মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধে খেলা তৃতীয় দিনে

দ্বিতীয় সেশনে ভারতের টপাটপ উইকেট পড়া দেখেই জমেছিল শঙ্কা। বাংলাদেশের পেসাররা যে ধরনের মুভমেন্ট আর স্যুয়িং পাচ্ছিলেন, না জানি ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবরা এখানে কি করেন। দুই দিনেই না শেষ হয়ে যায় এই ঐতিহাসিক টেস্ট! বাংলাদেশ ১৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কেবল শঙ্কা নয়, মনে হচ্ছিল, হয়তো সত্যিই হতে যাচ্ছে তেমন কিছু। শেষ পর্যন্ত যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হলো না, তার প্রথম কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের, বাকিটা মুশফিকুর রহিমের।
Mushfiqur Rahim
ফাইল ছবি

দ্বিতীয় সেশনে ভারতের টপাটপ উইকেট পড়া দেখেই জমেছিল শঙ্কা। বাংলাদেশের পেসাররা যে ধরনের মুভমেন্ট আর স্যুয়িং পাচ্ছিলেন, না জানি ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবরা এখানে কি করেন। দুই দিনেই না শেষ হয়ে যায় এই ঐতিহাসিক টেস্ট! বাংলাদেশ ১৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর কেবল শঙ্কা নয়, মনে হচ্ছিল, হয়তো সত্যিই হতে যাচ্ছে তেমন কিছু। শেষ পর্যন্ত যে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হলো না, তার প্রথম কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের, বাকিটা মুশফিকুর রহিমের।

ইডেন গার্ডেন্সে উপমহাদেশের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্ত হতাশাজনক ইতিহাস লেখার অবস্থা তৈরি হয়েছিল। এখনও অবশ্য বাংলাদেশ বড় হারেরই পথে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৫২ রান করেছে তারা। ইনিংস হার এড়াতেই দরকার আরও ৮৯ রান।

তবে তার আগে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের লড়াই না হলে, বহু আগেই খড়কুটোর মতো উড়ে যেত দল। এইটুকু প্রতিরোধ না করা গেলে, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আশার কোনো পথও খোলা থাকত না। 

ইডেনে প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনের বিকেলে স্যুয়িং, মুভমেন্ট পাওয়া গেল দ্বিগুণ। ৪ উইকেটে ২৮৯ রান নিয়ে বিরতিতে যাওয়া ভারত দ্বিতীয় সেশনে তাই ৪২ রানেই হারায় ৫ উইকেট। পরিস্থিতি দেখে ৯ উইকেটে ৩৪৭ করে ইনিংস ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠান বিরাট কোহলি।

২৪১ রানের লিড থাকলে যেকোনো অধিনায়কই তা করতেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দুই ওপেনারের ইশান্ত-উমেশদের সামলানোর সাধ্য ছিল না। পারেননিও তারা। প্রথম ওভারেই ইশান্তের বলে ফেরেন সাদমান ইসলাম।

নিজের অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় টেস্টেই 'পেয়ার' পেয়ে খানিক পরই বিদায় মুমিনুল হকের। ইশান্তের সাঁই সাঁই করে ভেতরে ঢোকা বলে তড়িঘড়ি করে ব্যাট নামিয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু নিজের শরীর ছিল না বলের পেছনে। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ যায় তাই উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসে।

আবারও চারে নেমে নিজের দলে থাকা প্রশ্নবিদ্ধ করে আউট হন মোহাম্মদ মিঠুন। ঠিক প্রথম টেস্টের মতই পুল করে পার করতে পারেননি শর্ট মিডউইকেটও। চূড়ান্ত ব্যর্থ ইমরুল কায়েস নিজের স্কিলের ঘাটতি দেখিয়ে ইশান্তেরই শিকার হন।

ম্যাচ রিপোর্ট লিখে ফেলারই তোড়জোড় সবার। মাহমুদউল্লাহ নেমে তখনই বদলে দেন পরিস্থিতি। স্টান্স (ব্যাটিংয়ের ধাঁচ) বদলে মিডল স্টাম্পে গার্ড নিয়ে ইশান্ত-উমেশ-মোহাম্মদ শামিদের সামলেছেন দারুণভাবে। খেলেছেন ইতিবাচক অ্যাপ্রোচে। চেপে ধরা পেসের ঝাঁজ সরিয়েছেন সাহস আর মুন্সিয়ানায়।

আরেক পাশে মুশফিক ছিলেন সাবলীল। ছিলেন আস্থার প্রতীক হয়ে। দুজনের জুটি জমে উঠেছিল বেশ। মনে হচ্ছিল, দিন পার করে দেবেন তারাই। ৬৯ রানের জুটির পর বিপত্তি। ৪১ বলে ৩৯ করা মাহমুদউল্লাহ হ্যামস্ট্রিংয়ে বাজে চোট পেয়ে আর থাকতে পারলেন না মাঠে।

পরে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে আরও ৫১ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। গোলাপি বলে তুলে নেন দেশের হয়ে প্রথম ফিফটি। পুরো কলকাতা টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য। ভারতীয় গ্যালারিও করতালিতে অভিনন্দন জানায় তাকে।

মিরাজ পরে টিকতে পারেননি ইশান্তের চতুর্থ ছোবলে। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটে মাহমুদউল্লাহরও তখন আর নামার অবস্থা নেই। তাইজুল ইসলামকে নিয়ে দিনটা প্রায় পারই করে দিয়েছিলেন মুশফিক, একদম শেষ বলে তাইজুল আউট হতেই শেষ হয় দিনের খেলা।

এর আগে দিনের শুরুর সেশন রাঙান কোহলি। চোখ ধাঁধানো শট খেলে দর্শকদের আনন্দে মাতান, ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরি করে দলকে পাইয়ে দেন বড় লিড। তার ১৩৬ রানের ইনিংসের ইতি ঘটে তাইজুলের অসাধারণ এক ক্যাচে। বাংলাদেশের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন আল-আমিন হোসেন ও ইবাদত হোসেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

(দ্বিতীয় দিন শেষে)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০.৩ ওভারে ১০৬

ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৭৪/৩) ৮৯.৪ ওভারে ৩৪৭/৯ (ইনিংস ঘোষণা) (মায়াঙ্ক ১৪, রোহিত ২১, পূজারা ৫৫, কোহলি ১৩৬, রাহানে ৫১, জদেজা ১২, ঋদ্ধিমান ১৭*, অশ্বিন ৯, উমেশ ০, ইশান্ত ০, শামি ১০*; আল আমিন ৩/৮৫, আবু জায়েদ ২/৭৭, ইবাদত ৩/৯১, তাইজুল ১/৮০)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৩২.৩ ওভারে ১৫২/৬ (সাদমান ০, ইমরুল ৫, মুমিনুল ০, মিঠুন ৬, মুশফিক ৫৯*, মাহমুদউল্লাহ ৩৯ (আহত অবসর), মিরাজ ১৫, তাইজুল ১১; ইশান্ত ৪/৩৯, উমেশ ২/৪০, শামি ০/৪২, অশ্বিন ০/১৯)।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago