ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় জুটি
সিনেমায় জুটি-প্রথা নতুন কোনো কিছু নয়। বহু আগে থেকেই তা হয়ে আসছে। অনেক বছর আগের জুটিগুলোর কথা এখনো দর্শকরা মনে রেখেছেন। জুটি হয়ে যারা অনেক সিনেমা করেছেন এবং দর্শকরা যেসব জুটিকে গ্রহণ করেছেন, তারাই সফল জুটি হিসেবে পরিচিত। আবার জুটি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে প্রেম-ভালোবাসা-সংসারও করেছেন অনেকে।
এই দেশে প্রথম জুটি গড়ে উঠে আজিম ও সুজতাকে ঘিরে। জুটি হিসেবে আজিম ও সুজাতার প্রথম সিনেমা ‘রূপবান’। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পাওয়া লোককাহিনি নির্ভর ‘রূপবান’ ছিলো সেসময়ের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র।
আজিম ও সুজাতাকে বলা হয় ৬০ দশকের জুটি। তারপর বহু বছর একসঙ্গে জুটি হয়ে সিনেমায় অভিনয় করেছেন তারা দুজন। তাদের আলোচিত একটি সিনেমার নাম ‘অবাঞ্ছিত’। একসময় আজিম ও সুজাতা প্রেমে জড়িয়ে পড়েন এবং বিয়েও করেন তারা।
১৯৬০ দশকের আরও একটি সফল জুটির নাম: রহমান ও শবনম। শবনম অবশ্য তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু সিনেমায় অভিনয় করে নাদিমের সঙ্গে জুটি গড়েছিলেন। পরে রহমান ও শবনম জুটি গড়ে উঠে।
রহমান ও শবনম জুটির বিখ্যাত সিনেমা ‘রাজধানীর বুকে’। এই সিনেমার একটি জনপ্রিয় গান হচ্ছে, ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, চাঁদ বুঝি তাই জানে’। এরপর রহমান ও শবনম অনেক সিনেমা করেন। তাদের আরেকটি আলোচিত সিনেমার নাম ‘দর্শন’। আরও অনেক সিনেমায় জুটি হিসেবে অভিনয় করেছেন রহমান ও শবনম।
নায়করাজ রাজ্জাক অনেক নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন। যার সঙ্গেই রাজ্জাক অভিনয় করেছেন, জুটি হিসেবে তারা সফলতা পেয়েছেন। তবে, বাংলাদেশের সিনেমায় সর্বকালের সেরা ও সফল জুটি বলা হয়ে থাকে রাজ্জাক ও কবরীকে।
রাজ্জাক ও কবরীর অনেক সফল ও ব্যবসাসফল সিনেমা রয়েছে। ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘আবির্ভাব’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘রংবাজ’ এবং ‘স্বরলিপি’ হচ্ছে রাজ্জাক ও কবরী অভিনীত আলোচিত সিনেমা।
রাজ্জাকের পর নায়ক হিসেবে ঢাকাই সিনেমায় আগমন ঘটে নায়ক আলমগীরের। আলমগীর অনেক নায়িকার সঙ্গে নায়ক হিসেবে অভিনয় করলেও শাবানার সঙ্গে তার জুটিই বেশি সফলতা পায়। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ আলমগীর ও শাবানার সিনেমাগুলো গ্রহণ করে বেশ ভালোভাবেই।
আলমগীর ও শাবানা অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে: ‘মণিহার’, ‘অতিথি’, ‘মনের মানুষ’, ‘মরণের পরে’, ‘অজান্তে’ এবং ‘কেউ কারও নয়’। আলমগীর ও শাবানা জুটি হয়ে ১২০টি সিনেমায় অভিনয় করেন।
বাংলাদেশের সিনেমায় আরেকটি সফল জুটি জাফর ইকবাল ও ববিতা। ববিতার সঙ্গে জুটি হিসেবে আরও অনেক নায়কই সিনেমা করেছেন। কিন্তু, জাফর ইকবাল ও ববিতার জুটির কথাটাই আলোচনায় বেশি আসে। রোমান্টিক নায়ক ও গায়ক হিসেবে জাফর ইকবালের ছিলো বেশ সুনাম। ববিতাও ছিলেন গ্ল্যামারাস নায়িকা। সব মিলিয়ে এই জুটি অনেক হিট সিনেমা উপহার দেন দর্শকদের।
‘অবুঝ হৃদয়,’ ‘এক মুঠো ভাত’, ‘সূর্য সংগ্রাম’ ও ‘সূর্য গ্রহণ’ জাফর ইকবাল ও ববিতা জুটির জনপ্রিয় সিনেমা। তাদের প্রেম-ভালোবাসা নিয়েও ঢাকার সিনেমাপাড়া সেসময়ে সরব ছিলো। জাফর ইকবালের আকস্মিক মৃত্যুর আগ অবধি এক সঙ্গে কাজ করেছেন তারা।
নায়ক ফারুক জুটি হিসেবে অনেকের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। ফারুক ও ববিতা জুটি এবং ফারুক ও কবরী জুটিও আলোচনায় এসেছে এবং দর্শকরা তাদের গ্রহণ করেছেন। ফারুক ও কবরী অভিনীত ‘সুজন সখী’ বছর ধরে সিনেমা হলে চলেছে। এরপর ‘সারেং বউ’ সিনেমায় ফারুক ও কবরী অভিনয় করেন।
আবার ফারুক ও ববিতা অভিনীত ‘নয়নমণি’ সিনেমাটি সেসময়ে ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়। তারপর ফারুক ও ববিতা অভিনয় করেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে।
ইলিয়াস কাঞ্চন অনেক নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করলেও নায়িকা চম্পার সঙ্গে তার ভালো একটি জুটি গড়ে উঠে। এই জুটির সফল সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘সহযাত্রী’ ও ‘ভেজা চোখ’।
পরে চম্পার সঙ্গে জুটি গড়েন নায়ক মান্না। মান্না ও চম্পার অনেকগুলো সিনেমা রয়েছে।
এদিকে ৯০ দশকের সেরা জুটি হিসেবে সবার সামনে আগমন ঘটে নাঈম ও শাবনাজের। ‘চাঁদনী’ সিনেমা দিয়ে তারা সবার মন কেড়ে নেন। এরপর প্রেম-ভালোবাসা এবং অতঃপর বিয়ে করেন তারা।
তাদের পর বাংলাদেশের সিনেমায় জুটি হিসেবে সফলতা পান সালমান শাহ ও মৌসুমী। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে শুরু। মাত্র চারটি সিনেমা করেছেন এই জুটি। কিন্তু, সেসব সিনেমা দিয়েই দর্শকদের ভালোবাসা পেতে সক্ষম হন তারা। এখনো তাদের প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা রয়ে গেছে।
এরপর সালমান শাহ জুটি গড়ে তোলেন শাবনূরের সঙ্গে। অপরদিকে, মৌসুমী জুটি গড়ে তোলেন ওমর সানীর সঙ্গে। সালমান শাহ ও শাবনূর অনেক সিনেমা করেছেন। সালমান শাহ মারা যাওয়ার পর শাবনূর জুটি গড়ে তোলেন রিয়াজের সঙ্গে। রিয়াজ ও শাবনূর জুটির অনেক সিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে। অন্যদিকে, মৌসুমী ও ওমর সানী জুটি এক সময় প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। অবশেষে, তারা বিয়ে করেন।
অনেক পরে এসে ঢাকাই চলচ্চিত্রে আরও এক জুটি সফলতা পায়। তারা হলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। এই জুটি ৭০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। জুটি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে প্রেম-ভালোবাসা এবং অতঃপর বিয়ের বন্ধনে জড়ান তারা। সেই সংসার ভেঙেও যায়। এরপর তারা আর একসঙ্গে কাজ করছেন না। তবে, শাকিব খান ও বুবলি জুটি হিসেবে অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকটি সিনেমায়।
দেশের চলচ্চিত্রে জুটি-প্রথা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু, নতুনরা বড় কোনো চমক এখনো দেখাতে পারেননি।
Comments