‘বি গ্রেড সিনেমার এ গ্রেড সংগীত পরিচালক’

কলেজ পড়ুয়া ছেলে কিংবা মেয়ে বেড়ে ওঠার সময়কালে ‘তেরি দুনিয়াছে দুর চলে হোক মজবুর’ গানটি গুনগুনিয়ে গায়নি বা শুনেনি, ৭০, ৮০ বা ৯০ এর দশকে তেমন ছেলে-মেয়ে পাওয়া কঠিন।
chitragupta-srivastava.jpg
চিত্রগুপ্ত শ্রীবাস্তব। ছবি: সংগৃহীত

কলেজ পড়ুয়া ছেলে কিংবা মেয়ে বেড়ে ওঠার সময়কালে ‘তেরি দুনিয়াছে দুর চলে হোক মজবুর’ গানটি গুনগুনিয়ে গায়নি বা শুনেনি, ৭০, ৮০ বা ৯০ এর দশকে তেমন ছেলে-মেয়ে পাওয়া কঠিন।

এরকম একটি গানের যে সংগীত পরিচালক, তাকে তার সময়ে বলা হতো ‘বি গ্রেড সিনেমার এ গ্রেড সংগীত পরিচালক’। তার গানের আরও কয়েকটি নমুনা দিলে বুঝতে সুবিধা হবে।

বাংলাদেশের গর্ব তথা উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার কণ্ঠে গাওয়া ‘ও মেরি বাবু ছ্যাল ছাবিলা মে তো নাচোঙ্গি’ বা মোহাম্মদ রফি’র কণ্ঠে গাওয়া ‘চল উড় যারে পাঞ্চি’সহ আরও অসংখ্য গানের সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি।

জানতে চান কে তিনি?

তিনি ছিলেন তার সময়ের সবচেয়ে শিক্ষিত সংগীত পরিচালক। তিনি হলেন চিত্রগুপ্ত শ্রীবাস্তব। বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার ছোট এক গ্রাম কারমেনিতে ১৯১৭ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারে সাহিত্য চর্চা চলতো তার বাবা দাদা-ঠাকুরদার সময় থেকে। তিনি অর্থনীতি ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছিলেন। পাটনা কলেজে অর্থনীতির অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কলেজে পড়ানোর সময় বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে অবসর সময়ে গান করতেন। চাচার কাছ থেকে শেখা আরবি আর ফার্সি তাকে সংগীতের দিকে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে।

১৯৪৬ সালে অধ্যাপনার চাকরী ছেড়ে চলে যান মুম্বাই। মনে মনে ভাবলেন, যদি সংগীতে কিছু করতে না পারেন, তবে পাটনাতে অধ্যাপনায় ফিরে যাবেন। মুম্বাইতে আসার পরে বন্ধু মদন সিনহার মাধ্যমে একটি কোরাসে গান গাওয়ার সুযোগ পান। তারপরে বিখ্যাত সংগীত পরিচালক শ্রীনাথ ত্রিপাতির সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

লেডি রবিনহুডে কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। এই ছবিতে তিনি দুটি গানও গান। তবে ফাইটিং হিরোতে তিনি এককভাবে সংগীত পরিচালনা করেন। তবে খুব সাফল্য পাননি তিনি। যেহেতু তিনি শ্রীনাথ ত্রিপাতির সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, তাই চিত্রগুপ্ত শ্রীনাথ ত্রিপাতির মতো মিথোলজি ভিত্তিক ছবিতেই বেশি কাজ করতেন। যার কারণে আলোচনায় ওইভাবে আসতে পারছিলেন না।

তবে প্রায় ছয় বছর পরে তিনি সিন্দাবাদ ছবিতে আবার সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। মোহাম্মদ রফি ও সামসাদ বেগমের গাওয়া গান ‘নাহি হাম ইউনা মানেঙ্গে’ তাকে আলোচনায় নিয়ে আসে। কিন্তু ভাবী চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করার পরে যেন তিনি আকাশে উড়তে লাগলেন। ওই ছবিতে মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে গাওয়া ‘চল উড় যারে পাঞ্চি’সহ সবকটি গান সুপারহিট হয়। হিন্দি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি ভোজপুরি চলচ্চিত্রে অত্যন্ত সফল একজন সংগীত পরিচালক ছিলেন।

একশ চুয়াল্লিশটি ছবিতে কাজ করা চিত্রগুপ্ত ভারতীয় সংগীত অঙ্গনে খুব বেশি আলোচনায় না আসার মূল কারণ ছিলো সময়। চিত্রগুপ্ত যখন সংগীত পরিচালক, তখন শচীন দেব বর্মণ, মদন মোহনসহ বিখ্যাত সব সংগীত পরিচালকরা তখন মুম্বাই সিনেমা জগত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

তবে তার কাজের শান্তির জায়গা ছিলো যে- লতা, সামসাদ, আশা, গীতা, রফি, কিশোর, মান্না দে, হেমন্ত, তালাত মাহমুদসহ অনেকেই তার সংগীত আয়োজনে গান গেয়েছেন।

তিনি যখন তার শেষ ছবি ১৯৮৮ সালে ‘ইনসাফ কি মঞ্জিলের’ কাজ করেন, তখন তার দুই ছেলে আনন্দ শ্রীবাস্তব ও মিলান শ্রীবাস্তব তার সহকারী হিসেবে কাজ করেন, যদিও তিনি চাননি তার সন্তানেরা সংগীতে তাদের ক্যারিয়ার গড়ুক।

তবে বাবা হিসেবে চন্দ্রগুপ্তর সাফল্য ছিলো যে, বলিউডের দুর্দান্ত সংগীত পরিচালক জুটি আনন্দ-মিলান যখন তাদের প্রথম ছবি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত থাক’ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টরের পুরস্কার পান।

চিত্রগুপ্ত বলেছিলেন, “আমি সারাজীবনে যা পাইনি, তাই তোমরা তোমাদের প্রথম ছবিতেই পেয়েছো।”

আজ এই গুণী সংগীত পরিচালকের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন চিত্রগুপ্ত শ্রীবাস্তব।

Comments

The Daily Star  | English

Mob beating at DU: Six students confess involvement

Six students of Dhaka University, who were arrested in connection with killing of 35-year-old Tofazzal Hossain inside their hall on Wednesday, confessed to their involvement in the crime before a magistrate

5h ago