দাম বাড়ার গুজবে লবণ কেনার হিড়িক
লবণের দাম বাড়তে চলেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় দোকানে দোকানে ক্রেতারা ভিড় করেছেন। গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গুজব ছড়ানোর পর আজ মঙ্গলবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় লবণ বিক্রির হিড়িকের খবর পাওয়া গেছে।
তবে দেশে লবণের কোনো ধরনের স্বল্পতা না থাকার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসেন বলেছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে তা চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি।
তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট অনলাইন মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।
গুজব ছড়ানোর পর ঢাকায় বিভিন্ন বাজারে মুদির দোকানে লবণ কিনতে আসা মানুষের ভিড় দেখা যায়। উদ্বিগ্ন অনেকেই স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে লবণ কিনেছেন। অনেকেই ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত লবণ কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে দ্য ডেইলি স্টারের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গুজব ছড়ানোর পর পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জে লবণ বিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে এখানে ক্রেতা বিক্রেতা উভয় পক্ষই বলেছেন লবণের দাম এক টাকাও বাড়েনি। গত কয়েক মাস ধরে এ দামেই লবণ বিক্রি হচ্ছে। তবে হঠাৎ বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী লবণ দিতে পারছেন না বিক্রেতারা। নিতাইগঞ্জ এস আর টেডিংয়ে বিক্রেতা বাবু মিয়া বলেন, “ফেসবুক একটা খবর বের হয়েছে যে লবণ সংকট। কিন্তু বাজারে কোনো সংকট নেই। এ খবরের পর চাহিদার চেয়ে বেশি লবণ বিক্রি হয়েছে কিন্তু সেটাও পুরানো দামেই। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ১০ বস্তা বিক্রি হয় সেখানে ৫০ বস্তা লবণ বিক্রি হয়েছে।”
আবু হানিফ নামের এক ক্রেতা জানান তিনি লবণ সংকটের খবর ফেসবুকে জেনেছেন। কিন্তু বাজারে এসে জেনেছেন যে এটি গুজব। সংকট ও দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
ওই বাজারে পুলিশের একটি টিম টহল দিতে দেখা গেছে।
এই গুজব কুমিল্লাতে ছড়ালেও আমাদের সংবাদদাতা জানান, জেলার বড় পাইকারি বাজার চকবাজার ও রাজগঞ্জ খুচরা বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই। তবে ফেসবুকে লোকজন গুজবের কথা জেনে লবণ কিনতে দোকানে ভিড় করেছেন।
অন্যদিকে পিরোজপুরে বিক্রির হিড়িক পড়ায় দোকানগুলোতে লবণ সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানকার একজন দোকানদার টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন যে তার দোকানের সব লবণ বিক্রি হয়ে গেছে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশি দরে লবণ বিক্রি হচ্ছে- এমন গুজবে লবণ কেনার হিড়িক পড়েছে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে। অনেক দোকানে লবণ না পেয়ে দিগ্বিদিক দৌড়াচ্ছেন ক্রেতারা।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সরেজমিনে শহরের দুধবাজার এলাকায় গিয়ে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতাদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে ফোন পেয়ে ৪-৫ কেজি করে লবণ কিনেছেন। বিক্রেতারা নির্ধারিত দামের চেয়ে অল্প কিছু টাকা বেশি নিয়েছে বলে জানান তারা।
মাসুদুর রহমান নামের এক ক্রেতা জানান, তার প্রতিবেশীরা সবাই পাঁচ থেকে ১০ কেজি করে লবণ কিনেছেন।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস জানান, গুজব ঠেকাতে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।
দেশে লবণের চাহিদার চেয়ে মজুদ অনেক বেশি রয়েছে জানিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ-বছরে লবণ মৌসুমে (নভেম্বর-মার্চ) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬.৫৭ লাখ মে. টন। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ১৮.২৪ মে. টন উৎপাদিত হয়েছে। এ বছরের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে লবণের মজুতের পরিমাণ ৬.৫০ লাখ মে. টন, যা প্রায় ৫-৬ মাসের চাহিদার সমপরিমাণ।
আরও পড়ুন:
Comments