মাত্র এক ডলারের হোটেল, তবে...

জাপানের এক ডলারের হোটেলের ভেতরের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

গত ২০ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী পর্যটকেরা একটি ইউটিউব স্ট্রিমে লগইন করে অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখতে পান। তারা অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো কোনো ভ্রমণ-পিপাসু ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে তার হোটেলের রুম, বিছানা, বারান্দা- সবকিছু দেখাতে থাকবেন আর উচ্চস্বরে চেঁচাতে থাকবেন।

কিন্তু, পর্দায় ভেসে উঠলো একটি শূন্য চেয়ার। তার পাশে দেয়ালের হোয়াইট বোর্ডে লেখা ‘আজ অতিথি আসবেন না...’। স্ক্রিনে ‘এমন তো হয়ই!’, ‘নীরব রাত কাটাতে প্রস্তুত হন’- এমন সব মন্তব্য ভেসে আসতে থাকে।

কয়েক মুহূর্ত পরই চেয়ারে এসে বসলেন তেতসুয়া ইনোই। জাপানের ফুকুওকায় অবস্থিত আসাহি রিয়োকান হোটেলের ম্যানেজার তিনি। ধৈর্য ধরে বর্ণনা করে চলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সদ্য ভাইরাল হওয়া ৮ নম্বর ঘরটি সম্পর্কে।

“মাত্র ১ ডলারের বিনিময়ে এই রুমটিতে এক রাত কাটাতে পারবেন অতিথিরা। কিন্তু, তাদেরকে সর্বক্ষণ লাইভ স্ট্রিমে থাকতে হবে। কোনোরকম যৌন কার্যকলাপ নয়, শুধুমাত্র ঘরে তাদের চলাফেরা এবং অন্যান্য কাজকর্মের সবকিছুই পর্দায় লাইভে দেখা যাবে।”

জাপানের এক ডলারের হোটেলের বাইরের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

ইনোই গণমাধ্যমকে বলেন, “এই ধারণাটি একেবারেই নতুন। আর কোনো হোটেলে এ জাতীয় কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয় না। আমি এই ধারণাটি পেয়েছি একজন ব্রিটিশ পর্যটকের কাছ থেকে। তিনি রুমে থাকাকালীন পুরো সময়ই তার কার্যকলাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করে গেছেন। তখন আমার মনে হয়েছে, এরকম কিছু একটা চালু করা যেতে পারে।”

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে গতকাল (২১ নভেম্বর) বলা হয়, জাপানের ফুকুওকায় এই হোটেলটিতে মোট ১০টি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরে এক রাত থাকতে খরচ হয় ২৭ ডলার। শুধুমাত্র ৮ নম্বর ঘরটিতে থাকার জন্য, এক রাত লাইভ স্ট্রিমের চুক্তি অনুযায়ী অতিথিদের খরচ হবে মাত্র এক ডলার।

ম্যানেজার ইনোই গণমাধ্যমকে আরও বলেন, “স্বল্প সজ্জিত এ ঘরে একটি টেবিলের উপরে ক্যামেরাটি এমনভাবে বসানো হবে যাতে করে টয়লেট এবং কমনস্পেসসহ পুরো রুমটি ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা যায়। কিছু গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ঘরটিতে কোনো মাইক্রোফোন রাখা কিংবা শব্দ রেকর্ড করা হবে না। তবে, কোনো অতিথি যদি শব্দ রেকর্ড করার ব্যাপারে আগ্রহী হন তাহলে মাইক্রোফোন বসানো হবে।”

‘ওয়ান ডলার হোটেল’ রুমের জন্য অন্যান্য সর্তকতাও রয়েছে। অতিথিদের পাসপোর্ট এবং ক্রেডিট কার্ড নম্বরের মতো ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা হবে এখানে।

তিনদিন আগে শুরু হওয়া ‘ওয়ান ডলার হোটেল’ প্রকল্পে মোট কতোজন অতিথি এই চ্যালেঞ্জটি নিয়েছেন তা জানা যায় না। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তরও দেননি ইনোই। তবে, তার একটি বিকল্প পরিকল্পনাও আছে। তিনি তার অফিসে একটি ক্যামেরা বসিয়েছেন এবং সবসময় তার অফিসে কীভাবে তিনি কাজ করছেন, ভক্তদের সঙ্গে কথা বলছেন তা লাইভ স্ট্রিমিং করছেন।

অনলাইন লাইভে জাপানের এক ডলারের হোটেলের ম্যানেজার তেতসুয়া ইনোই। ছবি: সংগৃহীত

ইনোইর এই পরিকল্পনা অর্থনৈতিকভাবে বেশ সফল হয়েছে। আগে এই সাদামাটা হোটেলের ইউটিউব চ্যানেলে মাত্র তিন হাজার সাবস্ক্রাইবার ছিলো। এখন প্রতি ঘণ্টায় গড়ে চার হাজার লোক চ্যানেলটি দেখছে। ফলে, বিজ্ঞাপন থেকে ইনোই পাচ্ছেন ব্যাপক অর্থ।

বর্তমানে ইনোইকে সকাল-বিকাল ইউটিউবে ‘শুভ সকাল’, ‘শুভ সন্ধ্যা’, ‘কেমন আছো সবাই?’ ইত্যাদি বলে চেঁচাতে দেখা যায়। দৈনন্দিন সব কাজকর্ম তিনি এখন ক্যামেরার সামনেই করছেন। রাতের বেলাও তাকে একটি সাদা কম্বল জড়িয়ে ঘুমাতে দেখা যায়, আর তার পাশে হোয়াইটবোর্ডে লিখা থাকে ‘তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন’।

ভিডিওর নিচে আপনি অন্যদের “আশ্চর্য! আমি কেনো একজন লোককে ঘুমোতে দেখছি!” এমন মন্তব্যও দেখতে পাবেন।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago