বাঁধ পুনরুদ্ধার, তীর রক্ষা ও নদী-খাল খনন শিখতে আমেরিকা-ইংল্যান্ড যাচ্ছেন ৪ কর্মকর্তা

খাল খননের কৌশল শিখতে আমেরিকা ও ইংল্যান্ড যাচ্ছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের একটি দল। তাদের মধ্যে শিগগিরই অবসরে যাবেন এমন কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

বোর্ডের প্রকৌশলী এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বিত দলটি নদী-খাল খনন, নদীর তীর রক্ষা এবং বাঁধ পুনরুদ্ধার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে দুই সপ্তাহের ‘ভ্রমণে’ আমেরিকা ও ইংল্যান্ড যাচ্ছেন। অথচ এ ধরনের কাজ তারা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে করে চলেছেন।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই সফরের জন্য চার কর্মকর্তার নাম অনুমোদন দিয়েছে। দলের একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী সফরের ২০ দিন পর অবসর নেবেন। আরেকজন প্রকৌশলী অবসরে যাবেন পাঁচ মাস পর। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অবসরে যাবেন এক বছরের কম সময়ের মধ্যে।

এই সফরে যারা যাচ্ছেন তারা হলেন- বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক একেএম শামসুল করিম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন এবং সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. রুহুল আমিন। তাদের সঙ্গে থাকবেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের একটি প্রকল্পের অংশ এই সফর। প্রকল্পটি ১৯৫ কোটি টাকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সমন্বয় সঙ্গে সম্পৃক্ত সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. রুহুল আমিন। এছাড়া অন্য তিন সরকারি কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

সফরের তিনদিন আগেও কর্মকর্তারা আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের কোন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন তা জানাতে পারেননি। এমনকী, তারা নতুন করে কী শিখতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তাও জানাতে পারেননি।

বিডব্লিউডিবি’র প্রকৌশলীদের জন্য মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূলে একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে। এছাড়া, কাপ্তাই ট্রেনিং ইনস্টিটিউটেও পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যয়বহুল এমন বিদেশ সফরগুলো হাস্যকর এবং জনগণের অর্থের অপচয়-মাত্র।

তারা কী শিখবেন জানতে চাইলে সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমরা শিকাগো বন্দরের পরিচালনা সম্পর্কে শিখবো এবং আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নদী, নদীর তীর এবং উপকূল ব্যবস্থাপনা দেখবো।”

এসব শিখতে তারা কোন প্রতিষ্ঠানে যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ডকইয়ার্ড এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড সম্ভবত এই সফরটি পরিচালনা করার জন্য একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। সম্ভাব্য কিছু প্রোগ্রাম রয়েছে, তবে আমি এ সম্পর্কে খুব বেশি জানি না।”

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মটি সফরসূচি এবং ব্যয়ের হিসাব দেখবে বলে জানান তিনি। তবে ফার্মটির নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান।

জনপ্রতি সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। তবে তা পরিবর্তন হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন সেই কর্মকর্তা।

আসছে ডিসেম্বরে অবসর নিতে যাওয়া শামসুল করিমকে এই প্রশিক্ষণ দিলে দেশের মানুষ কীভাবে উপকৃত হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই প্রশ্নের জবাব ভালোভাবে দিতে পারবে।”

তিনি আরও জানান, তিনি কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সফরের প্রস্তাব করেছিলেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড এর অনুমোদন দেয়। অতিরিক্ত সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

আগামী মে মাসে অবসর নিতে যাওয়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেনকে মোবাইলফোনে একই প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, “আপনি এই তথ্য দিয়ে কী করবেন?” এরপর আরও কথা বলতে চাইলে তিনি লাইন কেটে দেন।

মন্ত্রণালয় কেনো খুব শিগগিরই অবসর নিতে যাওয়া প্রকৌশলীদের এ ধরনের প্রশিক্ষণমূলক সফরে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে তা জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম বলেন, “সাধারণত আমরা বোর্ডের পরামর্শে হস্তক্ষেপ করি না।”

প্রশাসনের কর্মকর্তা হয়ে তিনি কেনো এমন প্রশিক্ষণমূলক সফরে যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে।”

সরকারি তথ্য অনুসারে, মাহমুদুল ইসলাম অক্টোবরে কমপক্ষে দুটি বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। যার একটি ছিলো হাঙ্গেরিতে এবং অপরটি জাপানে।

বুয়েটের পানিসম্পদ প্রকৌশলের অধ্যাপক আবদুল মতিন এমন সফর সম্পর্কে বলেন, “আমার জানা ছিলো না যে তাদের মতো সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার এবং নন-ইঞ্জিনিয়াররা বিদেশে যান নদীর তীরের সুরক্ষা, ড্রেজিং, খাল খনন ও বাঁধ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে জ্ঞান নিতে। এ বিষয়ে আমরা বুয়েটে পেশাদার প্রশিক্ষণ এবং কোর্স করিয়ে থাকি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবির সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলজিইডি প্রকৌশলীদের পেশাদার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।”

বাঁকখালী নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় এই বিদেশ সফরের প্রস্তাব প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন উপস্থাপন করেন। সাড়ে তিন বছরের প্রকল্পটি আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর ৪০ ভাগ ভৌত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন এই সফরটিতে অন্তত অর্ধকোটি টাকা খরচ হবে।

গত ১৭ নভেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক অধ্যাদেশ অনুযায়ী এই কর্মকর্তারা সফরের সময় কর্মরত হিসেবে গণ্য হবেন এবং নিয়মিত বেতন-ভাতা পাবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলেন, “প্রযুক্তিগত বিষয় শিখতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন অফিসারের এতো ব্যয়বহুল ভ্রমণে দেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ অতিরিক্ত সচিব মাহমুদুল ইসলাম যেকোনো সময় অন্য যেকোনো মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে যেতে পারেন।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শামসুল করিম এবং মীর মোশাররফের মতো পানি উন্নয়ন বোর্ডের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীরা এ যাবত ১৬,২৬১ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করেছেন যার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে রয়েছে ৫,৭৫৭ কিলোমিটার। ১,৩৮৮ কিলোমিটার নদী খনন করা ছাড়াও সবসমই তারা পানি ও নদী উন্নয়নমূলক নানাবিধ কাজ করে থাকেন।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago