পঞ্চম যুগে সুবর্ণা

টেলিভিশন নাটকের অভিনেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তকমাটি সুবর্ণা মুস্তাফার ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে ভুল বলা হবে না। বিটিভির সোনালি যুগের নাটকের অভিনেত্রী তিনি। বাবা বিখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফা। যোগ্য শিল্পীর যোগ্য কন্যা তিনি। অভিনেত্রী ছাড়া সুবর্ণা একজন সংসদ সদস্যও।
গুণী এই অভিনেত্রীর জন্মদিন আজ (২ ডিসেম্বর)।
নন্দিত এই অভিনেত্রী একইসঙ্গে টেলিভিশন নাটক, মঞ্চনাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অভিনয় ক্যারিয়ারে রয়েছে তার কেবলই সফলতার গল্প।
অভিনেত্রীদের মধ্যে একটি প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সুবর্ণা।
এদেশে টেলিভিশন নাটকে জুটি প্রথা গড়ে উঠেছিলো মূলত সুবর্ণা মুস্তাফা ও আফজাল হোসেনকে দিয়ে। ‘রক্তে আঙুর লতা’, ‘পারলে না রুমকি’সহ বেশকিছু নাটকে দুজনে জুটি হয়ে অভিনয় করেছিলেন।
আশির দশকে ‘নতুন বউ’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সুবর্ণা পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া এবছরও ‘গহীন বালচুর’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি পাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এটি তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা।
অভিনয়শিল্পে অবদানের জন্য সুবর্ণা মুস্তাফা পেয়েছেন একুশে পদক।
আশির দশকে ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার নায়িকা ছিলেন তিনি। তার বিপরীতে নায়ক ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। সালাহউদ্দিন জাকি পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ সেই সময়ের একটি আলোচিত সিনেমা।
১৯৮৪ সালে সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনয় করেছিলেন আরেকটি সিনেমায়। ‘নয়নের আলো’ শিরোনামের সিনেমায় তার নায়ক ছিলেন জাফর ইকবাল। এটিও একটি আলোচিত সিনেমা।
সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনীত অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘লাল সবুজের পালা’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘সুরুজ মিয়া’, ‘অপহরণ’, ‘দূরত্ব’, ‘হেডমাস্টার’, ‘কমান্ডার’, ‘খণ্ড গল্প ৭১’, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’।
স্কুলজীবনে প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন এই নন্দিত অভিনেত্রী। বিটিভির ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত নাটক- ‘রক্তে আঙুর লতা’ তার অভিনয় ক্যারিয়ারের সেরা কাজগুলির একটি। আরও বহু আলোচিত ও প্রশংসিত নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন।
বিটিভির প্রথম প্যাকেজ ধারাবাহিক নাটক ‘শিল্পী’র গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা। নাটকটির পরিচালক ছিলেন মামুনুর রশীদ।
‘কোথাও কেউ নেই’ বিটিভির আলোচিত ধারাবাহিক নাটকগুলির একটি। এ নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন মুনা চরিত্রে। দর্শকরা আজও মনে রেখেছেন মুনা চরিত্রটিকে।
দেশের খ্যাতনামা নাট্যদল ঢাকা থিয়েটারের হয়ে বেশকিছু মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে প্রথম অভিনয় করা নাটকটির নাম ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’। এছাড়াও, এই নাট্যদলের হয়ে তার অভিনয় করা নাটকগুলো হলো: ‘যৈবতি কন্যার মন’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘কসাই’, ‘কেরামত মঙ্গল’।
২০১৮ সালে সুবর্ণা মুস্তাফা কানাডায় ‘কাল্পনিক সত্যি কাহিনী’ শিরোনামের মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন বদরুল আনাম সৌদ। এটি ছিলো মঞ্চে সুবর্ণার সর্বশেষ অভিনয়।
এসময়েও অভিনয় করে যাচ্ছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী। বিটিভিতে বর্তমানে প্রচারিত হচ্ছে তার অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘লুকোচুরি লুকোচুরি’।
এছাড়া, সম্প্রতি ‘গণ্ডি’ নামের একটি নতুন সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন তিনি। সিনেমাটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের সব্যসাচী চক্রবর্তী।
জন্মদিন নিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, “জন্মদিনটি একটি বয়সের মানুষদের জন্য আনন্দের ও হইচইয়ের। সেটা মূলত ছোটদের। এই দিনটিতে তারা আনন্দ করবে, সুন্দর করে সময় কাটাবে।”
আজকের দিনটি কীভাবে কাটবে?- সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, “জীবন থেকে অনেকগুলো বছর কেটে গেলো। ৫৯ বছর শেষ করে আজ ৬০ বছরে পা দিলাম। সুন্দরভাবে কাটুক আগামী দিনগুলো- এটিই প্রত্যাশা। আজ বাসায়ই থাকবো। সন্ধ্যার দিকে কাছের মানুষরা আসবেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটাবো।
Comments