বুয়েটে বুধবারের দুঃস্বপ্ন

বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয় বৃহস্পতিবার থেকে। বুধবার সন্ধ্যা এলে অন্তত দুদিনের জন্যে ক্লাস-পরীক্ষার চাপ কমে যায় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু, বুধবার সন্ধ্যা আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের জন্যে নিয়ে আসে অন্য এক আতঙ্ক।
BUET torture cell
সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয় বৃহস্পতিবার থেকে। বুধবার সন্ধ্যা এলে অন্তত দুদিনের জন্যে ক্লাস-পরীক্ষার চাপ কমে যায় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু, বুধবার সন্ধ্যা আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের জন্যে নিয়ে আসে অন্য এক আতঙ্ক।

ছাত্রলীগের নেতারা যখন-তখন শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের গণরুমে ডেকে বসতে পারেন। তখনো তাদের ডাক পড়ে আবাসিক হলের ছাদে।

সেখানে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্যাতনের শিকার হন অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী। র‌্যাগিংয়ের নামে তাদের ওপর চালানো হয় অত্যাচার। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে ব্যর্থ হলে সেই অত্যাচার মাত্রা বেড়ে যায়।

দেশের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেসব অত্যাচারের ঘটনা সামনে চলে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করার পর।

অভিযোগ উঠেছে- ছাত্রলীগের নেতারা শেরে বাংলা হলে ৬ অক্টোবর (বুধবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৭ অক্টোবর ভোররাত আড়াইটার মধ্যবর্তী সময়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

৮ অক্টোবর সারাদিন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এই হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে একটি ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

বুয়েটের আটটি আবাসিক হলের মধ্যে সাতটি হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ছাত্রলীগের নেতাদের অত্যাচার-নির্যাতনের কাহিনি। তবে ছাত্রলীগের নেতাদের প্রতিশোধের ভয়ে তারা কেউেই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

শেরে বাংলা হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “গণরুমে ঢুকেই প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হলো ছাত্রলীগের বড়ভাইদের সালাম দেওয়া। তারপর, তারা আমাদের বিভিন্ন ‘কাজ’ দেন।”

সেসব ‘কাজ’ কী?- তিনি বলেন, “কখনো তারা আমাদের গান গাইতে বা নাচতে বাধ্য করেন। কখনো আমাদের অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করতে নির্দেশ দেন।”

হলের অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, একদিন ভোররাত ২টার দিকে প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ তাকে গণরুমে যেতে হয়। “পরদিন সকালে আমার ক্লাস টেস্ট ছিলো। তারপরও আমাকে সেখানে যেতে হলো। কেননা, এছাড়া আমার কিছু করার ছিলো না। যদি না যেতাম তাহলে তারা (ছাত্রলীগের নেতারা) আমাকে হলে থাকতে দিতো না।”

তিতুমীর হলের এক ছাত্র জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারলে ছাত্রদের মারধর করা হতো। এমনকী, ছাত্রলীগ মিছিল বের করলেও সেখানে অংশ নিতে হয়।

তিনি বলেন, “২৬ মার্চ ছাত্রলীগের নেতারা প্রতিটি রুমে আসে এবং সবাইকে মিছিলে অংশ নিতে নির্দেশ দেয়। জ্বর থাকায় আমি যেতে পারিনি। কিন্তু, সেই সন্ধ্যায় আমাকে হলের ছাদে ডাকা হয়। আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সেখানে গিয়ে দেখি অন্তত ৩০ জন ছাত্র লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।”

“আমার হলের সাত-আটজন ছাত্রলীগের নেতা সেখানে ছিলো। তাদের দুজন হঠাৎ করে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করে। সাহায্যের জন্যে চিৎকার করলেও কেউ আমাদের দিকে এগিয়ে আসেননি।” তিনি আরো বলেন, “আমাদেরকে সকাল পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো। একটু পানিও খেতে দেওয়া হয়নি।”

বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগিং নতুন কিছু নয়। কিন্তু, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ হলগুলো দখল করার পর গত চার-পাঁচ বছরে র‌্যাগিং ভয়ানক রূপ ধারণ করে।

ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারার প্রবণতা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পেয়ে বসেছে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।

ছোট-খাটো বিষয় নিয়েও ছাত্রদের গালি-গালাজ, অপমান করা হয় উল্লেখ করে তারা আরো জানান, প্রতিটি হলে ছয়-সাতজন ছাত্রলীগ নেতা এসব অত্যাচার-নির্যাতনের জন্যে দায়ী।

(সংক্ষেপিত, পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই Wednesday Nightmare লিংকে ক্লিক করুন)

আরো পড়ুন:

ছাত্রলীগের টর্চার সেল!

বুয়েট শাখার ৯ নেতাকে বহিষ্কার করলো ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের জেরার পর বুয়েট শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

আবরার হত্যা: ৯ জন আটক

সিসিটিভি ফুটেজ: আবরারকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়িতে নেওয়া হয়

শিবিরের সঙ্গে আবরারের সংশ্লিষ্টতা ছিল না: পরিবার

দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করুন: ছাত্রলীগ

মতের পার্থক্যের কারণে কাউকে মেরে ফেলা উচিত না: কাদের

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আবরারের শেষ ফেসবুক পোস্ট

আবরারের সমস্ত শরীরে মারধর ও আঘাতের চিহ্ন

ক্যাম্পাসে ভিন্নমত না থাকায় ভয়ংকর অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago