দেশের বাইরে টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ কি আসলে প্রস্তুত?
দেশের মাঠে অতি ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতির রেখা হিসেবে এইসব জয়কেও তখন বড় করে দেখা হয়েছিল। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো সেই চেষ্টা কোন সুফল দিচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি একটু বিরূপ হলেই বেরিয়ে আসছে দলের কঙ্কাল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সূচিতে আগামী এক বছরে দেশের বাইরে অনেকগুলো টেস্ট খেলতে হবে বাংলাদেশকে। ভারতের কাছে ইন্দোরের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে এই চ্যালেঞ্জ নিতে বাংলাদেশ আসলেই প্রস্তুত তো?
শনিবার ইন্দোরে ভারতের কাছে সিরিজের প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ১৩০ রানে হারে বাংলাদেশ। টেস্টে বাংলাদেশের এটি ৪১তম ইনিংস হার। এরমধ্যে ২৭টি ইনিংস হারই দেশের বাইরে। লড়াইবিহীন হারের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলার ধরণ আর অ্যাপ্রোচ হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।
টেস্টে দেশের মাঠে তাও যা, কিন্তু দেশের বাইরে খুবই বেহাল দশা বাংলাদেশের। এখন পর্যন্ত ১১৬ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ১৩টিতে। আর দেশের বাইরে বাংলাদেশে জিতেছে মোট চার টেস্ট। যার মধ্যে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় সারির দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আছে দুই জয়। বাংলাদেশ জিতেছে কাছাকাছি শক্তি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টের জয়টাই কেবল আছে আলাদা মূল্য।
বাকি বড় জয়গুলো সবই এসেছে ঘরের মাঠে, ভীষণ অনুকূল কন্ডিশনে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান আর বোলারদের পরিসংখ্যানও খুব আশা জাগানিয়া নয়। এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে ৫৪ টেস্টে (একশোর বেশি ইনিংস) খেলে মাত্র ১৭ বার করতে পেরেছে তিনশোর বেশি রান। ব্যাটসম্যানরা অবশ্য সেঞ্চুরি পেয়েছেন ২১টি। বাকি ২৯ সেঞ্চুরি এসেছে ঘরের মাঠে।
ব্যাটসম্যানরা দেশের বাইরে অনেক সময়ই পান রান বান্ধব উইকেট। সেক্ষেত্রে দলে মানসম্মত পেসার না থাকায় বোলিং আক্রমণকেই ভুগতে হয়েছে বেশি। দেশের বাইরে এতগুলো টেস্ট খেলে বোলাররা ৫ উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১৬ বার। স্পিনারদের মধ্যে গত বছর সর্বশেষ ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। পেসারদের পরিসংখ্যান পীড়াদায়ক আরও বেশি। সর্বশেষ ৫ উইকেট খুঁজতে হলে যেতে হবে ২০১৩ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রবিউল ইসলাম।
অথচ দেশের মাঠে বাংলাদেশের বোলাররা ৫ উইকেট নিয়েছেন মোট ৪১ বার। যার অধিকাংশই অবশ্য স্পিনারদের নেওয়া। আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের বাইরে ভারত সফরের টেস্টসহ মোট ৮ টেস্ট খেলতে হবে বাংলাদেশকে। একটি ছাড়া এর সবগুলোই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। দেশের বাইরে খেলার দলের বেহাল দশা জানা আছে অধিনায়ক মুমিনুল হকের। তার কাছে মনে হচ্ছে সামনে পড়তে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জে, ‘দেশের বাইরে টেস্ট খেলা সবসময় চ্যালেঞ্জিং আমার কাছে মনে হয়। আমরা দেশের বাইরে খুব একটা ভালো খেলতে পারি না। এটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং সত্যি কথা বলতে। অনেক চাপ থাকে, সেভাবে সবাইকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। অনুশীলন করতে হবে।’
Comments