দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, মাদকে জড়িতদের ছাড়ব না: প্রধানমন্ত্রী
যুবলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ ও মাদক ব্যবসায় জড়িতরা যেই হোক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আজ ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম সম্মেলন উদ্বোধন করে ভাষণে এই কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “সন্ত্রাসী-জঙ্গি-মাদক ব্যবসায়ী যে-ই হোক, কাউকে ছাড় দেব না। চলার পথে কেউ যদি বিপথে যায় এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতিতে জড়ায়, সে যেই হোক আমি তাদের ছাড়ব না। তাদের প্রতি আমার কোন সহানুভূতি থাকবে না।”
বৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগের নেতাদের নাম উঠে আসার পর থেকে ভাবমূর্তি সংকটে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের এই সহযোগী সংগঠনটি। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত বেশ কয়েকজন নেতাকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরকম এক প্রেক্ষাপটে আজ যুবলীগের সম্মেলন শুরু হলো।
কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে যুবলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দিনরাত পরিশ্রম করছি দেশের উন্নয়নের জন্য। এটা বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে ছাড় দেওয়া হবে না।”
যুব লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলামের সভাপত্বিতে আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন। যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ সম্মেলনে সংগঠনটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
আওয়ামী যুবলীগ ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর জাতির পিতার নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের শিকার বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে দৈনিক বাংলার বানী সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুবলীগ সংগঠনের যেন কোনরকম বদনাম না হয়। তারা যেন সম্মান নিয়ে চলতে পারে এবং আদর্শ নিয়ে চলে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই সংগঠনটাকে গড়ে তুলতে হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, এই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। কোন উড়ে এসে জুড়ে বসা এবং ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগীদের মাধ্যমে এই সংগঠন গড়ে ওঠে নাই।
তিনি বলেন, এ সংগঠন গড়ে উঠেছে নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করবার লক্ষ্য নিয়ে। সেই সাথে সাথে আওয়ামী লীগের প্রতিটি সহযোগী সংগঠনও এদেশের মানুষের কল্যাণ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কাজ করে অনেকে টাকা বানাতে পারে। এই টাকা দিয়ে হয়তো জৌলুস করতে পারে, চাকচিক্য বাড়াতে পারে, আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্র্যান্ডের জিনিস পরতে পারে, কিন্তু তাতে সম্মান পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, এতে হয়তো নিজের ভোগের ভেতর দিয়ে একটা আত্মতুষ্টি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দেশের মানুষের কাছে মর্যাদা পাওয়া যায় না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
দেশ গড়ার জন্য যুব সমাজের মেধা ও মননকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ মনোযোগ দিয়ে পাঠ করে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ওঠে কীভাবে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করা যায়, তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিগত প্রায় ১০ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের ওপরে অনেকে বদনাম দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি কারণ সততার শক্তি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।
তিনি এ সময় পদ্মা সেতুর বিদেশি অর্থায়ন বন্ধের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদের দেশেরই কিছু স্বনামধন্য লোক যাদের একসময় ব্যবসা দিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠতে আমিই সাহায্য করেছি। তারা সে সময় আন্তর্জাতিক সম্মাননা নিয়ে আসল অথচ দেখা গেল বয়স হয়েছে কিন্তু একটা ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়তে পারে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এদিকে নোবেল প্রাইজ পায় কিন্তু একটি ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়ে না।
তিনি বলেন, সেই পদ কেন বয়সের কারণে ছাড়তে হলো সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পদ্মা সেতু বন্ধে আমেরিকা গিয়ে ধর্না দিল এবং তারা আমাদের ওপর দোষ দিল দুর্নীতির।
প্রধানমন্ত্রী সে সময় চ্যালেঞ্জ নিলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দুর্নীতি প্রমাণে ব্যর্থ হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যখন দুর্নীতি খুঁজতে গেছে তখন খালেদা জিয়া তারেক রহমান এবং কোকোর দুর্নীতিই বেরিয়েছে, আরও অনেকেরটা বেরিয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের কোন দুর্নীতি পায়নি। বরং আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে যাচ্ছি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার ঘটনার সাদৃশ্য খুঁজে বেড়ানো বিএনপি নেতৃবৃন্দের কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি বিএনপি নেত্রী, যিনি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেন, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে। তার তুলনা করে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে। তার তুলনা করে কার সঙ্গে? আমি তো মনে করি, এটা করে নেলসন ম্যান্ডেলাকে অপমান করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলা তার জাতির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে কারাগারে ছিলেন। দুর্নীতি করে কারাগারে যাননি।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকার সময়ে তাকে হত্যার প্রচেষ্টায় আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যা এবং একাধিকবার হত্যা প্রচেষ্টার ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই সম্মেলনে সারাদেশের ৭৭ টি সাংগঠনিক জেলা থেকে প্রায় ২৮ হাজার কাউন্সিলর অংশ নিয়েছেন। বিকেলে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে।
Comments