‘রূপবান’ এদেশ থেকে উর্দু সিনেমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো: সুজাতা

৬০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নায়িকা সুজাতা। তার ক্যারিয়ারে রয়েছে অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা। কেবলমাত্র ‘রূপবান’ সিনেমা দিয়েই তিনি বহু বছর আলোচনায় ছিলেন। তাকে বলা হত ‘রূপবান কন্যা’। ‘অবুঝ মন’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘আয়না’, ‘অবশিষ্ট’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘আলোর মিছিল’, ‘গাজী কালু চম্পাবতী’সহ আরও কতোই না ব্যবসাসফল সিনেমার নায়িকা ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে পাচ্ছেন আজীবন সম্মাননা। ডেইলি স্টার অনলাইনকে এক সাক্ষাৎকারে সুজাতা বলেন, ‘রূপবান’ এদেশ থেকে উর্দু সিনেমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।
Sujata
সুজাতা। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

৬০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নায়িকা সুজাতা। তার ক্যারিয়ারে রয়েছে অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা। কেবলমাত্র ‘রূপবান’ সিনেমা দিয়েই তিনি বহু বছর আলোচনায় ছিলেন। তাকে বলা হত ‘রূপবান কন্যা’। ‘অবুঝ মন’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘আয়না’, ‘অবশিষ্ট’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘আলোর মিছিল’, ‘গাজী কালু চম্পাবতী’সহ আরও কতোই না ব্যবসাসফল সিনেমার নায়িকা ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্যে পাচ্ছেন আজীবন সম্মাননা। ডেইলি স্টার অনলাইনকে এক সাক্ষাৎকারে সুজাতা বলেন, ‘রূপবান’ এদেশ থেকে উর্দু সিনেমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।

সম্প্রতি, ঘোষিত হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আপনাকে দেওয়া হবে আজীবন সম্মাননা। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি জানতে চাই?

এতো বড় পুরস্কার পাওয়া তো অবশ্যই আনন্দের ব্যাপার। সব শিল্পীরই স্বপ্ন বা চাওয়া থাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার। সেখানে আজীবন সম্মাননা বিষয়টি তো আরও বড় বিষয়। আমারও ভালো লাগছে। দেরিতে হলেও আমি আজীবন সম্মাননা পাচ্ছি- অনুভূতি সুখকর।

প্রায় ৫৩ বছর ধরে অভিনয় করছেন, একজীবনে বড় প্রাপ্তি কোনটি?

দেখুন, ১৯৬০ এর দশকে সিনেমায় অভিনয় শুরু করি। দেশের মানুষ এক নামে আমাকে চেনেন। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী আর হতে পারে? ৫০ বছর আগে ‘রূপবান’ সিনেমাটি করেছিলাম। ‘রূপবান’ চরিত্রে আমি অভিনয় করেছিলাম। এখনো মানুষ আমাকে ‘রূপবান’ বলে ডাকেন। মানুষের ভালোবাসাই আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।

দীর্ঘদিন আপনি সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করেছেন, অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলবেন কিছু বলবেন কি এবং কোন ধরণের কাজ আপনাকে কষ্ট দেয়?

একটি বিষয় খুব করে ভাবায়, খুব করে কষ্ট দেয়- তা হচ্ছে, আগে একটি সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন বাবা-মা, ভাই–ভাবি। তারপর নায়ক-নায়িকা। দেখুন, কবরীর সঙ্গে হাসমত অভিনয় করেছেন। হাসমতের চরিত্রটিও কিন্তু গুরুত্ব পেতো। আবার পাশাপাশি অন্য সিনেমায় ধরুন সাইফুদ্দিন বা আনিসের অভিনয়ও গুরুত্ব পেতো। সবাইকে মানুষ চিনতেন। এখন কী হচ্ছে? বাবা-মা সিনেমায় কতোটা গুরুত্ব পাচ্ছেন? একটি দৃশ্যে অভিনয় করেও কিন্তু মানুষের মনে গেঁথে থাকা যায়। নায়ক-নায়িকা ছাড়া অন্য চরিত্রগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে না, এই ভাবনাটি কষ্ট দেয় আমাকে।

স্বর্ণালী দিনের নায়িকা আপনি, কাকে ক্রেডিট দিবেন?

অবশ্যই পরিচালকদের ক্রেডিট দিবো। পরিচালকরা গল্প পছন্দ করতেন। ভালো ভালো লেখকদের দিয়ে চিত্রনাট্য লেখাতেন। গান লেখাতেন ভালো গীতিকার দিয়ে। ভালো শিল্পীদের দিয়ে গান করাতেন। অনেক গুণী পরিচালক ছিলেন সেসময়ে। পরিচালক সবার সঙ্গে মিলে সমন্বয় করে একটি সিনেমা বানাতেন। এজন্যই তখনকার দিনে এতো সুন্দর সিনেমা হয়েছে। কাজেই সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট দিবো পরিচালকদের।

এখনকার শিল্পীদের মধ্যে অনেক বিভাজন। সেটা শিল্পী সমিতির নির্বাচন থেকেও দেখা যায়। আপনার মন্তব্য?

আমাদের সময় শিল্পীরা সবাই মিলে একটা পরিবারের মতো ছিলেন। আমাদের সময় প্রতিযোগিতা ছিলো কিন্তু দ্বন্দ্ব ছিলো না। কাজ নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো আমাদের সময়ে। অভিনয় নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো, কার চেয়ে কে ভালো করতে পারবেন। এফডিসির মধ্যে এতোকিছু ছিলো না। এফডিসি ছিলো আমাদের সময়ে সবচেয়ে ভালোবাসার জায়গা।

এদেশের ইতিহাসে ‘রূপবান’ একটি সুপারহিট সিনেমা। সেই সিনেমার নায়িকা ছিলেন আপনি, ফেলে আসা দিনগুলির কথা জানতে চাই?

এদেশে ‘রূপবান’ সিনেমার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। অথচ ‘রূপবান’ এদেশ থেকে উর্দু সিনেমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। ‘রূপবান’ হিট হওয়ার পর এদেশে বাংলা সিনেমা নির্মাণের হিড়িক পড়ে যায়। উর্দু সিনেমায় ভাটা পড়ে। সালাহউদ্দিন সাহেব অনেক যত্ন নিয়ে সিনেমাটি বানিয়েছিলেন।

‘রূপবান’ করার আগে পরিচালক আমাদের নিয়ে বসে বলেছিলেন- এমন সিনেমা করতে চাই যার জন্য মানুষ হলে যাবে এবং উর্দু সিনেমা থেকে দূরে সরে আসবে। ফোক সিনেমা হিসেবে ‘রূপবান’ হিট হয়ে গেলো। বছরের পর বছর ধরে দেশের নানা সিনেমা হলে ‘রূপবান’ চলেছে। কিন্তু, ‘রূপবান’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি।

নায়ক আজিম ছিলেন আপনার জীবনসঙ্গী। তার সঙ্গে জুটি হিসেবে অনেক সিনেমা করেছিলেন। তাকে নিয়ে কিছু বলুন।

আজিম সাহেব দিল দরিয়া মানুষ ছিলেন। ভালো মানুষ ছিলেন। সুপারহিট নায়ক ছিলেন। পরিচালক ছিলেন। তার হাত ধরে অনেক পরিচালকের জন্ম হয়েছিলো। তার মতো ভালো মানুষ পাওয়া কঠিন। বড়লোকের ছেলে ছিলেন তিনি। কেউ বিপদে পড়েছেন, কারও সংসার চলে না, এসব শুনলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। আজিমকে মনে পড়ে। খুব মনে পড়ে।

জীবন থেকে অনেক বছর কেটে গেছে, এই সময়ে এসে কী করছেন?

গেলো বছর একুশে বই মেলায় একটি বই লিখেছিলাম। বইটির নাম শিমুলির ৭১। এখন কয়েকটি বই নিয়ে এগোচ্ছি। ‘রূপকথা’ নামে একটি বই লিখছি। এছাড়া আত্মজীবনী লিখছি। ‘ওয়ারিশ’ নামে একটি বই লিখবো। তিনটি বই আগামী বছর একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হবে। নিজের আত্মজীবনী নিয়ে ভীষণ তৃপ্তি কাজ করছে। অনেক যত্ন নিয়ে নিজের আত্মজীবনী লিখছি। নতুন প্রজন্ম তো ওইভাবে জানে না আমাদের সময়ের শিল্পীদের সম্পর্কে। এই বই থেকে তারা জানতে পারবে।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

The deadline for completion of the Rooppur Nuclear Power Plant project has been extended to 2027, and a unit of the plant will be commissioned this December if transmission lines are ready.

57m ago