খেলা

ফুটবলে বাংলাদেশের নবযাত্রা

বাংলাদেশের ফুটবল মৃতপ্রায়। এমন কথা শোনা যায় হরহামেশাই। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকের ফুটবলে যে জৌলুস ছিল, সেসব স্মৃতি হাতড়ে আফসোস আর আক্ষেপ করতে দেখা যায় অনেককেই। না চাইতেও চলে আসে সে সময়ের সঙ্গে এ সময়ের ফুটবলের তুলনা। আর তরুণ প্রজন্মের কাছে দেশের ফুটবলের সোনালি দিন কেবলই রূপকথার গল্প যেন! তবে ইংলিশ কোচ জেমি ডের অধীনে গেল দেড় বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে সবমিলিয়েই। বিশেষ করে শেষ দুটি ম্যাচে কাতার ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের নৈপুণ্য নজর কেড়েছে সবার। তাতে আশার পালে লেগেছে হাওয়া। তবে কী জোয়ার আসছে দেশের ফুটবলে? সুদিন ফেরার ইঙ্গিত কী তবে মিলতে শুরু করেছে?
football_reactions
(বাঁ থেকে) মারুফুল হক, সাইফুল বারী টিটু ও জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ফুটবল মৃতপ্রায়। এমন কথা শোনা যায় হরহামেশাই। আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকের ফুটবলে যে জৌলুস ছিল, সেসব স্মৃতি হাতড়ে আফসোস আর আক্ষেপ করতে দেখা যায় অনেককেই। না চাইতেও চলে আসে সে সময়ের সঙ্গে এ সময়ের ফুটবলের তুলনা। আর তরুণ প্রজন্মের কাছে দেশের ফুটবলের সোনালি দিন কেবলই রূপকথার গল্প যেন! তবে ইংলিশ কোচ জেমি ডের অধীনে গেল দেড় বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে সবমিলিয়েই। বিশেষ করে শেষ দুটি ম্যাচে কাতার ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের নৈপুণ্য নজর কেড়েছে সবার। তাতে আশার পালে লেগেছে হাওয়া। তবে কী জোয়ার আসছে দেশের ফুটবলে? সুদিন ফেরার ইঙ্গিত কী তবে মিলতে শুরু করেছে?

জেমি বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন গেল বছরের মে মাসে। তার অধীনে এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচ খেলে জয়ের পাল্লা ভারী দলের। ৭টিতে জিতেছে তারা, হেরেছে ৬টিতে। ড্র হয়েছে বাকি ২টি ম্যাচ। আরেকটি লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, এই ম্যাচগুলোতে গোল হজমের তুলনায় গোল করার পরিসংখ্যানেও এগিয়ে বাংলাদেশ। তারা প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছে ১৩ বার, বিপরীতে গোল হয়েছে ১১টি।

এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে- বাংলাদেশের খেলায় উন্নতির ছাপ। আরেকটি বিষয় হলো, পরিকল্পনা অনুসারে নিজস্ব ঘরানার ফুটবল খেলতে শুরু করেছে দল। এক বাক্যে এটা মেনে নিচ্ছেন ঘরোয়া ফুটবল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা আসা অভিজ্ঞ স্থানীয় কোচরা। কাতার ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মারুফুল হক, সাইফুল বারী টিটু ও জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। এই দল নিয়ে নতুন করে দারুণ কিছু অর্জনের স্বপ্ন দেখার রসদ যেমন তারা পাচ্ছেন, তেমনি কিছু শঙ্কার মেঘের আনাগোনাও রয়েছে তাদের মনে। কেবলমাত্র জাতীয় দলের নৈপুণ্য দিয়ে দেশের ফুটবলের সুদিন ফেরানো যাবে না, এর জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, ক্লাবগুলোর কাঠামোগত উন্নয়ন এবং তরুণ ফুটবলারদের বেড়ে ওঠার জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, এমনটাই মনে করছেন তারা।

Bangladesh football team
ছবি: এএফপি

‘এটা অবশ্যই, একটা নতুন সময়ের শুরু। তবে খেলোয়াড়দের মাথায় রাখতে হবে, কখনও সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না। আগের ম্যাচে যেমন খেলেছি, পরের ম্যাচে আরও ভালো খেলার তাগিদ থাকতে হবে। এটা শুধু খেলোয়াড়দের না, কোচদেরও থাকতে হবে। আপনি যখন ভালো খেলবেন, তখন প্রশংসা আসবেই। এর মধ্যেই আপনাকে ফোকাস ধরে রাখতে হবে। এটা অবশ্যই ভালো কিছুর শুরু। তবে এটাকে টেকসই করতে হবে। তবে উন্নতির জন্য আরও অনেক কিছু দরকার। যেমন- কোচ এডুকেশন। সারাজীবন তো বিদেশি কোচের ওপর নির্ভর করা যাবে না। তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় বের করে আনতে হবে। সেখানে তো বিদেশি কোচ পাওয়া যাবে না। তাই ১৬ কোটি মানুষের মধ্য থেকে ভালো কোচ তৈরি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ভাবতে হবে,’ বাংলাদেশের গেল কয়েকটি ম্যাচ বিশ্লেষণ করার পর এমনটাই বলেছেন জুলফিকার।

বাংলাদেশের সাবেক কোচ সাইফুলের মতে, ‘সুদিন ফেরার ব্যাপারটা পুরোপুরি জাতীয় দলের উপরে নাই। এক্ষেত্রে ক্লাবগুলোর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেজে তারা খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতে পারবে, তখন এটা সম্ভব। জাতীয় দলের ফলটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দর্শকরাও যদি স্থানীয় লিগগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়, সেটাও সুদিন ফেরানোর একটা পথ। তবে আগের সময়ের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে যাওয়াটা আমি ঠিক মনে করি না। কারণ ফুটবলের ধরন অনেক বদলেছে। তুলনায় না গিয়ে এখনকার দল নিয়ে আমরা কী করতে পারি, বিশেষ করে ক্লাবগুলোকে নিজেদের কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে জাতীয় দলের ফল নিয়ে এত ভাবতে হবে না। ভালো খেলোয়াড় স্বাভাবিকভাবেই সেখানে চলে আসবে।’

আরেক অভিজ্ঞ কোচ মারুফুল জানিয়েছেন, ‘এই দল সাফ অঞ্চলের জন্য ঠিক আছে। বাইরে গেলে তাদের সমস্যা হবে। কারণ তাদের যে প্রস্তুতি ও টেকনিক্যাল গ্রুমিংয়ের দরকার ছিল, শুরুর দিকে (বয়সভিত্তিক পর্যায়ে) সেটা হয়নি।...এই দলটা লড়াই করবে, ভালো খেলবে, কিন্তু ফল আসবে না। আমাদের টেকনিক খুবই দুর্বল। টেকনিক ভালো হলে (নাবীব নেওয়াজ) জীবনের দুইটা গোলই হওয়ার কথা (ভারতের বিপক্ষে)। শুধু তার না, সবারই এরকম। যেখানে আমরা গোলটা খেলাম, সেখানে আমাদের ডিফেন্ডাররা দশ গজ দূরে ছিল। তিন ধাপ এগিয়ে থাকলে সেটা হতো না। এগুলো অনবরত হতে থাকবে। আমরা লড়াই করব, শেষ মুহূর্তে গোল হজম করব। আফসোস থাকবে।’

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে টেকনিক নিয়ে কাজ করতে হবে। না হলে আবার হয়তো কিছু ভালো খেলোয়াড় সহজাতভাবেই আসবে। একটা-দুইটা ম্যাচ ভালো খেলবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ভালো কিছু হওয়ার সুযোগ কম। নিচের দিকে (বয়সভিত্তিক) ভালো কিছু করে তারপর জাতীয় দলে ভালো কিছু করতে হবে।’

বাংলাদেশ দলের লক্ষণীয় উন্নতিও অবশ্য ধরা পড়েছে মারুফুলের চোখে, ‘উন্নতির জায়গা আমার কাছে দুইটা মনে হয়েছে। একটা হলো খেলোয়াড়দের ফিটনেস, আরেকটা হলো মানসিকতা। আগে এগুলোর অনেক ঘাটতি ছিল। এই বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তারা। গোল খাওয়ার ভয় না পেয়ে যে ভালো পারফর্ম করা যায়, এটাও উন্নতির জায়গা।’

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সম্প্রতি বাংলাদেশ যে পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে খেলতে নামছে এবং তা প্রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে, সেটা নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত জুলফিকার, ‘আমাদের দলের স্ট্রেন্থ ও প্রতিপক্ষ দলের স্ট্রেন্থ অনুযায়ী গেম প্ল্যান ও স্ট্র্যাটেজি সাজানো হচ্ছে। আমরা যদি ভারতের সঙ্গে ম্যাচটার দিকে দেখি, আমাদের যে ফরমেশন যা ছিল, বল হারানোর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অর্ধে চলে এসেছি। কখনও কখনও সেন্টার ফরোয়ার্ডরা নিচে নেমে এসে মিডফিল্ডের সঙ্গে একটি লাইন তৈরি করেছে। এতে দুটো ব্লক তৈরি হয়। একটা ব্যাক লাইন আরেকটা মিডফিল্ড লাইন। এর মাঝেও আরেকটা ব্লক তৈরি করা হয়েছে কখনও কখনও। এটা খুবই উন্নতির লক্ষণ। তাতে প্রতিপক্ষ এই ব্লকটা ভেঙে খুব সহজে গোল করার সুযোগ তৈরি করতে পারে না।’

যার কোচিংয়ে বদলে যেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ, সেই দীক্ষাগুরু জেমির প্রশংসায় সাইফুল বলেছেন, ‘কেবলমাত্র বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নয়, জেমি যখন থেকে কাজ শুরু করেছেন, তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সামর্থ্য, সক্ষমতা অনুসারে পরিকল্পনা ও দল সাজানো শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে খেলার একটা নির্দিষ্ট ধরন তিনি তৈরি করেছেন। যেমন- শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে হাই প্রেস করে খেলার প্রবণতা। তবে খেলার ধরন গেম প্ল্যান যা-ই হোক না কেন, খেলোয়াড়দের মধ্যে অফুরন্ত স্ট্যামিনা ও ফিটনেস, বল পায়ে রাখার মানসিকতা এবং হারার আগে হারা যাবে না-শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে এই মানসিকতা থাকতে হবে। এগুলোর ওপর তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন।....মাঠের বাইরের ব্যাপারগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- নিয়ম শৃঙ্খলা, খাদ্যাভ্যাস এই বিষয়গুলোতেও খুব ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। একটা দল বা ইউনিট হিসেবে খেলোয়াড়দের গড়ে তোলার ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন জেমি।’

Comments

The Daily Star  | English

Cyber Security Agency exists only in name

In December 2018, when the Digital Security Agency was formed under the Digital Security Act, it was hoped that the cybersecurity of important government sites with critical citizen data such as the Election Commission’s national identity database and the Office of the Registrar of Birth and Death  would be robust.

8h ago