পাসপোর্টহীন খোকা ও তার স্ত্রীর দেশে ফেরার আকুতি

খোকার শারীরিক অবস্থা উন্নতির আশা ছেড়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা

জীবনের শেষ নিঃশ্বাস দেশের মাটিতে নেওয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। যে দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছিলেন সেই দেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করার ইচ্ছে তার। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছে গত কিছু দিনে একথা বারবার বলেছেন।
Sadeque Hossain Khoka
মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ছবি: সংগৃহীত

জীবনের শেষ নিঃশ্বাস দেশের মাটিতে নেওয়ার আকুতি জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। যে দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছিলেন সেই দেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করার ইচ্ছে তার। পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছে গত কিছু দিনে একথা বারবার বলেছেন।

খোকা এখন আছেন নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। উচ্চমাত্রার অক্সিজেন দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছে যতোক্ষণ সম্ভব তার পাশে থাকার। লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হলে তার পাশে থাকার বা দেখার সুযোগ থাকবে না।

কথাগুলো বলছিলেন, সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আহমেদ হাসান মিন্টু। হাসপাতালে খোকার পাশে বসে থাকা মিন্টু আজ (১ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে টেলিফোনে তিনি দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে এই কথাগুলো বলেন।

তিনি বলেন, গতকালও সাদেক হোসেন খোকা আস্তে আস্তে ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলতে পারছিলেন। কিন্তু, আজকে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। আজকে তিনি চোখ খুলে ঠোঁট নাড়াচ্ছেন বটে কিন্তু তার কথা কিছু বোঝা যাচ্ছে না।

“খোকা আফসোস করে বলতেন, আমার দুর্ভাগ্য দেশে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো না,” যোগ করেন মিন্টু।

তিনি আরও জানান, খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত হোসেনের নতুন পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, নবায়নের জন্যে নিয়ম মেনে ফি দিয়ে দুই বছর আগে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু, আজ পর্যন্ত পাসপোর্ট পাননি। কনস্যুলেট থেকে কোনো কিছু জানানোও হয়নি। “তারা সর্বশেষ ছয় মাস আগে কনস্যুলেটে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাসপোর্টের বিষয়টি জানতে হবে।”

“এমন পরিস্থিতিতে যদি দুঃসংবাদও আসে তাহলে সাদেক হোসেন খোকাকে কীভাবে দেশে নেওয়া হবে? তার স্ত্রী-ই বা কীভাবে ফিরবেন? অনিশ্চিত-অস্থির সময় পার করছেন পরিবারের সদস্যরা,” বলে মন্তব্য করেন মিন্টু।

খোকার স্ত্রী ইসমত হোসেন ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, “আমার স্বামী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি এই দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছিলেন। তার পাসপোর্ট কেনো দেওয়া হবে না। তিনি কেনো পাসপোর্ট পাবেন না? আমরা কেনো দেশে ফিরতে পারবো না?”

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট না থাকায় এই মুহূর্তে সাদেক হোসেন খোকা ও তার স্ত্রী অনেকটা দেশহীন।

সাবেক মেয়রের শারীরিক অবস্থা এতোই নাজুক যে তাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থার উন্নতি হবে, চিকিৎসকরা এখন আর এমন আশা করছেন না।

২০১৪ সালের মে মাসে ক্যানসার চিকিৎসার উদ্দেশে ভ্রমণ ভিসায় স্ত্রীসহ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।

স্লোয়ান ক্যাটারিং হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে আছেন।

২০১৭ সালের শেষদিকে তার এবং স্ত্রী ইসমত হোসেনের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। দীর্ঘদিনেও তাদেরকে পাসপোর্ট না দেওয়ায় এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে খোকা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। সেই আবেদনের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

ছয় মাস আগে ইসমত হোসেন সশরীরে কনস্যুলেটে গিয়ে পাসপোর্টের দায়িত্বে থাকা প্রথম সচিব শামীম হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। তার কাছ থেকে পাসপোর্টের বিষয়ে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় তিনি হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।

দীর্ঘদিন চিকিৎসার মধ্যে থাকার পর গত কয়েক মাস ধরে সাদেক হোসেন খোকা দেশে ফেরার জন্য বার বার আকুতি প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি বলতেন, ঢাকায় যাওয়ার পর জেলে যেতে হলে যাবো, চিকিৎসার জন্য আর আসতে না দিলেও সমস্যা নাই। দেশে গিয়েই মরবো।

সাদেক হোসেন খোকার ফুসফুসে ক্যানসার মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। কিডনি ক্যানসারের চিকিৎসা নেওয়ার সময় হঠাৎ করেই ফুসফুস আক্রান্ত হলে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

গত সাড়ে পাঁচ বছর যাবৎ থাকছেন নিউইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। সার্বক্ষণিক তার পাশে রয়েছেন স্ত্রী ইসমত হোসেন।

উল্লেখ্য, চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা করলে ঢাকা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের বাধায় প্রথম দফা তিনি ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে তার বিদেশ গমনে বাধা দূর হলে প্রায় তিন সপ্তাহ পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

ওই তিন সপ্তাহ দেরি হওয়ার কারণেও ক্যানসার তার শরীরে অনেকটা ছড়িয়ে পড়ে বলে জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। তারপরও নিউইয়র্কে চিকিৎসা শুরুর পর গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে তার ক্যানসার নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিলো। কিন্তু, হঠাৎ করেই ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ায় এখন তার অবস্থা চরম সংকটাপন্ন।

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago