যেসব দাবি ছিল: যা মানার স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এসেছে, যা নিয়ে ধোঁয়াশা
গত সোমবার এগারো দফা দাবিতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধর্মঘটে গিয়েছিলেন দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটাররা। দুদিনের অচলাবস্থা এবং নানা নাটকীয় ঘটনার পর সেই সংকট কেটে গেছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) ক্রিকেট বোর্ডের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসানরা, ফিরছেন খেলাতেও। কিন্তু খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, আসলে কেবল তিনটি দাবির ব্যাপারেই বোর্ড প্রধানের স্পষ্ট বার্তা এসেছে। কিছু নিয়ে আছে আংশিক পূরণের আশ্বাস, কয়েকটি নিয়ে থেকেই গেছে ধোঁয়াশা।
ক্রিকেটারদের যে যে দাবিতে যেমন সিদ্ধান্ত বিসিবির:
১. ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (কোয়াবের) বর্তমান কমিটিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। ক্রিকেটারদের সরাসরি ভোটে ঠিক করা হবে নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
- এই দাবির ব্যাপারে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, কোয়াব যেহেতু আলাদা সংগঠন, কাজেই এই দাবি পূরণের এখতিয়ারই তাদের নেই। বিসিবি পরিচালক ও কোয়াব সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয় অবশ্য কোয়াবের নতুন নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠিক করার কথা দিয়েছেন।
২. ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দলবদলের নিয়ম আগের মতো করতে হবে। যে যার পছন্দমতো দলে যাবে।
- এই দাবি প্রথম দিনেই মেনে নেওয়ার কথা দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনার পরও সে কথা আবার জানিয়েছেন তিনি।
৩. এ বছর না হোক, তবে পরের বছর থেকে আগের মতো (ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতিতে) বিপিএল আয়োজন করতে হবে। স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে।
- এই দাবিও প্রথম দিনই মেনে নিয়েছিলেন বোর্ড প্রধান। এদিন আবার তা মেনে নেওয়ার কথা জানান। তবে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর কোনো কথা আসেনি।
৪. প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি ১ লাখ করতে হবে। চুক্তিভুক্ত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটারদের বেতন ৫০% বাড়াতে হবে। ১২ মাস কোচ-ফিজিও দিতে হবে, প্রতি বিভাগে অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ম্যাচ ফি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তই কোনো পক্ষ জানাতে পারেননি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে। বোর্ড প্রধান এই নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। নিরুত্তর ছিলেন সাকিবও। তবে প্রতি বিভাগে অনুশীলন ব্যবস্থা নিয়ে বিবিসির ইতিবাচক পদক্ষেপ আছে বলে জানান বোর্ড প্রধান।
৫. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে বল দিয়ে খেলা হয়, ঘরোয়া লিগে সেই বল ব্যবহার করতে হবে। দৈনিক ভাতা ১৫০০ টাকায় কিছু হয় না, তা বাড়াতে হবে। এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যাওয়ার জন্য যাতায়াত ভাড়া মাত্র ২৫০০ টাকা। তা বাড়াতে হবে অথবা প্লেন ভাড়া দিতে হবে। হোটেল ভালো হতে হবে, জিম ও সুইমিংপুল সুবিধা থাকতে হবে।
- এই দাবি কীভাবে মেনে নেওয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট করা হয়নি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে।
৬. জাতীয় দলে চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা অন্তত ৩০ করতে হবে ও বেতন বাড়াতে হবে।
- চুক্তিভুক্ত খেলোয়ড়ের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। তবে বেতন-ভাতা বাড়াতে বোর্ড কার্পণ্য করবে না বলে জানান বিসিবি প্রধান। দু'একদিনের মধ্যে এই সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথাও জানান তিনি।
৭. দেশি সব স্টাফদের বেতন বাড়াতে হবে। কোচ থেকে শুরু করে গ্রাউন্ড স্টাফ, আম্পায়ার- সবার বেতন বাড়াতে হবে।
- এই দাবি মেনে নেওয়ার স্পষ্ট কোনো বার্তা আসেনি বোর্ড প্রধানের সংবাদ সম্মেলনে।
৮. জাতীয় লিগের পর একটি ওয়ানডে লিগ হতো আগে, সেটি ফিরিয়ে আনতে হবে। বিপিএলের আগে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিতে হবে।
- টুর্নামেন্ট বাড়ানো সম্ভব বললেও এই দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আলাদা কিছু বলা হয়নি।
৯. ঘরোয়া ক্যালেন্ডার চূড়ান্ত হতে হবে।
- এই দাবি নিয়ে বিসিবি প্রধান আলাদা করে কিছু বলেননি।
১০. ডিপিএলের (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ) পাওনা টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে হবে।
- এই ব্যাপারে বিসিবি ভীষণ আন্তরিক বলে জানান বিসিবি প্রধান।
১১. প্রতি বছরে বিদেশে দুটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলা যাবে না, এমন নিয়ম তুলে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে সবাই খেলবে।
- পুরোপুরি এই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। তবে বিসিবি প্রধান জানিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেহেতু খুব বেশি ক্রিকেটার খেলেন না (বছরে একাধিক কেবল সাকিব), কাজেই এটা কেইস টু কেইস দেখবেন তারা, বিবেচনা করবেন।
বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে আইনজীবীর মাধ্যমে আরও নতুন দুই দাবি যুক্ত করেন ক্রিকেটাররা। সেই দুই দাবি হলো- নারী ক্রিকেটারদেরও সমান মর্যাদা দিয়ে বেতন-ভাতা বাড়াতে হবে এবং ক্রিকেটারদের দিতে হবে বোর্ডের লাভের ভাগ। কিন্তু এদিন সাক্ষাতে এই দাবি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, যেহেতু ক্রিকেটাররা আইনজীবীর মাধ্যমে দাবি পাঠিয়েছে, তাই তারাও তাদের (বিসিবির) আইনজীবীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। সাকিবও জানিয়েছেন, নতুন করে তোলা দাবি নিয়ে বিসিবির আলোচনার সময় ছিল না।
Comments