অনেক প্রশ্ন উঠিয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ

ম্যাচটা প্রথম ইনিংসেই খুইয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। এরপর দেখার ছিল কোনো লড়াই আসে কিনা, কেউ দেখাতে পারেন কিনা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। না, বলার মতো তেমন কিছুই হয়নি। বরং ফের অনেকগুলো প্রশ্ন উঠিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচটা হারল দুঃস্বপ্নের মতো। দেখাল টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের মলিন-রূঢ় বাস্তবতার আরেকটি ছবি।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) ইন্দোরে প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে ইনিংস ও ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হকের দল ১৫০ রান করার পর ভারত একমাত্র ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪৩ রানে পিছিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ২১৩ রান।

এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ভুলে যাওয়ার মতো শুরুর পাশে শীর্ষে থাকা বিরাট কোহলিরা নিজেদের পয়েন্ট নিয়ে গেলেন আরও উঁচুতে।

এই ইনিংসে মুশফিকুর রহিম কিছুটা লড়াই করেছেন, কিন্তু পাঁচে নেমে তার ৬৪ রান এসেছে বড্ড দেরিতে। খানিকটা দ্যুতি ছিল লিটন দাস আর মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটেও। কিন্তু ওসব কেবলই হারের ব্যবধান কমানোর সংখ্যা।

টি-টোয়েন্টিতে দারুণ জয়ে শুরুর পর লড়াই হয়েছিল সিরিজ জুড়ে। টেস্টে ফল পক্ষে আনতে না পারলেও আশা ছিল চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা দেখাবে বাংলাদেশ। কিন্তু মুমিনুলের দল জানান দিল, তারা পড়ে আছে সেই তিমিরেই। টেস্ট আঙিনায় ১৯ বছর পেরিয়েও বাংলাদেশ আসলে এখনো ঠিকমতো দাঁড়াতেই শেখেনি!

প্রস্তুতি থেকে একাদশ নির্বাচন, পরিকল্পনা থেকে প্রয়োগ- সবখানেই মার খেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের সঙ্গে খেলতে নেমে কোনো জায়গাতেই থই খুঁজে পায়নি রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা।

বাজে টেকনিক, ভুল অ্যাপ্রোচ, টেম্পারমেন্টের ঘাটতি- বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বহুবার বলা এসব কথা আবারও কোনো দ্বিধা না করেই এই টেস্টেও বসিয়ে দেওয়া যায়। টস জিতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে দেড়শো রানে গুটিয়ে যাওয়া ইনিংসের ভুল পরের ইনিংসেও শুধরাতে পারেননি তারা।

জায়গায় গিয়ে খেলতে না পারা, বলের লাইন বুঝতে না পারা, মুভমেন্ট বুঝে না খেলা, ফুটওয়ার্কের অভাবে জড়সড় থাকা- অনেক টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি ত্রুটি বেরিয়েছে দৃষ্টিকটুভাবে। একেবারে মৌলিক জায়গাগুলোই ছিল নড়বড়ে।

বাংলাদেশ কেন খেলছে, কি লক্ষ্যে এগোচ্ছে- কোনো পরিকল্পনাই বোঝা যায়নি খেলার ধরনে। ব্যাটসম্যানরা ডুবিয়ে দেওয়ার পর কেবল এক পেসার আবু জায়েদ রাহি ঝাঁজ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় শক্ত ব্যাটিং লাইনআপকে বাকিরা মিলে নাড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। প্রতিপক্ষ তাই আনতে পেরেছে বড় রান।

৩৪৩ রানের লিড নিয়ে ভারত তৃতীয় দিন শুরুর আগেই ইনিংস হার চোখ রাঙাচ্ছিল। প্রথম দিনের সকাল থেকে তৃতীয় দিনের সকালে উইকেট মনে হলো কিছুটা আরও ভালো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটিং দেখে অবশ্য তা বোঝার উপায় নেই। প্রথম ইনিংসে দলীয় ১২ রানে বিদায় নিয়েছিলেন দুই ওপেনার, এবার ১৬ রানে ইতি তাদের।

ইমরুল কায়েস প্রথম ইনিংসে ধুঁকতে ধুঁকতে আউট হয়েছিলেন। এবার কিছুটা স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল তাকে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে পারেননি। উমেশ যাদবের ভেতরে ঢোকা বলে ড্রাইভ করতে গেলেন। বল আর ব্যাটের মাঝে ছিল ফাঁক। ইনসাইড এজ হয়ে কেড়ে নেয় তার স্টাম্প। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম রক্ষণাত্মক শটই খেলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার বল-ব্যাটের ফাঁক ছিল আরও বেশি। ইশান্ত শর্মার লেট স্যুয়িং উড়িয়ে দেয় তার স্টাম্প।

আগের ইনিংসের মতোই চারে নেমেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। এই পজিশনে তিনি কতটা বেমানান দেখিয়েছেন খেলার ঢঙে। মোহাম্মদ শামির বাউন্সার পুল করে ব্যাটেই নিতে পারেননি। সহজ ক্যাচ জমা পড়ে মিড উইকেটে।

অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ লাঞ্চের পর টেস্ট দলে নিজের জায়গা প্রশ্নবিদ্ধ করে শামিকে খোঁচে মেরে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্লিপে। সাতে নামা লিটন ছিলেন সাবলীল। দারুণ চারে শুরুর পর মুগ্ধতা জাগানিয়া একের পর এক বাউন্ডারি মেরেছেন। কোনো শটেই ছিল না ঝুঁকি। কিন্তু গল্প সেই একই।

দারুণ খেলতে খেলতেই হুট করে সমাপ্তি। রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে ড্রাইভ করে আচমকা ক্যাচ উঠিয়ে লিটন বিদায় নেন ৩৯ বলে ৩৫ করে। এতে ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে তার ৬৩ রানের জুটি। এরপর মিরাজের সঙ্গেও ৫৯ রানের আরেক জুটি গড়ে খেলার আয়ু কেবল লম্বা করেছেন মুশফিক। চা-বিরতির পর উমেশ ৩৮ রান করা মিরাজকে বোল্ড করে ভাঙেন প্রতিরোধ।

এরপর আর বেশিক্ষণ টেকেনি ইনিংস। টেলএন্ডারদের আসা-যাওয়া দেখে শেষ ভরসা মুশফিকও মারতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়ে থামেন। এরপর আর মিনিট কয়েকের মধ্যেই খেলা শেষ হয়েছে। 

উইকেট বুঝতে না পারা, ভুল কৌশল আর ভুল পরিকল্পনায় খেলতে নামার সঙ্গে সবচেয়ে প্রকট হয়ে ধরা দিল টেস্ট খেলার মানসিকতার অভাবও। দেশে আফগানিস্তানের সঙ্গে হারের পর অনেক সমালোচনায় পড়া দল ভারতে এসে নিজেদের অন্য ছবি দেখাতে পারল না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠলে তা অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দেওয়ারও উপায় থাকবে না।

গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে দুই টেস্টই তিন দিনে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার আবার দেখা গেল তিন দিনে হারের দৃশ্য। লড়াইবিহীন, বিবর্ণ, অসহায় বাংলাদেশ দেখাল সাদা পোশাকে কতটা অপ্রস্তুত তারা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫০

ভারত প্রথম ইনিংস: ১১৪ ওভারে ৪৯৩/৬ (ইনিংস ঘোষণা)

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৬৯.২ ওভারে ২১৩ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৭, মিঠুন ১৮, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউল্লাহ ১৫, লিটন ৩৫, মিরাজ ৩৮, তাইজুল ৬, জায়েদ ৪*, ইবাদত ১; ইশান্ত ১/৩১, যাদব ২/৫১, শামি ৪/৩১, জাদেজা ০/৪৭, অশ্বিন ৩/৪২ )।

ফল: ভারত ইনিংস ও ১৩০ রানে জয়ী।

সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে ভারত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

13m ago