শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় আসছেন ‘চীনপন্থি’ রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারো এলো পরিবর্তন। কলম্বোর ক্ষমতার আসনে কে বসবেন, তা নিয়ে সবসময়ই আঞ্চলিক উত্তেজনা দেখা যায়। ভারতীয় মহাসাগরের এই ছোট দ্বীপদেশটির সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ভারত। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার এই বৃহৎ দেশটির রয়েছে ব্যাপক প্রভাব।
Gotabaya Rajapaksa
১৭ নভেম্বর ২০১৯, শ্রীলঙ্কায় সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে বিজয়ী গোতাবায়া রাজাপাকসে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছেন। ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারো এলো পরিবর্তন। কলম্বোর ক্ষমতার আসনে কে বসবেন, তা নিয়ে সবসময়ই আঞ্চলিক উত্তেজনা দেখা যায়। ভারতীয় মহাসাগরের এই ছোট দ্বীপদেশটির সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ভারত। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার এই বৃহৎ দেশটির রয়েছে ব্যাপক প্রভাব।

কিন্তু, বসে নেই ভারতের প্রতিবেশী ও এশিয়ার বৃহত্তম শক্তিশালী দেশ চীন। তারাও দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলছে দীর্ঘদিন থেকে। অর্থনৈতিক ঋণের মাধ্যমে চীন শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করলেও লঙ্কাবাসীদের মন পুরোপুরি জয় করতে পারেনি মহাপ্রাচীরের দেশটি। মূলত, ভারতবিরোধী মনোভাব নিয়ে বা শ্রীলঙ্কায় ভারতের একাধিপত্য ঠেকাতে লঙ্কাবাসীদের মাঝে-মাঝে বেছে নিতে হয় ভারতবিরোধী দলকে।

আবার শ্রীলঙ্কায় যেনো চীনের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত না হয় সেজন্যে দ্বীপবাসী মাঝে-মধ্যে বেছে নেন এমন একটি দল যাদের রয়েছে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।

এবারের নির্বাচনে লঙ্কাবাসী বেছে নিয়েছেন ভারতবিরোধী তথা চীনপন্থি দলকে। দেশটিতে জাতিগত সংখ্যালঘু তামিলদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে গড়ে উঠা দীর্ঘ ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তুলতে মহীন্দ্র রাজাপাকসে চীনের সহযোগিতা নিয়েছিলেন। তার দেশে ভারতের প্রভাব কমানোর চেষ্টা করেছিলেন।

রাজাপাকসের পর শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতায় আসেন ‘চীনবিরোধী’ মৈত্রীপাল সিরিসেনা। তিনি রাজাপাকসের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা সববিরোধী দলের ‘একক প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচিত হন ২০১৫ সালে।

সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন রাজাপাকসে। তবে তিনি মহীন্দ্র রাজাপাকসে নন। তিনি হলেন তার ছোটভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে। এদিকে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ‘ভারতপন্থি’ ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) পক্ষ থেকে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি রানাসিংগে প্রেমাদাসার ছেলে সজিত প্রেমাদাসাকে সমর্থন দেওয়া হয় গোতাবায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে। তবে কলম্বোর ক্ষমতায় লঙ্কাবাসী এবার বেছে নিয়েছে ‘চীনপন্থি’ গোতাবায়াকে।

সজিত প্রেমাদাসা নির্বাচনে তার পরাজয় মেনে নিয়েছেন। পাশাপাশি, ইউএনপির দলীয় পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বিজয়ী গোতাবায়া রাজাপাকসেকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা।

বিগত বেশকিছু বছর ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদল চলছে। তবে সব পরিবর্তনই হচ্ছে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এক বার্তায় সজিত প্রেমাদাসা বলেন, “আমি জনগণের রায় মেনে নিচ্ছি এবং শ্রীলঙ্কার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে গোতাবায়া রাজাপাকসেকে স্বাগত জানাচ্ছি।” একইসঙ্গে তিনি ইউএনপির উপ-প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

গোতাবায়া রাজাপাকসে ছিলেন দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব। ২০০৫ সাল থকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষা সচিব থাকাকালে তিনি শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের অবসান দেখেছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।

আজ (১৭ নভেম্বর) শ্রীলঙ্কার স্থানীয় সময় বিকালে নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হবে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, প্রাথমিকভাবে ভোট গণনার পর দেখা যায় গোতাবায়া রাজাপাকসে এগিয়ে রয়েছেন।

এক টুইটার বার্তায় গোতাবায়া রাজাপাকসে লিখেন, “যদিও এখনো আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশিত হয়নি, তবুও দেখা যাচ্ছে আমরা বেশি ভোট পেয়েছি।”

“শ্রীলঙ্কার নতুন যাত্রা আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শ্রীলঙ্কার সবাই এই যাত্রার অংশীদার। আমরা যেভাবে মর্যাদা, নিয়মানুবর্তিতা ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণা করেছিলাম সেই একই রীতিতে বিজয়ানন্দ করতে পারি,” যোগ করেন ‘ছোট’ রাজাপাকসে।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago