সরকারকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিলেন ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
Mirza-Fakhrul.jpg
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: স্টার

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

আজ (২০ নভেম্বর) সকালে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সফরে এসে শহরের কালীবাড়ির বাসভবনে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার আর কতো ইস্যু সৃষ্টি করবে তাদের ব্যর্থতা দিয়ে। যখন একটা সরকার দেশে জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়, তখন সর্বক্ষেত্রে তার ব্যর্থতাগুলো ধীরে ধীরে আসতে থাকে। তারা রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে, পুলিশ প্রশাসন বা অন্যান্য বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ধীরে ধীরে সেই নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতের বাইরে চলে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে যে রাজনৈতিক দলটি সবসময় গণতন্ত্রের কথা বলেছে। তাদের নেতা ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলে আন্দোলন করেছেন। সেই দলটাই একবার ১৯৭৫ সালে আর এখন ধীরে ধীরে তার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে একটা অভিনব পদ্ধতিতে ছদ্মবেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে চলে এসেছে। আর এটা করতে গিয়ে তাদের সংবিধান পরিবর্তন করতে হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করে ফেলেছে। যেমন বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগের একটা স্বাধীনতা আছে। এটা হলো রাষ্ট্রের প্রধান বিষয়। রাষ্ট্রের প্রধান বিষয় হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম। এই বিষয়গুলো পুরোপুরিভাবে চলে গেছে। পার্লামেন্ট বলতে আর কিছুই নেই। সেখানে একদল ছাড়া দুই দল বলতে কিছুই নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের একটা দলের পক্ষে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।”

মানুষের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে না কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর পক্ষে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে লড়াই করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এরপরও প্রতিরোধ আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছে। আমার বিশ্বাস গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে।”

দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ক্রমান্বয়ে নষ্ট হয়েছে। এখানে ক্ষমতায় টিকে থাকাটাই প্রধান লক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা করতে গিয়ে যতো রকমের নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করছি। ছাত্রদের ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর বাহিনী হিসাবে। আগে আমরা দেখতাম ছাত্র সংগঠনগুলো জাতির সমস্যাগুলো নিয়ে একত্রিত হতো, প্রধান ভূমিকা রাখতো। ছাত্রদের শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর ঢাল হিসেবে নয়, দেশের কথা চিন্তা করা, পরিবর্তনের কথা চিন্তা করা, সমাজ বদলে দেওয়ার মতো কাজগুলো নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।”

দেশের চলমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পথ সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “এই সংকটের সময় জাতির দিকে তাকিয়ে নিজ দল-গোষ্ঠী থেকে উঠে আসতে হবে। দেশ এখন ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। যেখানে যান ন্যায়বিচার পাবেন না। এখান থেকে উঠে দাঁড়াতে হলে খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীর সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তিনি গণতন্ত্রমনা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করেন। খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হলে, দেশে যে সংকট রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে পারতো। সরকার যদি খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তার পরামর্শ নেন, তবে দেশ সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারতো।”

লবণ-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “লবণ-পেঁয়াজ সংকট সরকারের ব্যর্থতার ফসল। সরকার কেনো জানলো না, লবণ-পেঁয়াজের এ সমস্যা হবে। এর কারণ এসবের দিকে তাদের নজর নেই। তাদের নজর শুধু মেগা প্রজেক্ট তৈরি করবে, টাকা বানাবে। টাকা বানিয়ে বিদেশে পাচার গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বলছে- দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।”

সড়ক আইন নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের সরকারগুলো বরাবরই কোটারি শ্রমিক শ্রেণির কাছে জিম্মি হয়ে থাকে। তবে সরকার যে সড়ক আইন করেছে, তা বাস্তবসম্মত হয়নি। যেটা বাস্তবসম্মত সেটা আলাপ আলোচনা করার পর বাস্তবায়ন করতো, তাহলে শ্রমিকদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তা হতো না। এখানে সমস্যাটা হলো সরকার তো মনে করে না এসব বিষয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। সড়ক আইনটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়ন করা উচিত। আইন শক্ত হওয়া উচিত পাশাপাশি আইনের প্রয়োগও থাকতে হবে “

বিএনপি থেকে নেতা-কর্মীদের দলত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপি একটি স্রোতস্বিনী নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো। এখানে কখনও কখনও জল এসে পড়ে। আবার কখনও কখনও চলে যায়। তাতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার কোনো ক্ষতি হয় না। বিএনপিরও তেমনি। অনেক লোক এসেছে-গেছে। এরপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে।”

দলের ভেতর নিজের সমালোচনা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি একটা গণতান্ত্রিক দল। দলের মধ্যে এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে। এটা একটা গণতন্ত্রের অংশ। তা না হলে বিএনপি তো বন্ধ্যতার মধ্যে পরবে।”

সেসময় জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago