ক্যাম্পাসে ভিন্নমত না থাকায় ভয়ংকর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাজের মডেল হিসেবে উল্লেখ করে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ক্যাম্পাসে যদি ভিন্নমত না থাকে তাহলে তো আমরা ভয়ংকর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি।”
Serajul Islam Choudhury
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাজের মডেল হিসেবে উল্লেখ করে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ক্যাম্পাসে যদি ভিন্নমত না থাকে তাহলে তো আমরা ভয়ংকর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি গতকাল (৭ অক্টোবর) দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

সমাজে ভিন্নমত দাবিয়ে রাখার প্রবণতা সম্পর্কে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এটি খুবই ভয়ংকর। অনেক বছর বুয়েট থেকে এমন খবর আমরা পাইনি। সেখানে শান্ত পরিস্থিতি ছিলো। হলের মধ্যেই ছেলেটি খুন হয়েছে।… একই প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করছে। একই (আবাসিক) হলে আছে। তাকে এভাবে হত্যা করলো- সে তো ফেসবুকে তার মত প্রকাশ করেছে। একটা মত তো দিতেই পারে। নানান জনের নানা মত থাকবেই।”

তার মতে, “এগুলো প্রমাণ করে আমাদের সমাজে টলারেন্স এখন নিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে।”

“আরেকটি কারণ আমি সবসময়ই মনে করি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিবেশটা মোটেই সুস্থ না। এর কারণ হচ্ছে, এখানে ভিন্নমত নেই। এখানে যেটা হয় সেটা হলো যে সরকারি দলের আধিপত্য, তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে।… যদি সেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকতো তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না।”

“সবসময় দেখে এসেছি, আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিষ্ণুতা থাকে, গণতন্ত্রের চর্চা থাকে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থাকে। সেখানে প্রতিবছর নির্বাচন হয়। মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে পারে। গত ২৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো নির্বাচন হয় নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নির্বাচন হলো- এটাও যে খুব একটা পারফেক্ট হয়েছে তা কিন্তু নয়।”

“আমি মনে করি সমাজে তো অসহিষ্ণুতা আছেই। ভিন্নমত সহ্য করাই হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি ভিন্নমত না থাকে তাহলে তো ভয়ংকর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা শাস্তি দেওয়া- এগুলোর মাধ্যমে প্রতিকার হবে না। ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশের মাধ্যমে সহিষ্ণুতা গড়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো সমাজের মডেল। সেখানে এরকম ঘটনা ঘটলে আমাদের আর আশা করার কিছুই থাকে না।”

সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ভিন্নমত দমনে বেশি সক্রিয় থাকে? এই পরিস্থিতি বদলানোর কোনো পথ নেই?- “সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ধরনের কাজগুলো হয়ে থাকে। সরকারি দলের দায়িত্ব রয়েছে তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারি দল তার অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না- এটি খুবই দুঃখজনক।”

“অপরাধ করলে শাস্তিতে দিতেই হবে। কিন্তু, আমি মনে করি, শুধু শাস্তি দিয়েই এসব অপরাধ দূর করা যাবে না। ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটে তাহলে আমাদের আশা করার আর জায়গা থাকে না।”

আরো পড়ুন:

ছাত্রলীগের টর্চার সেল!

বুয়েট শাখার ৯ নেতাকে বহিষ্কার করলো ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের জেরার পর বুয়েট শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

আবরার হত্যা: ৯ জন আটক

সিসিটিভি ফুটেজ: আবরারকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়িতে নেওয়া হয়

শিবিরের সঙ্গে আবরারের সংশ্লিষ্টতা ছিল না: পরিবার

দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করুন: ছাত্রলীগ

মতের পার্থক্যের কারণে কাউকে মেরে ফেলা উচিত না: কাদের

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আবরারের শেষ ফেসবুক পোস্ট

আবরারের সমস্ত শরীরে মারধর ও আঘাতের চিহ্ন

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago