পেঁয়াজ সংকটের দ্রুত সমাধান নেই, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার
আগের সব রেকর্ড ভেঙে পেঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। লাগাম টেনে ধরতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের পরও গতকাল (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর কাঁচাবাজারে ১৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়।
অনেকের অভিযোগ, বর্তমানে আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনের নেতারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ভারত বাদে অন্য দেশ থেকে উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ আমদানির কারণে এখনই পেঁয়াজের দাম কমবে না।
এই সংকটের তাৎক্ষণিক প্রতিকার নেই জানিয়ে বাজার স্থিতিশীলতার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “এখন যে মূল্য বৃদ্ধি করছে ব্যবসায়ীরা, এটি নিতান্তই মুনাফা লাভের জন্য। এটি অযৌক্তিক এবং এর কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। যেহেতু মিয়ানমার এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাই দাম কমবে না। কিন্তু দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।”
তিনি বলেন, “যদি সরকার এই অতি মুনাফাভোগী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়, তাহলে পেঁয়াজের দাম কমবে না। কিন্তু বাড়ার কোনো কারণ নেই।”
তার ভাষ্যে, “সরকারের স্বল্পমেয়াদী ‘কুইক ফিক্স’ যেটাকে বলে- এক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমিয়ে দেওয়া, এমন কোনো কুইক ফিক্স আছে বলে মনে হয় না। আমাদের সমাধান খোঁজা উচিৎ দীর্ঘমেয়াদি।”
“পেঁয়াজের দাম এ বছরই বেড়েছে তা নয়। এর আগেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমাদের এখানে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। মানে পেঁয়াজের বাজার অনেকটাই নির্ভর করছে ভারতের ওপর। এই যে ভারতের সিদ্ধান্তের ওপর আমাদের বাজার, তার মানে আমাদের সরকার এমন কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেয়নি, যাতে ভারতের সিদ্ধান্ত আমাদের বাজারকে প্রভাবিত না করে”, যোগ করেন তিনি।
গোলাম রহমান আরও বলেন, “দেশীয় উৎপাদন দুইভাবে বাড়ানো যায়। এক- কৃষককে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে আরও উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো। দুই- উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার।”
“আরেকটি বিষয় হলো- আমাদের পেঁয়াজ আমদানির ওপর কোনো আমদানি শুল্ক নেই। ভারতের যেহেতু পেঁয়াজের উৎপাদনশীলতা বেশি, তাই পেঁয়াজের মৌসুমে দাম খুব কম থাকে। তখন ভারত থেকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে”, বলেন তিনি।
ক্যাব সভাপতি মনে করেন, “দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পায়, সেজন্য মৌসুমের সময় পেঁয়াজ আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করতে হবে। আবার মৌসুম শেষে শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে ভোক্তারা যুক্তিসঙ্গত মূল্যে পেঁয়াজ পায়।”
গোলাম রহমান আরও বলেন, “পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল শস্য, তাই আধুনিক কোনো প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ বাড়ানো যায় কী না, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। যদি পেঁয়াজের সংরক্ষণ, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়, তাহলে বারবার এই সংকট আসবে না। এজন্য কৃষককে বীজ, সার এবং ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষক যাতে মৌসুমে ন্যায্যমূল্য পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।”
Comments