বিশ্বের অন্যতম নান্দনিক স্থাপত্য আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদ

শেখ জায়েদ মসজিদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ আবুধাবিতে যান এই মসজিদটি দেখতে।
Sheikh-Zayed-Mosque-1.jpg
আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

শেখ জায়েদ মসজিদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ আবুধাবিতে যান এই মসজিদটি দেখতে।

এতো মানুষ মসজিদটি দেখতে ভিড় জমালেও, শেখ জায়েদ মসজিদে রয়েছে এক ধরনের প্রশান্তি আর অদ্ভুত নীরবতা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে নান্দনিক এই মসজিদটি পর্যটকদের হতাশ করে না মোটেই। সারাবিশ্বের পর্যটকদের কাছে এটি কতোটা জনপ্রিয়, তার প্রমাণ ছোট একটি পরিসংখ্যান। শুধুমাত্র ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রায় চল্লিশ লাখ দর্শক এটি দেখে গেছেন।

২০১৮ সালে ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রিপ এডভাইজারের করা র‌্যাংকিংয়ে তৃতীয় জনপ্রিয় স্থাপনা হিসাবে উঠে আসে মসজিদটির নাম।

ছবি: সংগৃহীত

আবুধাবির জাঁকজমকপূর্ণ এই মসজিদটি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। প্রায় ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার এবং ১২ বছর সময় লাগে এর কাজ শেষ করতে। বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এই মসজিদটির আয়তন ২২ হাজার ৪১২ বর্গমিটার। যা প্রায় চারটি ফুটবল মাঠের সমান।

একসঙ্গে এই মসজিদে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নামাজ পরতে পারেন। এছাড়াও বৃহত্তম হাতে বোনা কার্পেট, বৃহত্তম ঝাড়বাতি এবং বৃহত্তম গম্বুজের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে রয়েছে এই মসজিদের নামে।

শেখ জায়েদ মসজিদের সৌন্দর্য দেখে যে কারও মুখ হা হয়ে যাবে এটি নিশ্চিত। ৮২টি সাদা মার্বেলের গম্বুজ, বাইরের ১ হাজার ৯৬টি কলাম, ভেতরের ৯৬টি মণি খচিত কলাম এবং ৭টি ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ খচিত ঝাড়বাতি আপনাকে বাধ্য করবে এর সৌন্দর্যের প্রেমে পড়তে। 

বিশ্বমানের ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার কর্মী এই মসজিদটি তৈরিতে কাজ করেছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামানুসারেই এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। তিনিই এই মসজিদ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

ছবি: সংগৃহীত

এই মসজিদ নির্মাণের স্থাপত্য বিষয়ক নির্দেশনা তারই ছিলো। তিনি তার সমাধি এই মসজিদে করার ইচ্ছা পোষণ করেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা গেলে মসজিদ চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।

দর্শনীয় এই মসজিদটির স্থপতি ইউসুফ আবদেলকি। তিনি সিরিয়ার নাগরিক। পারস্য, মোঘল এবং মরিশ স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই নকশা করেন।

ব্রিটিশ শিল্পী ও চিত্রকর কেভিন ডিন মসজিদের ভেতরের ফুলের নকশাগুলি করেছিলেন। একে তিনি জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতা হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ছবি: সংগৃহীত

মসজিদটির দর্শনার্থীদের তালিকায় রয়েছে সুপার মডেলদের নামও। গিগি হাদিদ, কেন্ডাল জেনার, শানিনা শাইক, চ্যানেল ইমান, হালিমা আদেনের মতো তারকারা এই মসজিদটি দেখার সময় পরেছিলেন সেখানকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক।

ব্রিটেনের যুবরাজ চার্লস এবং কর্নওয়াল সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৬ সালে তিন দিনের সফর করেন। তারাও দেখেতে এসেছিলেন এই মসজিদের সৌন্দর্য।  সেলেনা গোমেজ, জাস্টিন বিবার এবং দুয়া লিপার মতো খ্যাতিমান তারকারা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ভ্রমণের সময় এই স্থাপত্যশৈলী দেখে গেছেন।

মসজিদটি দেখার জন্য আপনাকে কোনো টিকিট কাটতে হবে না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য এটি খোলা থাকে। রাত ৯টার পরে আর কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারেন না। এই সময়সূচীর ব্যতিক্রম হয় শুধু শুক্রবারে। শুক্রবারে জুমার নামাজের দিকে খেয়াল রেখে এদিন দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় বিকাল সাড়ে চারটা থেকে।

ছবি: সংগৃহীত

কোনো প্রকার ফি ছাড়াই একজন গাইড আপনাকে ঘুড়িয়ে দেখাবেন এই মসজিদটি।

বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় আলোকসজ্জা। সূর্যাস্তের পর এই মসজিদটির আলোকসজ্জা আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে। দিনের বেলায় দেখার থেকে সন্ধ্যার পর দেখা মসজিদটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মনে হবে।

একটি মুসলিম স্থাপত্য এবং প্রার্থনার জায়গা হিসাবে এখানে প্রবেশের জন্য আপনাকে অবশ্যই পরিশীলিত পোশাক পরিধান করতে হবে। নারীদের পা, হাত এবং মাথা ঢেকে রেখে এবং পুরুষদের লম্বা পোশাক পরতে হয়, যা তাদের শরীরকে ঢেকে রাখে। তবে মসজিদে প্রবেশের আগে বিনামূল্যে ঐতিহ্যবাহী পোশাক (আবায়া) সরবরাহ করা হয়। এর ফলে মসজিদ-উপযুক্ত পোশাক খুঁজে নেওয়ার বিড়ম্বনা থাকে না।

প্রবেশ করার আগে অবশ্যই আপনাকে জুতা খুলে নিতে হবে। খালি পায়ে হাঁটতে না চাইলে একজোড়া মোজা হতে পারে আপনার পায়ের সঙ্গী। দিনের বেলা সেখানে ঘোরার সময় আপনার প্রয়োজন হবে সানগ্লাস। কারণ মসজিদের মেঝেতে থাকা মার্বেল পাথরে সূর্যের আলো প্রতিফলনে চোখ ধাঁদিয়ে দেবে।

ছবি: সংগৃহীত

মসজিদটি সারাদিনই ব্যস্ত থাকে। দর্শনার্থীরা সারাদিনই এখানে আসা যাওয়া করতে থাকেন। তবে এটি এতো বড় যে, কখনই আপনার মনে হবে না, এখানে ভিড় লেগে আছে।

দুপুরের তপ্ত রোদে এই মসজিদের প্রাঙ্গণে হেটে চলা বেশ কষ্টের। তাই এখানে সকালে বা বিকালে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো হয় বিকালে গেলে। কেনোনা তখন বিকালের সৌন্দর্যের সঙ্গে সঙ্গে আপনি রাতের আলোকসজ্জাও বেশ ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।

মসজিদটির সৌন্দর্য ক্যামেরায় ধরে রাখার জন্য পেশাদার থেকে অপেশাদার সকলেই ছবি তুলে বেড়ান। সবারই চেষ্টা থাকে সুন্দর এই স্মৃতি ধরে রাখতে। যাতে বাকি জীবন তা দেখে এই মসজিদের সৌন্দর্য মনে করতে পারেন।

সারাদিন ধরে অনেক দর্শনার্থী এখানে আসতে থাকেন। ফলে ছবি তুলতে গেলে শুধু মসজিদের ছবি নিতে পারা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রশিল্পী মার্ক লসকমবে হোয়েট সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন ছবি নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, “আপনি যদি খুব ভালো একটি ছবি বের করতে চান, তাহলে তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছে যান। একদম সকালে সেখানে পৌঁছতে পারলে ভিড় এড়িয়ে কিছু ছবি আপনি নিতে পারবেন।”

ছবি: সংগৃহীত

ভিড় বেড়ে গেলে মানুষ এড়িয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করার বদলে, ফ্রেমে সুন্দরভাবে তাদের ধারণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

সুন্দর ছবি তোলার জন্য ভোরে এবং সন্ধ্যায় চেষ্টা করা ভালো। সন্ধ্যার আলোকসজ্জা মসজিদটির দারুণ ছবি তুলতে সাহায্য করবে।

আবুধাবি শহরের কেন্দ্র থেকে ট্যাক্সি নিয়ে শেখ জায়েদ মসজিদে যেতে পারবেন। এটিই দ্রুত এবং সুবিধাজনক উপায়। মাত্র বিশ মিনিটে এবং ন্যায্য ভাড়ায় আপনি সেখানে পৌঁছতে পারবেন।

আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস যাই হোক না কেনো, দুবাইয়ে গেলে আপনার অবশ্যই উচিত হবে, এই মসজিদটি দেখে আসা। আবুধাবির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে অবশ্যই শেখ জায়েদ মসজিদ দেখে আসতে ভুলবেন না।

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

14m ago