‘প্রস্তুতি না নিয়ে অভিনয় করি না’

'থিয়েটার একটা লম্বা প্রক্রিয়া অভিনয় করার জন্য। আমাদের এখানে তো অভিনয় শেখার স্কুল নেই। থিয়েটারই ভরসা। থিয়েটার অভিনয় শেখার বড় জায়গা। '
তারিক আনাম খান। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

তারিক আনাম খান একজন শক্তিমান অভিনেতা। অনেক বছর ধরে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। তার নিজের একটি নাটকের দল আছে-নাট্যকেন্দ্র। টেলিভিশন নাটকেও বহু বছর ধরে অভিনয় করছেন। সিনেমা করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সব মিলিয়ে পুরোপুরি অভিনয় জগতের একজন মানুষ। তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

অনেক বছর ধরে অভিনয় করছেন, দেখা যাচ্ছে অনেক ইয়াং ডিরেকটরের পরিচালনায় অভিনয় করেন, এটাকে কিভাবে দেখেন?

সত্যি কথা বলতে ইয়াং ডিরেকটরদের সঙ্গে কাজ করাটাকে আমি এনজয় করি। ভীষণভাবে এনজয় করি। এখন অবধি কোনো ইয়াং ডিরেকটরের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়নি। কারও সঙ্গেই হয়নি। ইয়াং ডিরেকটররা আসলে ভালো কাজ করতে চায়, চ্যালেঞ্জ নিতে চায়। চ্যালেঞ্জ নেয়ও। ওদের সঙ্গে আমার মিলে যায়। একেবারে নতুন আইডিয়া, নতুন গল্প, নতুন ভাবনা, নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইয়াং ডিরেকটররা কাজ করতে আসেন। আমি মনে করি নতুনত্ব দরকার। সেটা হোক নাটকে বা সিনেমায়। নতুনত্ব আসে ইয়াংদের কাছ থেকেই।

নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গেও অভিনয় করতে দেখা যায় আপনাকে।

বেশকিছু কাজ একবারে নতুন ও ইয়াংদের সঙ্গে করা হয়েছে। সিনেমাও করেছি। ওদের সঙ্গে কাজ করার সময় আমার এক ধরনের বন্ধুত্বের রিলেশন হয়ে যায়। ফ্রি হয়ে মিশি ওদের সঙ্গে। জড়তা থাকলে শুটিং করার আগে কথা বলে নিই। তখন আর জড়তা থাকে না।  ওদের সঙ্গে মজা করি, জোকস করি, হাসাহাসি করি। এতে করে ওদের অভিনয় করাটা সহজ হয়। সবাই তো একসময় নতুন ছিল।

সেই সময় আর এই সময়ের কাজের তুলনা করতে বললে কিভাবে করবেন?

তখন টেকনোলজি এতটা ডেভেলপ করেনি। এখন করেছে। আমার বিশ্বাস, আমি যে কাজটা করি, আমার অভিনয়টা, এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেঞ্জ হয়, অভিনয়ের উপস্থাপনাটা পাল্টে যায়। বিটিভিতে যখন কাজ করতাম  শেষটুকু শ্রম দিয়েই করতাম। এই সময়ে এসে কাজটি স্লো হয়ে গেছে। এখন ক্যামেরার ভাষা পাল্টে গেছে। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেককিছু খাপ খাওয়াতে হচ্ছে। দুই সময়ে দুইরকমভাবে কাজ হয়েছে এবং হচ্ছে।

এই যে অভিনয় করছেন, যে কোনো চরিত্রে মিশে যাচ্ছেন, এর আসল রহস্যটা কোথায়?

রহস্য নয়। এটা একটা প্রক্রিয়া। লম্বা একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন অভিনয় শিল্পীকে। আসল জিনিসটা কী সেটা চিন্তা করি। উচ্চকিত অভিনয় কখনো করি না। যা বাস্তব জীবনে ঘটছে, যেভাবে আমরা কথা বলছি, সেটাই অভিনয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করি।  নাটক বা সিনেমায় কী হয়? কখনো হাসতে হয়, কখনো কাঁদতে হয়। একটা ক্রাইসিস নিয়ে আসে একটা গল্প। সেটার কিছু চরিত্র থাকে। আমরা সেইসব চরিত্রে অভিনয় করি। আমি তো অনেক বছর ধরে থিয়েটার করি।  থিয়েটার অভিনয়ের একটা পদ্ধতিগত শিক্ষা। এটা আমাকে অভিনয়ে হেল্প করে। চিন্তা করে অভিনয়টা করি। প্রস্তুতি না নিয়ে নাটক বা সিনেমায় অভিনয় করি না।

আপনার দলের হয়ে তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান, মোশররফ করিম প্রমুখ তারকা উঠে আসছেন, সে বিষয়ে জানতে চাই?

আমার নাটকের দল নাট্যকেন্দ্রের সঙ্গে ওরা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। আমি মনে করি থিয়েটার একটা লম্বা প্রক্রিয়া   অভিনয় করার জন্য। আমাদের এখানে তো অভিনয় শেখার স্কুল নেই। থিয়েটারই ভরসা। থিয়েটার অভিনয়  শেখার বড় জায়গা। কাজ করে করে শিখতে হয়। ওরাও শিখেছে। ওদের মধ্যে ইচ্ছা শক্তি ছিল। পরিশ্রম করার মানসিকতা ছিল। আরও অনেকেই এসেছেন। ওদের নামটা বেশি হয়েছে। ওরা পরিশ্রম করেছে। আমি বলব, পরিশ্রম যেকোনো মানুষকে বড় করে।

একটা সময়ে নাটকের সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ফিরত, আপনার অভিনীত কিছু সংলাপও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, সেই প্রসঙ্গে যেতে চাই।

ঠিকই বলেছেন। একটা সময়ে নাটকের সংলাপ খুব করে মানুষের মুখে মুখে ফিরত। বারো রকম মানুষ নাটকে আমার মুখ দিয়ে একটি সংলাপ দেওয়া হতো-থামলে ভালো লাগে। ওই সময়ে এবং আরও অনেক বছর এটি মানুষ বলত। ‘তথাপি’ নামের একটি নাটকে লাট ভাই চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেই সময় লাট ভাই আসছে এই কথাটি খুব করে বলা হতো। এরপর ‘সংশপ্তক’ নাটকে একটি সংলাপ ছিল- আমি আবার আসব। এটিও বেশ বলত মানুষজন। ওই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে ভালোই লাগে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago