসিডেন্ট

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনোপ্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago