হারিয়ে যাওয়ার ১০ বছর পর পরিবারে ফিরলো বিথী
মায়ের সঙ্গে বড় বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে গাজীপুর জেলা শহর থেকে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলো নড়াইলের বাসিন্দা বিথী আক্তার। পরে কিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলো তা বলতে পারে না মানসিকভাবে অসুস্থ এই মেয়েটি।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই জেলায় গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে হাসপাতালে ঠাঁই হয় তার। সেখানে দীর্ঘ সাতবছর চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়ে মায়ের কাছে ফিরেছেন তিনি।
নড়াইলের স্থানীয় সাংবাদিক ও নিরাপদ সড়ক চাই- সংগঠনের নেতা খায়রুল আলমের উদ্যোগ আর বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় মা-বাবার কাছে ফিরেছে বিথী।
আজ (৩০ অক্টোবর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বিথীকে তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পাচুরিয়া গ্রামের হেমায়েত খন্দকার ও সাফিয়া বেগমের মেয়ে বিথী আক্তার (৩০)। হারিয়ে যাওয়ার সময় তার বয়স ছিলো ২০।
আজ যখন বিথীকে হস্তান্তর করা হচ্ছিলো তখন তার মা-সহ উপস্থিত লোকজন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেসময় মা ও মেয়ের আবেগঘন অভিব্যক্তিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বিথীর মা সাফিয়া বেগম জানান, ২০১০ সালে নড়াইল থেকে রওয়ানা হয়ে গাজীপুর পৌঁছার পর সেখান থেকে বিথী হারিয়ে যায়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালে নড়াইল জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা তাদের কাছে কেউ হারিয়ে গেছে কী না জানতে চান। তারা বিথীর নিখোঁজ থাকার বিষয়টি পুলিশকে জানান। এছাড়া স্থানীয় সাংবাদিক খায়রুল আলমকেও তারা বিষয়টি জানান।
খায়রুল আলম বিষয়টি জানার পর পুলিশের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে বিথীর সন্ধানে ভারতের ত্রিপুরায় যান। সেখানে গিয়ে ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার কিরিটি চাকমার সহায়তায় ধলাই জেলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে মেয়েটি রয়েছে বলে জানতে পারেন। পরে খায়রুল আলমের ভিডিও কলের মাধ্যমে বিথীর পরিবারের সদস্যরা তাকে চিনতে পারেন। এরপর দুই দেশের মধ্যে চিঠি চালাচালি শেষে আজ নিজ দেশে ফিরেন বিথী।
আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার কিরিটি চাকমা বলেন, “২০১২ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলাই জেলার সালেমা থানা পুলিশ বিথীর সন্ধান পায় এবং তাকে সেখানকার আদালতে হাজির করে। ওই বছরের ১৭ মার্চ আদালতের নির্দেশে তাকে ধলাই জেলার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সে এতোদিন চিকিৎসাধীন ছিলো।”
মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বিথী কিভাবে ত্রিপুরায় গেছে সেই তথ্য জানা যায়নি বলেও জানান তিনি।
ওই হাসপাতালে আরও কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক চিকিৎসাধীন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদেরকেও দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
বিথীকে হস্তান্তরের সময় আখাউড়া চেকপোস্টের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া, দ্বিতীয় সচিব এস, এম আসাদুজ্জামান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ২৫ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ গোলাম কবীর, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার রেইনা প্রমুখ।
Comments